বাল্টিক সাগর পাড়ে ইসলামের পতাকা

Author Topic: বাল্টিক সাগর পাড়ে ইসলামের পতাকা  (Read 2161 times)

Offline yousuf miah

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 173
    • View Profile
 বাল্টিক সাগর পাড়ে ছোট বড় অসংখ্যা লেক আর প্রকৃতি ঘেরা নয়াভিরাম সৌন্দর্য্যের দেশ সুইডেন। সুইডেন হলো পশ্চিম ইউরোপের স্ক্যানডেনেভিয়ান অঞ্চলের একটি দেশ।আয়তনের দিক থেকে এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম একটি দেশ। এর মোট জনসংখ্যা হলো ৯.৫ মিলিয়ন। মাথাপিছু আয়ের দিকে দিয়ে এটি বিশ্বের অষ্টম এবং মানব উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের তৃতীয়।
 
 
গ্রীষ্মকালে এখানকার সৌন্দর্য্য চোখে পড়ার মত। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে মানুষগুলো অনেক শান্ত, ভদ্র।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সাথে সুইডেনের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেক দিনের। ১৭ ও ১৮ শতকে অটোমান শাসকদের সাথে সুইডেনের সম্পর্ক ছিলো উল্লেখ করার মতো। অটোমান রাজ্য ছিলো ইউরোপের মধ্যে অনেক শক্তিশালী। সুইডিস রাজারা তাদের আনুকুল্য লাভের জন্য সেই সময়ে তুর্কিতে তাদের রাষ্ট্রদুত নিয়োগ করে। তখন থেকে মুসলিম সংষ্কৃতির সাথে সুইডেনের পরিচয় ঘটতে থাকে। তবে সুইডেনে মুসলিমদের উপস্থিতি সাম্প্রতিক ঘটনা।
 
 
সুইডেনে সর্বপ্রথম ১৯৩০ সালে ১৫ জন ব্যক্তি নিজেদের মুসলিম বলে চিহ্নিত করে। তারাই প্রথম মুসলিম যারা প্রাথমিক ভাবে বাল্টিক তাঁতারদের মধ্য থেকে এসেছিলো। বর্তমানে সুইডেনে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ। সুইডিশ কমিশন ফর স্টেইট গ্রান্ট টু রেলিজিয়াস কম্যুনিটিস এর জরিপ অনুযায়ী প্রাকটিসিং মুসলিমের সংখ্যা হলো মধ্যে ১১০০০ জন । তাদের জরিপ অনুযায়ী  ইসলাম অনুসারীদের  প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হবে। তাদের গণনা অনুযায়ী এর সংখ্যা ১৫০০০০ জন এর কাছাকাছি। সান্ডার স্বীকার করেন যে, মুসলিম শব্দটি সুইডেন এর ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়িত করা সমস্যা। তিনি চারটি ক্যাটেগরিতে মুসলিমদের সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেন  এথনিক-,সংষ্কৃতিক-,ধর্মীয়, এবং রাজনৈতিক মুসলিম। একজন এথনিক মুসলিম বলতে যেকোন মুসলিম কে বুঝায়, যারা এমন স্থানে জন্মগ্রহন করেছে যেখানকার পরিবেশ মুসলিম সংষ্কৃতির প্রথার আধিপত্য রয়েছে এবং যারা এমন নাম বহন করে যেটি সেই প্রথার সাথে যুক্ত; এছাড়া এই শ্রেনীর অংশ তারা, যারা নিজেদের এই পরিবেশের অংশ মনে করে বা যারা চিহ্নিত হয়। এই সংজ্ঞাটি সংষ্কৃতিক যোগ্যতা, ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী সক্রিয় অংশগ্রহন, এবং ব্যক্তির ইসলামের প্রতি মনোভাব বা চিন্তা হতে মুক্ত। এভাবে তিনি বিভিন্নভাবে মুসলিমদের সংজ্ঞায়িত করেন।
 
 
পশ্চিম ইউরোপ এর মধ্যে সুইডেন হলো একটি মিশ্রিত মুসলিম জনগোষ্ঠির দেশ। ৪০ টির ও বেশি দেশ থেকে মুসলিমরা সুইডেন এ এসেছে। প্রথম গ্রুপটি আসে ১৯৬০ সালে তুর্কি থেকে গেষ্ট শ্রমিক হিসেবে, সম্ভবত সুইডেনে থাকার তাদের কোন ইচ্ছে ছিলোনা। কিন্তু তাদের অনেকেই থেকে যায় এবং তাদের পরিবার আসা শুরু করে ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালের দিকে। সংষ্কৃতি এবং ধর্মকে ধরে রাখা এবং সংরক্ষনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব শুরু হতে থাকে। ফলে আস্তে আস্তে কিছু মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
 
 
১৯৮০ সালে দিকে মুসলিম রিফিউজির সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তখন থেকে তুর্কি মুসলিমরা আর সংখ্যা গরিষ্ঠ থাকেনা। সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী গ্রুপ আসে ইরাক, ইরান, সোমালিয়া, বলকান এবং পাকিস্তান থেকে। এছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার থেকে অনেক মুসলিম আসা শুরু করে ৭০ এর দশকের পর থেকে।
 
 
মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বর্তমানে ইসলাম দ্বিতীয় অফিসিয়াল ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। অধিকাংশ সূউডিশ মুসলিমরা তিনটি বড় শহরে বসবাস করে -স্টকহোল্ম, মালমো, এবং গোথেনবার্গ এ। তাদের বেশির ভাগ ই আবার বাস করে শহরতলিতে যেমন স্টকহোল্মের রিংকেবি, টেনেস্তা এবং খারহোলমেন, গোথেনবার্গের হাম্মারকুল্লেন এবং ইয়ালবো, এবং মালমোর রোজেনগর্ড।
 
 
ইসলামী সংগঠন
সুইডেনের প্রথম ইসলমাই সংগঠন হলো FIFS (Förenade Islamiska Församlingar i Sverige) যেটি ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে যাত্রা শুরু করে। এরপর সংগঠনটি ১৯৮২ ও ১৯৮৮ সালে অন্তর্দ্বন্দ্ব, সংষ্কৃতিক বিভিন্নতা, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও ফান্ডের সমস্যার কারনে দুভাগে বিভক্ত হয়ে SMF (Svenska Muslimska Förbundet) and ICUS, today IKUS (Islamska Kulturcenterunionen i Sverige) নামে দুটি সংগঠন তৈরী করে। এছাড়া আর জাতিয় সংগঠন গুলো হচ্ছে BHIRF (Bosnien-Hercegovinas Islamiska riksförbund), যা বসনিয়ান রিফিউজিদের দ্বারা 1995 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, IRFS (Islamiska Riksförbundet), প্রতিষ্ঠিত হয় 1995 সালে, এবং রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ নুত বার্নস্ট্রম ২০০০ সালে একটি ভবিষ্যত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য SIA (Svenska Islamiska Akademin) গঠন করে, SIA February 2001 থেকে মিনারেত নামে একটি পিরিওডিকাল প্রকাশ করে আসছে।
 
 
এছাড়া আরো কিছু অন্যান্য স্থানীয় ছোট ছোট সংগঠন রয়েছে যেগুলো মূলত কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে SMUF, বর্তমানে SUM (Sveriges Unga Muslimer) নামে পরিচিত। এটি মূলত মুসলিম যুবকদের নিয়ে গড়ে উঠা সবচেয়ে বড় সংগঠন যা ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মহিলাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন IKF (Islamiska Kvinnoförbund i Sverige), এছাড়া যবকদের IUF (Islamiska Ungdomförbundet i Sverige) এবং ঈমামদের SIR (Sveriges Imamråd)। সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেনে ইসলামিক ফোরাম অফ ইউরোপ এর শাখা চালু করা হয়, ফলে বাঙ্গালীদের দ্বারা গঠিত একমাত্র ইসলামি সংগঠন সুইডেনে কাজ শুরু করে। ধীরে ধীরে এর পরিসর বাড়ছে।
 
 
সরকারিভাবে ধর্মান্তরিত মুসলিমদের কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, তবে মালমো কলেজের ইতিহাসবিদ আন সোফি রোয়াল্ড এর মতে ১৯৬০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৫০০ জন খ্রীষ্টান মুসলিমে ধর্মান্তরিত হয়েছে। সাম্প্রতিক মসয়ে মুসলিম অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ার ফলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করার হার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। তবে অপরদিকে কিছু মুসলিম ও অন্যধর্ম বিশেষ করে খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়। অভিবাসী মুসলিমদের মধ্যে ইরানী মুসলিমদের অবস্থা খুবই খারাপ। সুইডিস ইরানীদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন নিজেকে মুসলিম বলে অস্বীকার করে। সুইডিশ ধর্মান্তরিত মুসলিমদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রখ্যাত পেইন্টার ইভান আগুয়েলি যিনি তার মুসলিম নামে (আব্দুল হাদি আল মাগরিবি) বেশি পরিচিত, এছাড়া মুহাম্মদ নুত বার্নস্ট্রম যিনি ১৯৮৮ সালে সুইডিস ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেন।
শেষে একটি কথায় বলা যায় যে, সুইডেনে মুসলিম ও ইসলামের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল।
 
 
মসজিদ
সুইডেনে ছোটবড় প্রায় ২৫০ অনেক মসজিদ আছে। তবে বেশির ভাগ মসজিদই বিল্ডিংয়ের বেইসমেন্টে এক বা দুটি রুম নিয়ে গঠিত। নির্মিত মসজিদ হলো মোট ৭ টি। এর মধ্যে পাচটি সুন্নি মসজিদ স্টকহোল্ম, উপশালা, মালমো ও ভাসতারাসে, একটি শিয়া মসজিদ ট্রলহাত্তানে এবং একটি আহমদিয়া মসজিদ গোথেনবার্গে অবস্থিত। সুন্নি বড় মসজিদ গুলো হলো, মালমো মসজিদ (১৯৮৪), স্টকহোল্ম মসজিদ (২০০০), উপশালা