পবিত্র আল কুরআনে সূরা বাকারার ২৪৫ নাম্বার আয়াতে আছে "এমন কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে সম্মত? তাহলে আল্লাহ তাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবেন। আর আল্লাহকে ঋণ দিয়ে অভাবে পড়ে যাবে এ ভয় করো না কেননা অভাব ও স্বচ্ছলতা আল্লাহরই দান"। আরও আছে "যদি তোমরা আল্লাহকে ঋণ দাও তাহলে তিনি তোমাদের জন্য সম্পদ বাড়াতেই থাকবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন, আর আল্লাহ তো বড় দানকারী (ইখলাছের সংগে হলে সামান্য দানও তিনি খুশী হয়ে গ্রহণ করবেন)।
তিনি অতি সহনশীল। তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সমস্ত বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত, মহাপরাক্রমশালী, অসীম প্রজ্ঞার অধিকারী (সূরা তাগাবুন-১৭)। একবার দু'বার নয় আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে তাকে ঋণ দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কুরআনে এসব আয়াত আমরা প্রতিনিয়ত তেলাওয়াত করি কিন্তু এর অর্থ বুঝি না। কুরআন শরীফের কোন্ আয়াতে কি বলা হচ্ছে কি আদেশ করা হচ্ছে তা অর্থসহ পড়লে তারপর বুঝতে পারা যায়। অর্থ বুঝে পড়লে কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াবও পাওয়া যায় আবার আল্লাহ আমাদের কি আদেশ-নিষেধ করছেন সে সম্পর্কে জানা যায় এবং আমল করা যায়।
আল্লাহ আমাদের প্রতি অনেকভাবে দয়া করেছেন। আল্লাহ বলেছেন তোমরা আমাকে ঋণ দাও আমি তোমাদের তা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেব। আল্লাহ অভাবমুক্ত, আল্লাহর কোন কিছুর অভাব নেই, তারপরও আল্লাহ বান্দার সুযোগের জন্য তাদের কাছে ঋণ চাইছেন। সৃষ্টি জগতের এবং মানুষের যত রকম চাহিদা রয়েছে এবং সব প্রয়োজন তা তো তিনিই পূর্ণ করেন। তাহলে আল্লাহকে ঋণ দেয়ার অর্থ কি? আল্লাহকে ঋণ দেয়ার অর্থ আল্লাহর দ্বীনের কাজে অর্থ ব্যয় করা উত্তম শিক্ষার জন্য ব্যয় করা, সংগ্রামের জন্য ব্যয় করা, গরীবকে দান করা, অসহায়কে আর্থিক সাহায্য করা।
কুরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন 'নি:সন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান এবং মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করছেন (সূরা তাওবা ১১২)। মানুষের অর্থ সম্পদ সবই আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে চান তাকে অনেক রিযিক বা অর্থ দান করেন। আল্লাহ তার দেয়া জিনিষ ক্রেতা হয়ে তা আবার মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যয় করছেন। মানুষ তার ক্রয় করা জিনিষ নিজের কাছে নিয়ে নেয়, কিন্তু দেখুন আল্লাহ তার ক্রয় করা জিনিষ বান্দাকে ভোগ করতে বা ব্যবহার কতে দিচ্ছেন। আল্লাহ বলছেন আমি কিনে নিলাম তবে তোমার জান মাল তোমার কাছেই থাক তুমিই তা ব্যবহার করো এবং ভোগ করো তবে আমার হুকুম মতো করো, কিছু কিছু জানমাল আমার খুশির জন্য আমার রাস্তায় খরচ করো।
আল্লাহ কত দয়াবান কত মেহেরবান আল্লাহ আমাদের কত সুযোগ দিচ্ছেন আল্লাহর দেয়া জান মাল আমরা নির্ধিদ্বায় ব্যবহার করবো শুধু আল্লাহর খুশির জন্য, নিজেদের কল্যাণের জন্য, অনন্তকালের বেহেশত সবার জন্য, আমরা আমাদের সম্পদ থেকে কিয়দাংশ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবো। মাল খরচ করাতো বুঝা গেল কিন্তু জান খরচ করার অর্থ কি? জান খরচ করার অর্থ হলো ইলমের পেছনে, আমলের পেছনে এবং দাওয়াতের পেছনে সময় ব্যয় করা।
তাই উচিত্ হলো আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম স্থান বেহেশত ক্রয় করে নেয়া। যার যার সামর্থ অনুযায়ী আমরা সারাজীবন আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকব। হোক তা সামান্য একটা রুটি, একটা খেজুর বা দুই-পাঁচ টাকা যার কাছে যা থাকে তা দিয়ে গরীবকে সাহায্য করবো। আখেরাতে যখন নিজের চোখে দেখবেন যে, আল্লাহ আপনার এই দুই টাকা বাড়িয়ে অনেক গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং সারা বছরের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দান বেড়ে বেড়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে যার বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন তখন আনন্দের আর সীমা থাকবে না। আর বলবেন দুনিয়াতে যদি আরও বেশি আল্লাহকে ঋণ দিতাম তবে আল্লাহ আমাদের আরও বেশি নেয়ামত দান করতেন।
রসূল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে হালাল রুযি হইতে একটি খেজুর পরিমান আল্লাহর রাস্তায় খরচ করলেন আল্লাহ তার ঐ দান নিজে হাতে নিয়ে যত্ন সহকারে বর্ধিত করে থাকেন, এমনকি উহা একটি পাহাড়ের সমানও হতে পারে তবে জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা পাক পবিত্র ও হালাল জিনিষ ব্যতিরেকে অন্য জিনিষ কবুল করেন না (মুসলিম)। আল্লাহতায়ালা বলেন, বেহেশত সাজিয়ে রাখা হইয়াছে, তাদের জন্য যারা আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখে এবং সুখে দু:খে সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর রাস্তায় দান বা খরচ করে (সূরা ইমরান-৩৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, মুসলমানগণ অল্প বা অধিক যা কিছু দান করেন বা আল্লাহর রাস্তায় যতটুকু ময়দান অতিক্রম করে সবই আল্লাহ তায়ালা পুরস্কার দেয়ার জন্য লিখে রাখেন (সূরা তওবা-১২১) আল্লাহর কুরআন শরীফে আরও অনেক আয়াত আছে তার রাস্তায় দান করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে।
এসব আমরা তেলাওয়াত করি এবং অর্থসহ বুঝে পড়ে সে অনযায়ী আল্লাহকে উত্তম কর্য বা ঋণ দিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে পরম সুখের স্থান অনন্তকালের জন্য জান্নাত কিনে নেব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার রাস্তায় খরচ করার তাওফীক দিন, আমীন।