ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর দূরপ্রান্তের কমপিউটারের মাঝে সংযোগ স্থাপন করার সমস্যা তো দূর হলো, কিন্তু তা কতটুকু কাজের ছিল? আইবিএমের পিসি, অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ ও সে সময়ের অন্যান্য মাইμোকমপিউটার বাজারে আসার পর কমপিউটার ব্যক্তি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। সাধারণ ব্যবহারকারীর হাতের নাগালে কমপিউটার থাকলেও
কমপিউটার নেটওয়ার্কের দখল ছিল সরকারি দফতর, সামরিক বিভাগ ও গবেষকদের হাতে। এই সমস্যার কথা অনেকে ভাবে লও ইউরোপীয় গবেষণা সংস্থা সার্নের তৎকালীন
সফটওয়্যার প্রকৌশলী টিম বারনার্স লি’র মাথায় হয়তো বেশি করে কাজ করেছিল। পৃথিবীব্যাপী লাখ লাখ ক ম ি প উ ট া র ব্যবহারকারীকে এক সুতায় বেঁধে নতুন
সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করতে চেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সালে তিনি তার পরিকল্পনা লিখিত আকারে জমা দিয়েছিলেন সার্নে। যেখানে কিছু প্রযুক্তির কথা উল্লেখ ছিল, যা ইন্টারনেটকে সব ব্যবহারকারীর কাছে ব্যবহারযোগ্য করে তুলবে। কিন্তু সার্নে তার প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও সহযোগী রবার্ট ক্যালিও’র সহযোগিতায় পরের বছরের অক্টোবরে তিনি সেই প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। এবার তিনি তিনটি মৌলিক প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করেন। প্রথমটি ছিল হাইপার টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ বা এইচটিএমএল, যা ওয়েব পেজকে উপস্থাপন করবে। দ্বিতীয়টি ছিল ইউনিফর্ম রিসোর্স আইডেন্টিফায়ার বা ইউআরআই, যা অনেকটা ঠিকানার মতো যে ঠিকানার মাধ্যমে ওয়েবসাইটটি খুঁজে পাওয়া যাবে। শেষটি ছিল হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল বা এইচটিটিপি, যা ইউআরআইর মাধ্যমে ওয়েবসাইটটি প্রদর্শন করতে সাহায্য
করবে। এটা নিশ্চয় আপনাদের বলে দিতে হবে না যে আজও তার সেই প্রযুক্তিতেই ইন্টারনেট চালিত হচ্ছে। টিম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে বিশ্বের প্রথম ওয়েব ব্রাউজার তৈরি করেন, যা দিয়ে একই সাথে ওয়েব পেজ সম্পাদনার কাজও করা যেত। তিনি এইচটিটিপিডি নামে একটি ওয়েব সার্ভারও তৈরি করেন। ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে সার্নের পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে রয়্যালটি ফ্রি ঘোষণার পর যে বিপ্লব ঘটে গেছে, তা আপনাদের চোখের সামনেই। ইন্টারনেটকে জনসাধারণের কাজে লাগানোর প্রবাদ পুরুষ এই ব্রিটিশ কমপিউটার বিজ্ঞানী বর্তমানে ডব্লিউ থ্রি কনসোর্টিয়ামের ডিরেক্টরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মান অক্ষুণড়ব রাখতে এবং নিয়মিত উনড়বয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ১৯৯৪ সালে ডব্লিউ থ্রি কনসোর্টিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়।