জ্বর: কারণ ও করণীয়

Author Topic: জ্বর: কারণ ও করণীয়  (Read 11627 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2000
    • View Profile
    • Daffodil International University
জ্বর: কারণ ও করণীয়
« on: November 01, 2012, 03:22:57 PM »
জী  বনে কখনও জ্বর হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেন না। ছোটদের তো বটেই, অনেক বড়দেরও বছরে অন্তত: একবার হলেও জ্বরে আক্রান্ত হতে হয়। জ্বরের মাত্রা রোগ ভেদে অল্প বা বেশি হতে পারে। কেউ কেউ অল্প কিছুদিন জ্বরে ভোগেন, কারো আবার দিনের পর দিন এমন কি মাসের পর মাস জ্বর আসে। আসলে জ্বর কোন অসুখ নয়, বরং অসুখের লক্ষণ, একটি সাধারণ উপসর্গ।

শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তাকে জ্বর বলে। বিভিন্ন কারণেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। জ্বরের প্রধান কারণ হলো জীবানুর আক্রমণ বা ইনফেকশন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ইনফেকশন হতে পারে। আর এর মূলে থাকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ইত্যাদি জীবানু। এছাড়া অনেক সময় ইনফেকশন ছাড়াও জ্বর হতে পারে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের কানেকটিভ টিস্যু ডিজিজ, লিম্ফোমা, এমনকি ক্যান্সারও। আবার আশ্চার্য মনে হলেও সত্য যে ওষুধ খাবার কারণেও জ্ব হয়। যাকে ড্রাগফিভার বলে। তাই রোগী অন্য কোন রোগে কি কি ওষুধ খায় তা দেখে নিয়ে বিশ্লেষণ করা জরুরী। ডাক্তারদের খেয়াল রাখতে হবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী কৃত্রিমভাবে থার্মোমিটারের তাপ মাত্রা বাড়িয়ে জ্বর  দেখাতে পারে। একে কৃত্রিম জ্বর বা ফাক্টিসিয়াস ফিভার বলে। এসব রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। অনেক রোগী আবার আছেন যাদের জ্বর না থাকলেও জ্বর জ্বর লাগে বলে অভিযোগ করেন ও ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যান। এদের কোন পরীক্ষায় কিছুই ধরা পরে না, থার্মোমিটারেও জ্বর পাওয়া যায় না। এদেরও মনোবিশ্লেষণ দরকার।


আরো একটা বিষয় রোগী এবং চিকিত্সকের মনে রাখতে হবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের কারণ সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। মেডিক্যাল বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে পিইউও বা পাইরেক্সিয়া অফ আননোন অরিজিন অর্থাত্ যে জ্বরের কারণ জানা যায় নাই। অনেক সময় ডাক্তারের জন্যও এ ধরণের জ্বরের রোগী অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেখা যায় অনেকদিন ধরে বিভিন্ন রকমের অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেও কোনভাবেই জ্বরের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। জ্বর হবার সাথে সাথে আমরা অনেকেই চিন্তিত হয়ে পরি। দেখা যায় একদিনের সামান্য জ্বরেই চিকিত্সকের কাছে ছুটে যান এবং নানা ধরণের পরীক্ষা-নীরিক্ষা আর এন্টিবায়োটিকের জন্য অনুরোধ করেন। আবার অনেকে আছেন যারা অনেক দিনের জ্বর নিয়েও ঘোরা ফেরা করছেন। চিকিত্সার প্রয়োজন বোধ করেন না। এর দুটোই খারাপ। দীর্গ দিনের অল্প অল্প জ্বর থাকলে বা সাধারণ চিকিঃসায় সেগুলোর কোন উন্নতি না হলে তখন তাকে অবলো না করে তার অন্তনিহিত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ডাক্তারদের উচিত হবে রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস নেয়া, জ্বর কখন আসে কখন যায়, অন্য কোন উপসর্গ আছে কিনা যেমন কাশি, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, বিকেলে জ্বর রাতে ঘাম, গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা ইত্যাদি। এ ধরণের জ্বরের কারণ হিসেবে মনে রাখা দরকার যে কোন কোন বিশেষ রোগ যেমন-যক্ষ্মা, কোলাজেন ডিজিজ, নানা রকম ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি জ্বরের কারণ হতে পারে। চিকিত্সক রোগীর উপসর্গ ও লক্ষণ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগের কারণ বের করবেন। মনে রাখতে হবে অযথা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেন না করা হয়। আবার যা প্রয়োজন তাও যেন বাদ না পড়ে।

জ্বর হলে করণীয়

এ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে কিছু কিছু ভূল ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ জ্বর হলেই রোগীর গায়ে কাঁথা, কম্বল, লেপ ইত্যাদি চাপিয়ে দেন। অনেকেই মনে করেন এতে করে রোগী ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাবে। ঠান্ডা হাওয়া আসার কারণে ঘরের দরজা-জানালও বন্ধ করে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনোটাই জ্বর কমানোর পদ্ধতি নয় অথবা জ্বর কমাতে সাহায্য করেনা। জ্বর হলে এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন যদি আবার শরীরে মোটাকাপড়, কম্বল জড়ানো হয় তবে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে। তাই গায়ে প্রচুর কাপড় পরে বা লেপ-কম্বল ব্যবহার না করে বরং পাতলা ও ঢিলাঢালা কাপড় পরাই উচিত। শরীরের কাপড়-চোপড় যতটুকু খোলা সম্ভব খুলে দিতে হবে। ঘরের জানালা বন্ধ না করে দিয়ে বরং আলো বাতাস যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যান থাকলে সেটিও মধ্যগতিতে চালিয়ে দিতে হবে। এমনকি কম মাত্রায় এয়ার কন্ডিশনার চালানো যেতে পারে। জ্বর হলে গায়ে তেল মালিশ করাও ঠিক নয়। এতে করে শরীরের লোমকুপগুলোতে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরের বাড়তি তাপ বের হতে পারেনা। জ্বর হলে আমাদের উচিত জ্বরের ধরণাটা লক্ষ করা, তা কখন আসে, কতক্ষণ থাকে, তাপমাত্রা কত পর্যন্ত উঠে, কিভাবে কমে এসব লক্ষ করা ও লিখে রাখা জরুরি। সেই সাথে ঘাম হচ্ছে কিনা, কাপুনি দেয় কিনা তাও লক্ষ করা উচিত। এতে চিকিত্সকের জন্য রোগ নির্ণয় করা সহজ হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা ঘরে বসেই আরও যা করতে পারি তা হল পানি দিয়ে শরীর মোছা বা স্পঞ্জ করা। একটি পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিতে হবে। এরপর তা দিয়ে সারা শরীর বারবার মুছে দিতে হবে। প্রয়োজনে মাথায় পানি ঢেলে দেয়া যায়। এভাবে কয়েকবার করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে। মনে রাখতে হবে, এটাই হচ্ছে এ সময়ের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। শরীরের তাপমাত্রা কমোনোর পদ্ধতি। অনেকেই শরীর স্পঞ্জ বা মুছে দেয়ার সময় ঢান্ডা পানি বা বরফ মিশ্রিত পানি ব্যবহার করেন। তা কোন ক্রমেই উচিত নয়। এমনকি এক সময় হাসপাতালে আইসব্যাগ ব্যবহার করে জ্বর কমানো হতো, তা একেবারেই অনুচিত। বরফ শীতল পানি দেয়ার কোন দরকার নেই। স্বাভাবিক পানি বা ট্যাপ ওয়াটার বলেই চলবে।

এক সময় মনে করা হত যে জ্বর হলে ভাত খাওয়া যাবে না। এই ধারনা একেবারেই ঠিক নয়। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি ভাতসহ সকল স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন। সেই সাথে প্রচুর পানি খেতে হবে যাতে প্রস্রাব পরিষ্কার থাকে। অনেক সময় প্রচুর ঘাম দিলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। এক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। অনেকের জ্বরে বমি বমি ভাব থাকে বলে ওষুধ খেতে পারেন, সেক্ষেত্রে পায়ুপথে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য ব্যথার ওষুধ না খাওয়াই উচিত। এন্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

অনেকের ধারনা জ্বর হলেই এন্টিবায়োটিক খেতে হবে। এটা ঠিক নয়। কি কারণে জ্বর হয়েছে, জ্বরের পেছনে কি ধরণের জীবানু রয়েছে তার উপরেই নির্ভর করে জ্বরের চিকিত্সা। ভাইরাস জনিত জ্বরে এন্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই, তা এমনিতেই সেরে যায়। শুধু লক্ষণ অনুযায়ী চিকিত্সা দিলেই চলে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ জনিত কারণে জ্বর হলে সে ক্ষেত্রে যথাযথ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা দরকার। এমনকি টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া বা যক্ষা হলে তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। আবার কোলাজেন ডিজিজ বা লিম্ফোমার চিকিত্সা একেবারেই অন্য রকম। তাই সকল চিকিত্সাই চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ অনুযায়ী নেয়া উচিত।

শিশুদের জ্বর হলে যে কোন বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন আরো উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। সেটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজেরাই এন্টিবায়োটিক শুরু করে দেন। তাও অনুচিত। ঘরে বসেই উপরের করণীয়গুলো নিজেরাই করবেন। আর দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের বেলায় জ্বরের সাথে খিচুনি উঠে। এক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সা নিতে হবে।

সবশেষে মনে রাখতে হবে, জ্বর হলেই আতংকিত হবার কিছু নেই। আবার দীর্ঘদিনের অল্প অল্প জ্বরকে অবহেলা করাও উচিত হবে না। নিজে নিজেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা, ঘন ঘন এন্টিবায়োটিক পরিবর্তন করা ইত্যাদি একেবারেই অনুচিত।

লেখক:
অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ
ডীন, মেডিসিন অনুষদ
অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

Source: http://new.ittefaq.com.bd/news/view/151581/2012-11-01/24

 
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun