না খেয়ে বেঁচে থাকা কোনো প্রানীর পক্ষেই সম্ভব নয়। পেটে দানাপানি না পড়লে কেমন লাগে, এক বেলা না খেয়ে থাকলে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। এর পরও এমন কিছু প্রানী আছে যারা ক্ষুধা অনেক দিন দমিয়ে রাখতে পারে। মরুর জাহাজ উটের কথাই ধরা যাক। দিগন্তবিস্তারী মরুভূমিতে চাঁদি ফাটানো রোদের মধ্যে মানুষসহ বোঝা নিয়ে ক্লান্তিহীন হেটেঁ যায় তারা। দিনের পর দিন এভাবেই কাটে। এ সময় খাবার না পেলেও ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয় না ওরা। এর কারনটি হচ্ছে উটের পিঠে পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে থাকা কুঁজ। এই কুঁজ পুরাটাই চর্বির ভান্ডার। উট যখন না খেয়ে থাকে, এই চর্বি হজম হয়ে তার টিকে থাকার ক্ষমতা জোগায়। এছাড়া উটের গলার ভিতর পানি জমিয়ে রাখার থলে রয়েছে। এ সঞ্চয় তার পানির চাহিদা মিটায়।
সাপের ও খিদে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা দারুন। অনেক সাপই একটানা এক বছর না খেয়ে থাকতে পারে। স্যামন মাছ প্রায় নয় মাস না খেয়ে থাকতে পারে। সাগর থেকে এই মাছ যখন ঝাঁক বেঁধে নদীর উজানের দিকে ছোটে, এ সময় না খেয়ে থাকে ওরা। ভালুকদের মধ্যে বাদামি গ্রিজলি ভালুক অতিকায় একটি প্রানী। দেহ যেমন খায়ও তেমন। তবে খিদে চেপে রাখতেও কম পটু নয়। শীতকালে এই ভালুক নির্জন কোনো নিরাপদ জায়গায় শীতঘুমের আয়োজন করে। এ সময় পুরোটা শীতকাল ঘুমিয়ে কাটায় ওরা। এতে একটানা সাত মাস না খেলেও কিছু হয়না ওদের। ঠিক উটের মত গায়ে জমে থাকা চর্বি খাবারের কাজ করে।
ইংরেজিতে ওদের বলে “হানিপট অ্যান্টâ€। বাংলায় ‘মধুপিঁপড়া’। শরীরের চেয়ে বড় গোলগাল একটা মধুর পোঁটলা নিয়ে ঘুরে ওরা। সঙ্গে মধু নিয়ে ঘুরলে কী হবে, উপোসে কম যায় না। একটানা ছয় মাস না খেলেও কাহিল হয় না ওরা। সামুদ্রিক প্রানীর মধ্যে বিশাল খাদক বলে কুখ্যাতি আছে তিমির। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টার্কটিকার সাগরজলে বাস করা ‘সাউদার্ন রাইট হোয়েল’ একটানা চার মাস না খেয়ে থাকতে পারে। মেরু অঞ্চলের পাখি এমপেরর পেঙ্গুইন বা রাজ পেংগুইনও না খেয়ে থাকতে পারে অনেক দিন। ডিম থেকে ছানা ফোটার পর কনকনে হিম পরিবেশে ওটাকে আগলে রাখে বাবা পেঙ্গুইন। আর মা যায় সাগরে মাছ ধরে আনতে। এ সময় মাস তিনেক একদম খেতে পারে না বাবা পেঙ্গুইন।