বাজারে যে লিচু বিক্রি করা হয়, তাতে মেশানো হয় বিষাক্ত রাসায়নিক। এ লিচু মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেছেন, বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো লিচু আর বিষ খাওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ লিচু খেলে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারে জটিল ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে।
রাজধানীর বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী ও কাওরান বাজারের ১০টি ফলের আড়তে গিয়ে ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের সঙ্গে ক্রেতা সেজে আলাপকালে তারা জানান, লিচু কিংবা ফলে ফরমালিন না মেশালে বেশিদিন রাখা যায় না। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, ফরমালিন মেশানো ড্রামে লিচু একবার চোবালেই আর পচন ধরবে না। লিচু থাকবে তরতাজা ও টাককা। ক্রেতারা মনে করবে এই মাত্র গাছ থেকে লিচু পেড়ে আনা হয়েছে। তারা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারবে না, এ লিচু এক সপ্তাহ কিংবা এক মাস আগে গাছ থেকে পাড়া হয়েছে।
লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ দিনাজপুর, পাবনা, ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী এলাকার বাগান মালিক এবং চাষীরা জানান, ঢাকার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লিচু মওসুমের এক বছর আগেই বাগান কিনে ফেলে। আবার গাছে লিচু ধরার পর আরেক দল ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারা লিচু বাগান কিনেন। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মুকুল আসার পর থেকে ফল পাড়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় বিষ ইতোফোন গ্রুপের বাইজার, হারবেস্ট, প্রমাড ও ক্রমপমেক্স, ম্যালথান গ্রুপের কীটনাশক কট, টিভো, ফাইটার, ম্যানকোজের গ্রুপের ভায়াথেন অথবা কার্বন্ডাজিন গ্রুপের নইন পাউডার, এনটাকল, ব্যাপিস্টিন, ফ্লোরা, টিডো প্রিমিয়ার ও ইন্টারফলসহ ১৬ প্রকার কীটনাশক মেশায়। সর্বশেষ সেই লিচু পচন রোধে ও টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হয়।
ফার্মাসিউটিক্যালস সোসাইটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবম ফারুক, বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন ও মহাখালী ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, লিচু ও অন্যান্য ফল খাওয়ার কারণে দেশে মরণব্যাধি আশংকাজনক হারে বাড়ছে। বিষ মেশানো লিচু খাওয়া থেকে মানুষকে বিরত থাকার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন। বিষাক্ত ফল কেনা বন্ধ করলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের টনক নড়বে বলে তারা জানিয়েছেন।