Intelligence is the Sword!

Author Topic: Intelligence is the Sword!  (Read 1274 times)

Offline Md. Khairul Bashar

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 203
  • Test
    • View Profile
Intelligence is the Sword!
« on: January 13, 2013, 03:38:30 PM »
১২ বছর বয়সী সিয়াম অপহূত হয়েছিল গত মাসে। অপহরণের পর মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছিল তার পরিবারের কাছে। কিন্তু সিয়াম শেষমেশ বুদ্ধি খাটিয়ে বের হয়ে আসে অপহরণকারীদের কবল থেকে!

ষষ্ঠ শ্রেণীর সেকেন্ড বয় ইমতিয়াজ আহমেদ। সবাই ডাকে সিয়াম নামে। পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজারের একটি স্কুলের ছাত্র সে। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বরের ঘটনা। সেদিন ছিল হরতাল। পরের দিন সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা। সিয়াম তো সবকিছুই পড়েছে। তাই খানিকক্ষণের ছুটি মিলেছে মায়ের কাছ থেকে। সময় বেলা আড়াইটা। বাসা-লাগোয়া হাজি মাজহারুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। শুরু হলো খেলা। খেলায় সবার সঙ্গে যোগ দিল সিয়ামের বন্ধু মুহিতের (ছদ্মনাম) ফুফাতো ভাই অনিক চৌধুরী। ২৬-২৭ বছর বয়সী এই তরুণের সঙ্গে তাদের পরিচয় মাস পাঁচেক হয়। এরই মধ্যে অনিক বেশ খাতির জমিয়েছে মালিটোলার ছোট ছেলেপুলেদের সঙ্গে। বিশেষ করে সিয়ামের সঙ্গে তার বেশ ভাব। খেলা শেষ হলো বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। ৩৬ রান করে দলকে জেতায় সিয়াম। অনিক এসে বলল, ‘সিয়াম, চলো আজকে তোমাকে আমার অ্যাকুরিয়ামের মাছ আর কবুতর দেখাব। মুহিতও যাবে আমাদের সঙ্গে।’ অ্যাকুরিয়ামের মাছ আর কবুতরের ভীষণ নেশা সিয়ামের। অনিক এটা ভালো করেই জানত। আর জানত, তার প্রস্তাবে সিয়াম রাজি হয়ে যাবে নির্দ্বিধায়। হলোও তাই। বাসায় গিয়ে কোনো রকমে গোসল সেরে, মুখে কিছু না দিয়েই বাইরে বেরিয়ে এল ছেলেটা। মা রওনক জাহান, ব্যবসায়ী বাবা এস এম সিরাজউদ্দৌলা টেরও পেলেন না কিছু।

ধলপুরের চিড়িয়া
মাঠে এসেই সিয়াম দেখে অনিক আছে, মুহিত নেই। তাই জিজ্ঞেস করল, ‘মুহিত যাবে না?’ অনিক বলল, ‘মুহিত আগেই চলে গেছে ওর মায়ের সঙ্গে। ’
রিকশায় চেপে বসল তারা। যেতে যেতে অনিক জেনে নিল সিয়ামের বাবার মুঠোফোন নম্বর। মা কী করেন, বাবা কী করেন—এমন হাজারো প্রশ্ন তার। সিয়ামও সব বলে দিল গড়গড় করে। হরতালের দিন, বেশ কয়েকটি গলি পেরিয়ে তারা পৌঁছাল কমিশনারের গলির শেষ মাথায়, একটা ছিমছাম ছয়তলা বাসায়। উঠে গেল সেই বাসার চারতলায়। বাসায় ঢুকেই সিয়াম জানতে চাইল, ‘মুহিত কোথায়?’ অনিক বলল, ‘আছে হয়তো আশপাশে। চলে আসবে এখনই। তুমি এখানে বসো, জুস খাও।’ জুস খাওয়ার পরও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল সিয়াম। অনিকের স্ত্রী ও তাদের তিন-চার মাস বয়সী সন্তান বাদে আর কাউকে খুঁজে পেল না বাসাটায়। খানিকটা সময় কেটে গেল অ্যাকুরিয়ামের বর্ণিল মাছ আর বিচিত্র সব কবুতর দেখে। কিন্তু তার পরও যে মুহিতের দেখা নেই। এদিকে বেলা যায় যায়। পরের দিনই পরীক্ষা। বাসায় দেরি করে ফিরলে তো রেহাই নেই! সিয়াম আবার গেল অনিকের কাছে, ‘ভাইয়া, মুহিত কোথায়? দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি বাসায় ফিরব।’ কথাটা বলতেই চোখের সামনে আরেক অনিককে আবিষ্কার করল সিয়াম! চোখ রাঙিয়ে ধমকে উঠল লোকটা, ‘খবরদার, আর একটা কথা বলবি না!’ বলতে বলতে টেনেহিঁচড়ে আরেকটা ঘরে নিয়ে গেল তাকে। বের করল একটা চকচকে ধারালো চাকু! গলার কাছে ধরে হুমকি দিল, ‘চিৎকার-চেঁচামেচি করলে মেরে ফেলব একেবারে।’ হতভম্ব হয়ে গেল সিয়াম। চিৎকার-চেঁচামেচির প্রশ্নই আসে না। তার ভাষায়, ‘তখন শুধু আম্মু-আব্বুর কথা মনে পড়ছিল! কিন্তু কাঁদছিলাম না আমি।’ অনিক আর তার স্ত্রী সিয়ামের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল ওড়না দিয়ে। প্রথমবার বিদ্রোহ করতেই হাত দুটো সামনে এনে বাঁধল অনিক। পা বাঁধতেও ভুলল না। মুখে শক্ত করে লাগিয়ে দিল মোটা স্কচ টেপ। তারপর রুমের বক্স খাটটার তোশক আর পাটাতন সরিয়ে সিয়ামকে শুইয়ে দিল মাঝখানে। তার ওপর আবার বিছিয়ে দিল পাটাতন ও তোশক। সিয়ামের মনে পড়ছিল সেই সময়টার কথা, ‘শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।’

সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার
খাটের মধ্যে বন্দী সিয়াম। কিছুটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ধাতস্থ হলো সে। চিন্তা করল, যে করেই হোক, বেরিয়ে যেতে হবে। তাই অনেক কষ্টে পা দিয়ে জোরসে আঘাত করল খাটে। শব্দ পেয়েই ছুটে এল অনিক। হিসহিসে গলায় হুমকি দিল, ‘শব্দ করলেই মেরে ফেলব!’ তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে রইল সিয়াম। বাইরে বেশ ঠান্ডা, কিন্তু খাটের নিচে ঘেমে-নেয়ে একাকার সে। খাটের নিচ দিয়ে কেবল একটুখানি করে বাতাস আসছিল। ‘সময়ের হিসাব তখন মাথায় ছিল না। কিছুক্ষণ পর আবার খাটে আঘাত করলাম আমি। কোনো সাড়া নেই। আবার শব্দ করলাম, আগের চেয়ে জোরে। তার পরও সাড়া নেই। এরপর একটানা কিছুক্ষণ শব্দ করে গেলাম। নিশ্চিত হলাম—বাসায় কেউ নেই!’ বলছিল সিয়াম।

ব্যস, সেই সুযোগের সঙ্গে সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এল ঘাম! ঘামের কারণে মুখের স্কচটেপ অনেকটাই খুলে গিয়েছিল। হাত বাঁধা থাকার পরও অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে টেনে বাকিটুকুও খুলে ফেলল সিয়াম। স্কচ টেপ খুলতেই দাঁত দিয়ে হাতের বাঁধন খুলতে শুরু করল সে। খুলেও গেল একসময়! এরপর পা, সেটাও মুক্ত। এরপর? সিয়ামের মুখে শুনুন বাকিটুকু, ‘হাত-পায়ের বাঁধন খুলে ফেলার পর পিঠ দিয়ে ওপরের দিকে ঠেলতে লাগলাম। ঠেলতে ঠেলতে খাটের পাটাতনটা একটুখানি সরে গেল। ওই জায়গাটা দিয়েই কষ্ট করে বেরিয়ে এলাম। ছিলে গেল হাত আর পিঠ। কিন্তু তখন আর ব্যথা নিয়ে মাথা ঘামালাম না। সোজা গিয়ে আটকে দিলাম প্রধান দরজার ছিটকিনি। কারণ, জানতাম, ভেতর থেকে বন্ধ থাকলে তারা সহজে ঢুকতে পারবে না। এরপর প্রতিটা ঘর আর বাথরুম চেক করলাম। কাউকেই পেলাম না। বাসার চারপাশ ঘুরে দেখলাম। খুঁজতে লাগলাম বেরোনোর পথ।’ কিন্তু কোনো পথই যে নেই! একটা উপায় বের করল ছোট্ট সিয়াম। রান্নাঘরে পেয়ে গেল আলু আর পেঁয়াজ। সেগুলো নিয়ে ছুড়ে দিতে লাগল জানালা দিয়ে। নিচেই বেশ কয়েকটি দোকান, পথচারীদের আনাগোনা। অনেকেই বিষয়টা লক্ষ্য করল। কিন্তু বাচ্চা-কাচ্চার দুষ্টুমি ভেবে নজর দিল না সেভাবে। সিয়ামের বাবার মুঠোফোনে ততক্ষণে ফোন করেছে অনিক, ‘ছেলেকে বাঁচাতে চাইলে ২০ লাখ টাকা নিয়ে আসুন। বেশি চালাকি করলে বা রাজি না হলে কালই আপনার ছেলের শরীরের একটা অংশ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ শুনেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল সিরাজউদ্দৌলার। উদ্বিগ্ন স্ত্রীকে কেবল বললেন, ‘ছেলে ভালো আছে। এক জায়গায় খেলতে গেছে। চিন্তা কোরো না, আমি দেখছি।’ কিন্তু মা কি আর চিন্তা না করে পারেন! কান্নায় অস্থির তিনি।

তখনো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে সিয়াম, ‘আমাকে বাঁচান! ওরা আমাকে কিডন্যাপ করেছে। আমাকে মেরে ফেলবে!’ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চিৎকার করার পরও তার কথা পৌঁছাল না কারও কানে! কী করে সিয়াম! খুঁজে একটা কলম আর কাগজ পেয়ে গেল। ছোট্ট দুটি চিরকুটে লিখল, ‘আমাকে কিডন্যাপ করেছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচান!’ নিচে ওর বাবার মুঠোফোন নম্বর। লেখা শেষ হলে চিরকুট দুটি আলুর সঙ্গে মুড়িয়ে ছুড়ে মারল রাস্তায়। একজন সেটা কুড়িয়ে নিয়ে পড়তেই পুরো ধলপুর এলাকায় তোলপাড়! ঘেরাও করা হলো বাসাটা!

মায়ের বুকে সিয়াম
রাত দুইটার দিকে বংশাল থানায় ছেলেকে ফিরে পেলেন মা রওনক জাহান। বলছিলেন সেই মুহূর্তের কথা, ‘ছেলেকে ফিরে পাওয়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই! ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম! ’ অনিক চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধলপুরের ওই বাসা থেকে। ভিড়ভাট্টা দেখার পরও বাসায় ঢুকেছিল সে। হয়তো ভাবতেও পারেনি, ছোট্ট সিয়াম এভাবে বেরিয়ে আসবে। অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলায় বিচার চলছে তার। এ ছাড়া বেরিয়ে এসেছে তার আগের কুকীর্তির খবরাখবর। সিরাজউদ্দৌলা আশা করছেন, ‘ছেলেকে ফিরে পেয়েছি, কিন্তু এই আসামি যেন আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে কারোরই। যথাযথ বিচারই আমাদের কাম্য।’

আর দীপু নাম্বার টু-ভক্ত সিয়াম কী বলে? ছোটদের জন্য ও পরামর্শ দিল, ‘মা-বাবাকে না বলে কোথাও যাওয়া যাবে না। এমনকি পরিচিত কারোর সঙ্গেও না। আর বিপদে যদি কেউ পড়েই যায়, তাহলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ’ ভাবছেন, শেখানো বুলি? একদম না!

অপহরণ থেকে বাঁচার উপায়
শিশু অপহরণ ঠেকাতে এবং অপহূত হলে কী করা উচিত? এসব বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের পুলিশের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান।
 অপহরণকারীর চোখে চোখ রাখা যাবে না। কারণ, চোখে চোখ রাখলেই অপহরণকারীরা বুঝে ফেলে অপহূত মানুষটি তাকে চিনে ফেলেছে। মোটকথা, অপহরণকারীকে চিনলেও সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না।
 অপহরণকারীরা যা বলে, সেভাবেই চলতে হবে। এটা ভিকটিম ও ভিকটিমের মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন—সবার বেলায় প্রযোজ্য।
 অপহরণকারীর মানসিকতা বুঝতে হবে। শিশুদের হয়তো এটা বুঝতে বেগ পেতে হয়। কিন্তু অভিভাবকদের বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। ভিকটিমকে নিরাপদে রাখাটাই প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব তাঁদের। আর মুক্তিপণের টাকার অঙ্ক নিয়েও কোনো বাগিবতণ্ডায় জড়ানো উচিত নয়।
 পালানোর জন্য অহেতুক চেষ্টা না করা। পালানোর আগে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে।
 অভিভাবকদের নিশ্চিত হতে হবে, সন্তানেরা কার সঙ্গে চলাফেরা করছে। কারণ, ইদানীং বন্ধুদের মধ্য থেকেই অপরাধী বেরিয়ে আসছে বেশি।
 সন্তানেরা কোথায় গেল, কতক্ষণ থাকবে, কার সঙ্গে থাকবে—এসব বিষয়ে মা-বাবাকে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে সব সময়।



Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-12/news/320609

Offline wahid

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 116
    • View Profile
Re: Intelligence is the Sword!
« Reply #1 on: January 13, 2013, 11:04:01 PM »
Great post...........thanks again...........