প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ

Author Topic: প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ  (Read 1798 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2669
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
প্রোস্টেটাইটিসের অর্থ হলো প্রোস্টেটগ্রন্থির প্রদাহ। এটি একমাত্র পুরুষদেরই থাকে, যার কাজ হলো প্রোস্টেট রস নিঃসৃত করা। কোনো অবস্থায় যদি এ রসের উপাদানে পরিবর্তন ঘটে কিংবা এর ক্ষরণ প্রতিহত হয় তাহলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে। প্রোস্টেট নামক গ্রন্থটি থাকে পুরুষদের মূত্রাশয়ের নিচে। কাঠ বাদামের সমান আকৃতি এর। প্রোস্টেটে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। এ রোগসমূহের একটি হলো প্রোস্টেটাইটিস। সাধারণত ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

প্রোস্টেটাইটিস দুই ধরনের হতে পারেঃ এক· তাৎক্ষণিক (একিউট) ও দুই· দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক)। তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রোস্টেটাইটিস-উভয় ক্ষেত্রেই শুক্রনালি সংক্রমিত হয়। মূত্রনালীও সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পায় না।

ব্যাকটেরিয়াজনিত অ্যাকিউট প্রোস্টেটাইটিস

কী কী উপসর্গ দেখা দেয়

এক· হঠাৎ করেই রোগীর দেহে জ্বর আসে। রোগী কাঁপতে থাকে। তাপমাত্রা বেড়ে যায় অনেক।

দুই· পিঠের নিচে এবং তলপেটে ব্যথা করে।

তিন· ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

চার· প্রস্রাবে তীব্র ইচ্ছা থাকে।

পাঁচ· প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়, জ্বালাপোড়া করে।

ছয়· রোগী অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

প্রস্রাবের সময় রোগী এত ব্যথা অনুভব করে যে, ভয়ে প্রস্রাবই করতে চায় না। রোগীর কাছে তলপেট ভারী মনে হয়। মলাশয়ে খোঁচা অনুভব করে, পায়খানার সময় ব্যথা লাগে তার। পায়ুপথে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করলে প্রোস্টেটগ্রন্থির স্ফীতি এবং তার অমসৃণতা পাওয়া যায়।

রোগের কারণ

প্রোস্টেটগ্রন্থির নিঃসরণ বিপুলসংখ্যক শ্বেতকণিকা ও চর্বিসমৃদ্ধ ম্যাক্রোফেজ থাকে। নিঃসরণ কালচার করলে নির্ভরযোগ্য জীবাণু চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যেহেতু ব্যাকটেরিয়াজনিত মূত্রাশয়ের প্রদাহও উপস্থিত থাকে, তাই প্রস্রাব কালচার করে রোগের কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে। অ্যাকিউট প্রোস্টেটাইটিসের জন্য সচরাচর দায়ী ব্যাকটেরিয়াটির নাম ই কলাই। ক্লেবসিয়েলা, এন্টারোব্যাকটার, সিউডোমোনাস, সেরাশিয়া নামক প্রভৃতি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকরেটিয়াও সংক্রমণ বা ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

প্রোস্টেটগ্রন্থির বেশিরভাগ সংক্রমণ ঘটে একটিমাত্র জীবাণু দ্বারা। কখনো কখনো একাধিক জীবাণু মিলিতভাবেও সংক্রমণ ঘটায়। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত প্রোস্টেটগ্রন্থিতে প্রবেশ করে তিনটি উপায়ে-

এক· মূত্রনালীর উপরিভাগের সংক্রমণের মাধ্যমে, দুই· প্রোস্টেটনালীতে সংক্রমিত প্রস্রাবের মাধ্যমে ও তিন· মলনালীর ব্যাকটেরিয়া সচরাচর লসিকানালী বা রক্তের মাধ্যমে অনধিকার প্রবেশ করলে।

চিকিৎসা

কালচারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট জীবাণুবিরোধী ওষুধ প্রদান করা হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেরি করলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। এপিডিডাইমিস এবং অন্ডকোষে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে ওষুধটি বেশি ব্যবহ্নত হয় তাহলো ট্রাইমেথোপ্রিম ও সালফামেথোক্সাজলের মিশ্রণ। অবশ্য বর্তমানে সিফ্রোফ্লোক্সাসিন বিপুল ব্যবহ্নত হয়। রোগীকে অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য অ্যালকোহল ও যৌনকাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথা ও জ্বরনাশক ওষুধও দেয়া হয়। ইনফেকশনের জন্য যেসব রোগীর প্রস্রাব আটকে যায়, তাদের তলপেটের নিচে একটি নালী করে দেয়া হয়। মূত্রনালী পথে ক্যাথেটার প্রয়োগ মোটেই উচিত নয়।

ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিস

উপসর্গঃ দীর্ঘমেয়াদি প্রোস্টেটগ্রন্থির প্রদাহ অধিকাংশ রোগীর অসাবধানতার ফসল, যদিও অনেকের তাৎক্ষণিক প্রদাহজনিত ব্যথার ইতিহাস থাকে না। রোগ নির্ণয় দৈবাৎ ঘটে। অধিকাংশ রোগীর প্রস্রাবে তীব্র আকাঙক্ষা, ঘন ঘন প্রস্রাব, রাতের বেলা প্রস্রাব ইত্যাদি লক্ষণের অভিজ্ঞতা ঘটে। সে সঙ্গে তলপেটে ও পিঠের নিচে ব্যথা হয়। ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিসে কাঁপুনি এবং জ্বর সচরাচর দেখা যায় না। বীর্যপাতের সময় ব্যথা অনুভূত হয়। বীর্যরসে রক্তের উপস্থিতি থাকতে পারে। প্রোস্টেটগ্রন্থিতে প্রদাহের কারণে কখনো তাড়াতাড়ি বীর্যপাত, অস্বাভাবিক প্রোস্টেট রস নিঃসরণ এবং পুরুষত্বহীনতা দেখা দিতে পারে।

রোগের কারণঃ এক্ষেত্রে মূত্রনালীতে একই জীবাণু কর্তৃক পুনঃ সংক্রমণের ইতিহাস থাকে। প্রস্রাব কিংবা প্রোস্টেট রস কালচার করা জরুরী। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক চলাকালে প্রস্রাব জাবাণুমুক্ত এবং রোগের উপসর্গসমূহ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে; কিন্তু প্রস্রাব থেকে কিংবা প্রোস্টেট নিঃসরণ থেকে জীবাণু সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারে কেবল ওষুধ থেরাপি পুরোপুরি প্রয়োগ করার পর। অ্যাকিউট প্রোস্টেটাইটিসের চিকিৎসাকালে রোগীকে যে ওষুধ প্রদান করা হয়, খামখেয়ালিবশত কিংবা ইচ্ছাকৃত রোগী ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করলে অসম্পূর্ণ চিকিৎসার ফল হিসেবে ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিস বা দীর্ঘস্থায়ী প্রোস্টেটের প্রদাহ দেখা দেয়।

প্রোস্টেটগ্রন্থির নিঃসরণে বিপুল পরিমাণ শ্বেতকণিকা ও চর্বিসমৃদ্ধ ম্যাক্রোফেজ থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্লাজমাকোষ এবং ম্যাক্রোফেজের অনুপ্রবেশ ঘটে। অধিকাংশ রোগীর প্রোস্টেটগ্রন্থিতে পাথর দেখা যায়। স্বাভাবিক পুরুষদের ক্ষেত্রে এ পাথর সাধারণত ছোট থাকে। তবে তা গুচ্ছ আকারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে সাধারণত একাধিক বড় পাথর দেখা যায়। এসব পাথর সংক্রমিত হয় এবং পরে তা মূত্রপথকে সংক্রমিত করে।

চিকিৎসাঃ অল্প কিছু ওষুধ ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্রনিক প্রোস্টেটাইটিসকে সম্পূর্ণরূপে সাফল্যজনক নিয়ন্ত্রণে রাখে। ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজল চমৎকার কাজ করে। চার থেকে ১৬ সপ্তাহ চিকিৎসা চালিয়ে রোগমুক্তির হার দেখা গেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। সংক্রমিত প্রোস্টেটের পাথরের রোগীদের কেবল মেডিক্যাল থেরাপিতে কাজ হয় না, অপারেশনের প্রয়োজন হয়। যদিও জীবাণুবিরোধী ওষুধ রোগের উপশম নিয়ন্ত্রণ ও প্রস্রাব জীবাণুমুক্ত করতে পারে। কিন্তু কেবল অপারেশনের মাধ্যমে সব সংক্রমিত পাথর ও আক্রান্ত প্রোস্টেট টিস্যু অপসারণ করে রোগীকে স্থায়ীভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব।

সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা· মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বারঃ কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬, এলিফেন্ট রোড, ঢাকা।