এ টু জেড অব অটিজম

Author Topic: এ টু জেড অব অটিজম  (Read 1808 times)

Offline shilpi1

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 135
    • View Profile
এ টু জেড অব অটিজম
« on: June 13, 2013, 03:27:21 PM »
অটিজম সারা পৃথিবীর মতো আমাদের দেশেও বহুল আলোচিত একটি শব্দ। তবে আমাদের অনেকেরই এই শব্দটি জানা থাকলেও প্রকৃত ভাবে এই শব্দটি কেন বহুল আলোচিত সে সম্পর্কে ধারণা নেই। আজ আমরা অটিজমের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে বিষয়গুলো সবার জানা দরকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অটিজম একটি মানসিক বিকাশগত সমস্যা যা সাধারণত জন্মের পর প্রথম তিন বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। এই সমস্যার জন্য  সামাজিক বিকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ যেমন কথা বলা, ভাব বিনিময় করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাঁধাপ্রাপ্ত  হয়।

অটিজমের কারণ

অটিজম মস্তিস্কের অস্বাভাবিক বায়োলজি ও কেমিস্ট্রির ফলে সৃষ্ট একটি সমস্যা। এখন পর্যন্ত এই সমস্যার কোন সরাসরি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সারা পৃথিবীতেই এই সমস্যার কারণ জানার জন্য গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। তবে মোটামুটি ভাবে কিছু বিষয়ের সমন্বয়ে অটিজম ঘটে থাকে বলে বিজ্ঞানিরা ধারণা করে থাকেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জেনেটিক ফ্যাক্টর। অনেক সময়ই দেখা গেছে অটিজম ইতিহাস যে পরিবারের আছে সেই পরিবারের আরও অনেকরই কথা বলতে সমস্যা, অন্যান্য জেনেটিক্যাল সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়াও আরও কিছু বিষয়কে সন্দেহ করা হয় অটিজমের জন্য, এগুলো হচ্ছে গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাস, বাচ্চার অন্ত্রের পরিবর্তনগত সমস্যা, মার্কারির(পারদ) বিষক্রিয়া, বাচ্চার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পরিপাক করতে না পারা, টীকার প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।

টীকা দান ও অটিজম

উন্নত বিশ্বে অনেক বাবা মাই আশংকা প্রকাশ করেন যে বাচ্চাদের যে টীকা দেওয়া হয় তা নিরাপদ নয়। অনেক সময়ই তারা তাদের ডাক্তার বা স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে তাদের এই আশংকা ব্যক্ত করেন, এমনকি তারা বাচ্চাকে টীকা দিতে অস্বীকৃতিও জানান। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, মাল্টি ডোজ টীকার মধ্যে প্রিজারভেটিভ হিসেবে যে সামান্য পরিমাণ মার্কারি (থাইমেরোজাল) ব্যবহার করা হয়, তার থেকে অটিজম হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এই বিশ্বাসের পেছনে কোনো গবেষণার ফলাফলে পূর্ণ সমর্থন পাওয়া যায়নি। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিআট্রিক্স এবং ইনিস্টিটিউট অব মেডিসিন এর মতে টীকা সমূহ সামগ্রিকভাবে যে উপকার সাধন করে, তার তুলনায় এ ধরণের ঝুঁকি নিতান্তই তুচ্ছ। এখন অবশ্য সকল মাল্টি ডোজ টীকারই একক ডোজ বাজারে পাওয়া যায় যাতে কোন মার্কারি মেশানোর প্রয়োজন হয় না।

কত সংখ্যক বাচ্চা অটিজমে আক্রান্ত

আমাদের দেশে এধরনের কোনো সার্ভে বা গবেষণা নেই। তবে এখন আমাদের আশেপাশে অনেক বাচ্চাই আমরা দেখতে পাই যাদের অটিজম রয়েছে। তবে এই বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও হয়তবা এই সমস্যা বেশি চোখে পড়ার পেছনে ভুমিকা রেখেছে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও হয়ত এধরনের সমস্যার বাচ্চাদের হাবাগোবা বা এমন কিছু একটা বলা হত। অনেককে পড়াশোনায় চরম অমনোযোগী আখ্যা দিয়ে লেখা পড়ার পাঠ চুকিয়ে কাজে পাঠিয়ে দেয়া হত। কিন্তু এখন তাদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ায় তাদের এই হতভাগ্য জীবন থেকে মুক্তি দেবার একটি প্রচেষ্টা সরাকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের সমাজে চালু হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন।

অটিজমের লক্ষণ সমূহ

সাধারণত ১৮ মাস থেকে ২ বছর বয়স এর মধ্যে মা বাবা বাচ্চার আচরণে অস্বাভাবিকতা বা সাধারণের চেয়ে ভিন্ন বলে ধরতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে অন্য একই বয়সের বাচ্চাদের চেয়ে খেলার আগ্রহে ভিন্নতা, সামাজিক মেলামেশা যেমন কথা বলা বা আকার ইংগিতের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করার ভিন্নতা ইত্যাদি। কিছু কিছু বাচ্চা আবার ১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত খেলাধুলা কথাবার্তা সব ঠিক থাকে কিন্তু হটাৎ করে কথা ও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এটাকে বলা হয় রিগ্রেসিভ অটিজম।

অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চাদের কেউ কেউ বেশিরভাগ সময় শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি তে বেশি সংবেদনশীল থাকে। অটিস্টিক বাচ্চারা তাদের রুটিন মাফিক কাজ না হলে রেগে যায়। তাদের বিভিন্ন জিনিসের প্রতি অতি দুর্বলতা দেখা যায়। অনেক সময় তারা একই শারীরিক ভঙ্গি বা অঙ্গ সঞ্চালন বার বার করতে থাকে।

ভাব বিনিময় বা যোগাযোগের সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে কাউকে দেখলে কথা বলতে সমস্যা। অনেক সময় তারা কথা বলার পরিবর্তে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে চায়। অনেকেই অনেক দেরি করে কথা বলে আবার অনেকে একেবারেই কথা বলতে পারে না। অন্যরা যে দিকে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে তাদের দেখাদেখি তাকায় না, অনেক সময় আঙ্গুল দিয়ে কোন দিকে নির্দেশ করলেও সেদিকে তাকায় না। যারা কথা বলতে পারে তারা অনেক সময় একই কথা, শব্দ, পছন্দের টিভি বিজ্ঞাপনের কথা বা গান বার বার বলতে থাকে।

সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও দেখা যায় ভিন্নতা। অটিস্টিক বাচ্চারা অনেক সময় বন্ধুত্ব তৈরি করে না, একসাথে খেলতে হয় এমন কোন খেলা খেলতে আগ্রহি হয় না, অনেক সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখে, মানুষের সাথে কথা বলার সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলে না, একা একা সময় কাটাতে চায়। অনেক সময় অটিস্টিক বাচ্চারা অন্য বাচ্চা বা ব্যক্তির প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শন করে না। অনেক সময় যে কাজ সে করছে তাতেই আটকে যায়, বার বার করতে থাকে। অনেক অটিস্টিক বাচ্চা সাধারণ বাচ্চার চেয়ে অনেক বেশি চঞ্চলতা প্রদর্শন করে। আবার অনেকে এতটাই নিঃস্পৃহ যে তাদের কোন কিছুই করতে ভাল লাগে না।

সাইন ও টেস্ট

সকল বাচ্চাকেই উচিৎ নিয়মিত বিরতিতে পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ অথবা অকুপেশনাল থেরাপিস্টকে দেখানো যাতে বাচ্চার যে বয়সে যা যা করা উচিৎ সেই বয়সে তাই করছে কিনা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানা যায়। যদি দেখেন আপনার বাচ্চা নিচের কাজগুলো করছে না তবে আপনার উচিৎ হবে বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া।

    বার মাস বয়সের মধ্যে মুখ দিয়ে বিভিন্ন শব্দ যেমন বু বু, মা মা ইত্যাদি শব্দ করা
    বার মাস বয়সের মধ্যে হাত দিয়ে বিভিন্ন দিকে নির্দেশ করা, টাটা করা ইত্যাদি
    ষোল মাস বয়সের মধ্যে অন্তত একটি করে অর্থবোধক শব্দ বলা
    চব্বিশ মাস বয়সের মধ্যে অন্তত দুটি অর্থবোধক শব্দ একসাথে বলা।

এছাড়া যেকোনো বয়সে যদি বাচ্চা কথা বলা বা সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়, তাহলে সাথে সাথে বাচ্চাকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

বাচ্চা অটিস্টিক কিনা তা যাচাই এর জন্য কোন পাথলজিক্যাল টেস্ট নেই। তবে এই বিষয়ে যারা পারদর্শী, তারা বাচ্চার আচার আচরণ, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি বিবেচনা করে বাচ্চা অটিস্টিক কিনা তা বলতে পারেন।

চিকিৎসা

অনেক ক্ষেত্রে অটিস্টিক বাচ্চাদের চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায় যদি তা দ্রুত নির্ণয় করা যায়। এই চিকিৎসা হচ্ছে একটি সমন্নিত চিকিৎসা যা পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিওথেরাপিস্ট এর সহযোগিতায় প্রতিটি অটিস্টিক বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ডিজাইন করা হয়। এই ধরনের বাচ্চাদের জন্য এখন বাংলাদেশেই বিশেষায়িত প্রচুর স্কুল আছে, যেখানে তাদের জন্য বিশেষ পাঠ দানের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এটা নির্ভর করবে তার অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর পরামর্শের ওপর। তিনি বাচ্চার সক্ষমতা বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন কোন স্কুল তার জন্য ভাল হবে।

অনেক অটিস্টিক বাচ্চার কিছু মানসিক সমস্যা যেমন অতি চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভিতি, মনোযোগের সমস্যা, ঘন ঘন মনের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া, বিষণ্ণতা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি থাকে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় সাইকিয়াট্রিস্ট ওষুধের ব্যাবহার করে থাকেন।

মনে রাখবেন, অটিস্টিক বাচ্চাদের কোন `মিরাকল চিকিৎসা` নেই। পরিবার, আত্মীয়পরিজন, সমাজ, শিক্ষক শিক্ষিকা, চিকিৎসকসহ সকলের সমন্নিত সাহায্য সহযোগিতায় একটি অটিস্টিক শিশুর জীবন হয়ে উঠতে পারে আনন্দময় ও অর্থবহুল।

`অটিস্টিক চাইল্ড হেল্প লাইনঃ` আপনি যদি সন্দেহ করেন আপনার শিশুর শারীরিক বা মানসিক বৃদ্ধি যেমনটা হওয়া উচিৎ ছিল তেমনটা হচ্ছে না, তাহলে দেরি না করে অটিস্টিক চাইল্ড হেল্প লাইন( +88-04478005161 ) এ যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে জানিয়ে দেবে কোথায় যেতে হবে বা কি করতে হবে।

সকল শিশুর জীবন হোক আনন্দময়।

Offline fatema_diu

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 309
    • View Profile
Re: এ টু জেড অব অটিজম
« Reply #1 on: August 19, 2013, 05:36:52 PM »
we should all be aware of this type of children