এমআইটিতে ১০ মে খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান এসে হাজির। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিশ্বখ্যাত এই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কে ছাড়তে চায়! আমিও ঠিক সময়ে পৌঁছে যাই ওই অনুষ্ঠানে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) ক্রেসগি মিলনায়তনে এমআইটির শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হন তিনি।
মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে সালমানের খানের লেখা বই দ্য ওয়ান ওয়ার্ল্ড স্কুলহাউস বিক্রি হচ্ছিল এবং সালমান সেসব বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরির পেছনের কারণ হিসেবে সালমান বলেন, আমি যখন যে বিষয়ে মজা পাই, সেই বিষয়েই টিউটোরিয়াল তৈরি করি। আমি না মজা পেলে অন্যদের বোঝাব কেমন করে?
সালমান মনে করেন, শ্রেণীকক্ষ হতে হবে কোনো সমস্যার সমাধান, আলোচনা করে শেখার স্থান। তিনি বলেন, ‘বড় বড় লেকচার হলের সামনে একজন শিক্ষক নানা রকম তত্ত্ব আউড়ে যান এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থী ৩০০ জনের মাঝখানে একা বসে সেটা শেখার চেষ্টা করে। আমরা বেশির ভাগই মনে করি, ক্লাসরুম শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে কাছে আনে এবং একসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণে সাহায্য করে। কিন্তু বাস্তবে এটা তেমন একটা কার্যকর উপায় নয়।’ ক্লাসরুমের পড়াশোনার ধারণা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে খান একাডেমি। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে আলাপ করে কঠিন তত্ত্বগুলো বোঝা এবং সেই তত্ত্বগুলোই কাজে লাগিয়ে কিছু তৈরি করার জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে শ্রেণীকক্ষগুলো। বেশ কিছু বছর ধরে এমআইটিতে একটি অভিনব নকশায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এর নাম টেকনোলজি অ্যানাবেলড অ্যাকটিভ লার্নিং। সালমানের খানের কল্পিত শ্রেণীকক্ষের সঙ্গে এর অনেকখানি মিল রয়েছে।
সালমান তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট সময়ের রঙিন দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি এমআইটির ১৯৯৮ সালের প্রাক্তনী। এমআইটির ক্লাসে, পড়াশোনার বাইরে ক্যাম্পাসে নানা রকম শেখার সুযোগের কথা বলেন। সালমান ক্লাসে পড়ার সময় লিডারশিপ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি জানান, এ ধরনের কার্যক্রম নেতৃত্বের বিকাশে সহায়ক। শীতকালীন ছুটির সময় এমআইটির বিশেষ কার্যক্রম ‘ইনডিপেনডেন্ট অ্যাক্টিভিটি পিরিয়ডে’ তিনি অনেক শখের জিনিস শিখেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
গম্ভীর গম্ভীর সব প্রশ্নের ভিড়ে রসিকতায়ও সালমান কম যান না। খান একাডেমি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থাকবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলে নিশ্চয় আজ আমি আরেকটু ভালো পোশাক পরতে পারতাম!’
মূল অনুষ্ঠান শেষে সালমান খান অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক আড্ডায় অংশ নেন, যেখানে সালমান খানের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁকে বাংলাদেশে খান একাডেমির কিছু টিউটোরিয়াল বাংলায় অনুবাদ করার সময়কার কথা জানাই। এরপর অনানুষ্ঠানিক প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ভাষান্তরিত টিউটোরিয়ালে যেন মূল আমেজ বজায় থাকে সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়।
আর যা না বললেই নয়, সালমানের খানের বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতায় পুরো অনুষ্ঠানই মুখরিত ছিল। সালমান খান ভবিষ্যতে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁর তৈরি ভিডিওগুলো পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
Original Source: Prothom-Alo