খেলার সময় কোনো খেলোয়াড়কে মাঠে ম্যাগাজিন পড়তে দেখেছেন? কিংবা রেডিও শুনতে? ফুটবলে কিন্তু এমন বিচিত্র ঘটনাও ঘটেছে
কেউ কেউ বলেন গোলরক্ষক হওয়ার জন্য একটু খেয়ালি না হলে হয় না। মেক্সিকোর জেইমে গোমেজ অবশ্য একটু না, বেশ ভালোই খেঁয়ালি ছিলেন। মেক্সিকান ক্লাব গুয়াদালহারার এই গোলরক্ষকের এক ঘটনা তো একবার রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ১৯৫৫ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলাসের বিপক্ষে খেলা হচ্ছিল গুয়াদালহারার। একেবারেই একপেশে ম্যাচ। প্রতিপক্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলা তো দূরের কথা, গুয়াদালহারার আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়েছে অ্যাটলাস খেলোয়াড়দের। উৎকণ্ঠা নিয়ে গোলপোস্টের নিচে যখন কাটাতে হয়েছে তাদের গোলরক্ষককে, তখন উল্টো অবস্থা গোমেজের। কতক্ষণ আর গোলপোস্টের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা যায়! এক দর্শকের কাছ থেকে ম্যাগাজিন নিয়ে গোলপোস্টের নিচে বসেই পড়তে শুরু করে দিলেন। অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাঁর এই পঠনবিলাস। রেফারি সতর্ক করে দেওয়ার আগে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু ফটোগ্রাফারদের জন্য ওই সময়ই যথেষ্ট ছিল। ২০০৪ সালে মারা গেছেন গোমেজ। কিন্তু বিখ্যাত হয়ে আছে তাঁর সেই ছবি—মাঠে চলছে খেলা, গোলপোস্টের নিচে বসে ম্যাগাজিন পড়ছেন নির্ভার গোলরক্ষক।
আরেক গোলরক্ষক অ্যাঞ্জেল ডেভিড কোমিজ্জোর ঘটনাটা আরও বিচিত্র। চিরবৈরী রিভারপ্লেটের সঙ্গে খেলা ছিল কোমিজ্জোর দল বোকা জুনিয়র্সের। ম্যাচ চলার সময় হঠাৎ দেখলেন গ্যালারির কাছাকাছি পড়ে আছে ছোট্ট একটা রেডিও। তাঁর দল আবার তখন পেনাল্টি পেয়েছে। হঠাৎ কী মনে হলো, সেটি কুড়িয়ে এনে কানে হেডফোন গুঁজে রেডিও শুনতে লাগলেন। যেন অপেক্ষা করছেন রেডিওর ধারাভাষ্যের জন্য—এই বুঝি গোল হলো! গোলটা অবশ্য হয়নি, রিভারপ্লেট গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন স্পটকিক। ১০ বছর পর অবশ্য কোমিজ্জো স্বীকার করেছিলেন কী পাগলামিটাই করেছিলেন সেদিন, ‘এখন আমি যদি মাতালও থাকতাম, তবু মাঠ থেকে রেডিও কুড়িয়ে নিতাম না।’
স্প্যানিশ ‘এল লোকো’ শব্দের অর্থ পাগল। দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকজন খেলোয়াড়ের নামের সঙ্গে শব্দটা বেশ মানিয়ে যায়। যাঁদের মধ্যে আছেন প্যারাগুয়ের প্লে-মেকার গ্যাব্রিয়েল গঞ্জালেসও। যাযাবর এই খেলোয়াড় অনেক দেশেই খেলেছেন। আর্জেন্টিনার এস্তুদিয়ান্তেসে থাকার সময়ই ঘটে ঘটনাটা। কর্নার পাওয়ায় কিক নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ দর্শকসারি থেকে কে যেন তাঁর ওপর ছুড়ে মারে সিগারেট। পড়বি তো পড় একেবারে ঘাড়ের ওপরই। গঞ্জালেসও দিব্যি সেটাতে দুটো টান দিয়ে আবার ছুড়ে দিলেন দর্শকদের দিকে। প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা তো পারলে তাঁকে তখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। এই অভব্যতার জন্য অবশ্য কোনো শাস্তি পেতে হয়নি গঞ্জালেসকে।
ফুটবলারদের মধ্যে ভোজনরসিকের সংখ্যা নেহাত কম হবে না, তাই বলে এতটা! ইংল্যান্ডের মিক কুইন যতটা না তাঁর ফুটবলীয় দক্ষতার কারণে, তারচেয়ে বেশি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর বিশাল-বেঢপ বপুর জন্য। একবার ওয়েস্ট হামের সঙ্গে খেলার সময় এক দর্শক তাঁর উদ্দেশে চিৎকার করে বলেছিল, ‘সব কাবাবই খেয়ে ফেলেছিস হতচ্ছাড়া?’ একটা কাবাবও ছুড়ে মারা হয় তাঁর দিকে। কুইন ক্রিকেটটাও বোধহয় মন্দ খেলতেন না। মাটিতে পড়ার আগেই সেটি ‘ক্যাচ’ করলেন। তারপর ওই দর্শককে হতভম্ব করে তাতে কামড়ও বসিয়ে দেন।
পল গ্যাসকোয়েন। ‘গাজ্জা’ নামেই বেশি পরিচিত ইংল্যান্ডের সাবেক এই ফুটবলার ছিলেন বর্ণিল চরিত্রের আরেকজন। বহুবার বেখবরের জন্ম দেওয়া গাজ্জাও একবার মাঠে খেয়ে শোরগোল তুলেছিলেন। চকলেটের প্রতি তাঁর আসক্তির কথা জানত সবাই। একবার নিউক্যাসলের সঙ্গে খেলার সময় প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা ছুড়ে মেরেছিল চকলেট। সেটা অর্ধেক খেয়ে গাজ্জা বাকিটুকু খাওয়ার জন্য রেখে দিয়েছিলেন পকেটে! স্বভাবরসিক গাজ্জা আরেকবার দুষ্টুমি করতে গিয়ে রীতিমতো বিপাকেই পড়েছিলেন। রেঞ্জার্সের হয়ে হাইবারনিয়ানের বিপক্ষে খেলার সময় রেফারির পকেট থেকে হলুদ কার্ড পড়ে যায় মাটিতে। গাজ্জার সেটা গোচরে আসে এবং কার্ডটি তিনি হাতে নেন। তবে ফেরত দেওয়ার সময় এমন ভঙ্গি করেছিলেন যেন রেফারিকেই কার্ড দেখাচ্ছেন! রসিকতাটা বরদাশত করতে পারেননি রেফারি। গাজ্জাকে উলটো হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দেন। রেঞ্জার্সের তো বটেই, হাইবারনিয়ানের সমর্থকেরাও বেরসিক রেফারিকে দিয়েছিলেন দুয়ো!
একটু হলেও ফুটবলের খবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা নিশ্চয় ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের নাম শুনে থাকবেন। ১৯৯০ বিশ্বকাপে জার্মানি-ইংল্যান্ড ম্যাচের পর কারিশম্যাটিক এই জার্মান স্ট্রাইকারের গায়ে ইংলিশ মিডিয়া একসময় ‘ডাইভার’ তকমা সেঁটে দিয়েছিল। ঠিক চার বছর পরে সেই ইংল্যান্ডেরই ক্লাব টটেনহাম হটস্পারে যোগ দিলেন ক্লিন্সমান। প্রথম ম্যাচেই গোল করে জবাবটা দিয়েছিলেন মুখে নয়, শরীরি ভাষায়। রাজহাঁসের মতো ডাইভ দিয়ে গোল উদ্যাপন করে, যেটা পরে হয়ে গিয়েছিল তাঁর ট্রেডমার্কই।
২০০২ বিশ্বকাপে দুটো ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন আর্জেন্টাইন রেফারি অ্যাঞ্জেল সানচেজ। তবে রেফারিংয়ের কারণে নয়, তিনি আলোচনায় এসেছিলেন অদ্ভুত এক জাদুঘর বানিয়ে। ফুটবল মাঠে যত স্মারক পেয়েছিলেন, সবকিছুর ঠাঁই হয়েছিল এই জাদুঘরে। এর মধ্যে ছিল আবার তাঁর দিকে দর্শকদের ছুড়ে মারা রেডিও, মোবাইল ফোন থেকে লাইটার পর্যন্ত!