বিলের জল, পাড় ও কোল জুড়ে পানকৌড়ি, পাতি সরালি, শামুক ভাঙা ও অতিথি পাখি কালেমসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের ঝাঁক বেঁধে ওড়াউড়ি আর কোলাহলে মুখরিত এখন মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল।
শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে এই দৃশ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেখা যাবে এ বিলে। পুরো শীতটাই এখানে কাটিয়ে একসময় নিজ গন্তব্যে পাড়ি দেবে পাখিরা। এরা দল বেঁধে সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে আবার দল বেঁধেই চলে যায়।
এখন বিলের অভয়াশ্রম জুড়ে কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ, শ্যাওলা, পদ্ম, ঘাস, শাপলা পাখিদের অফুরন্ত খাবার রয়েছে। রয়েছে বিলের পাড় জুড়ে বনজ, ঔষধি ও প্রাকৃতিক ফলজ উদ্ভিদ।পাখিরা রোদ পোহানোর পাশাপাশি এসব গাছে বিশ্রাম নেয়।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের মাছ, পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হাইল হাওর বাংলাদেশের অন্যতম ‘গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যক্ষেত্র’ এবং একটি আন্তর্জাতিক ‘গুরুত্বপূর্ণ পাখির আবাস’। বর্ষা মৌসুমে এই হাওরের জলায়তন হয় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর এবং শুষ্ক মৌসুমে ৪ হাজার হেক্টর।
চাপড়া, মাগুরা, যাদুরিয়া বিল ও এর সংলগ্ন ডোবা এলাকা সমন্বয়ে গঠিত বাইক্কা বিল। যার আয়তন ১০০ হেক্টর। এই অভয়াশ্রম হাইল হাওরের ৯৮ প্রজাতির মাছ এবং ১৬০ প্রজাতির পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন এই অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এবং শ্রীমঙ্গল স্থানীয় সরকার কমিটি পরামর্শ দেওয়া ও তদারকি করে থাকে। এছাড়া সেন্টার ফর ন্যাচারেল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস), ইউএসএডি ও শেভরণ বিল রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে।
শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলে পাতি সরালি, ধলা বেলেহাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, মরচে রঙ, ভূতি হাঁস, দাগী ঘাসপাখিসহ ৫০ প্রজাতির পাখি আসে। বাইক্কা বিলে পাখি ও মাছের জন্য একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মিত পাখির বাসায় ১০টি বালিহাঁসের বাচ্চা ফুটেছে।
বিলের মাঝামাঝি অংশে রয়েছে দর্শনার্থী টাওয়ার। তিনতলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারে ওঠে পাখি দেখাসহ ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং করার সুব্যবস্থা রয়েছে।
সেন্টার ফর ন্যাচারেল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) এর প্রকল্প সমন্বয়কারী তাপস কুমার রায় বাংলানিউজকে জানান, ইউএসএডি ও শেভরণের অর্থায়নে বাইক্কা বিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আশেপাশের গ্রামগুলোতে সচেতনতামূলক উঠোন বৈঠক করা হচ্ছে। এছাড়া বাইক্কা বিলের প্রবেশ পথে ইউএসএডির অর্থায়নে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ইনফরমেশন সেন্টার কাম ভিজিটর সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যেই কাজ সমাপ্ত হবে।
এছাড়া হিজল, করচসহ জলজ উদ্ভিদ লাগানো হচ্ছে পাখি অভয়াশ্রমে বিরতি নিতে পারে। একটি অবজারভেশন টাওয়ার, পুরুষ ও নারী টয়লেট, দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ স্থাপন, ২টি ভিজিটর বোর্ডসহ পাখির অভয়াশ্রমের জন্য পাখির বাসা তৈরি করা হচ্ছে। এসবই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরে আছে বাইক্কা বিলের চারদিক। যারা অতিথি পাখি দেখতে যেতে চান, পরিবার আর বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন লাখো পাখির কলতানে মুখরিত বাইক্কা বিলে।