Brain Stroke

Author Topic: Brain Stroke  (Read 1553 times)

Offline yousuf miah

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 173
    • View Profile
Brain Stroke
« on: July 01, 2013, 02:25:59 PM »
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ঈষর্ণীয় উন্নতির হলেও কিছু কিছু রোগ আজ ও বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে যাচ্ছে। সেই সমস্ত ভয়বহ রোগের মধ্যে একটি হল স্ট্রোক (stroke)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় স্ট্রোক এর অর্থ হল "প্রকট স্নায়ুরোগ"। স্ট্রোক বলতে অনেকেই হার্ট এ্যাটাক মনে করে থাকেন। কিন্তু আসলে তা নয়। স্ট্রোক মানে ব্রেইন স্ট্রোক। এটা মস্তিস্কের এক ভয়াবহ সমস্যা। মস্তিষ্কের কোষগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মস্তিষ্কই পুরো দেহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং গ্লুকোজের সরবরাহ পায়। কোন কারণে এই সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে সে অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিই ব্রেইন স্ট্রোক নামে পরিচিত।
স্ট্রোকের কারণে শরীরের কোন একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঐ অংশ শরীরের যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে চালিত করত তা অবশ হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের ডান অংশ শরীরের বাম অংশকে পরিচালিত করে, আর বাম অংশ শরীরের ডান অংশকে পরিচালিত করে। কাজেই স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের বিপরীত অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। যদি শরীরের এক অংশ অচল হয়ে যায় তখন তাকে হেমিপ্লেজিয়া বলে। আর যখন এক অংশ অবশ হয়ে যায় তখন তাকে হেমিপেরেসিস বলে।
প্রকারঃ স্ট্রোক মোটামুটি দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
 ইসচেমিক(ischemic):এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোন এক অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হেমোরোজিক(hemorragic): মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ আকস্মিকভাবে হ্রাস পাওয়াকেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা ব্রেইন স্ট্রোক বলা হয়।
কারণ : বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কে স্ট্রোক দেখা দিতে পারে। মস্তিকের মধ্যস্থ কোন ধমনী বা শিরা সরু হয়ে গেলে অথবা কোন কারণে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে যে স্ট্রোক হয় তাকে ‘ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিবা অ্যাটাক’ বলা হয়। বেশির ভাগ রোগী এ ধরনের স্ট্রোকেই আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও মস্তিষ্কের মধ্যস্থ কোন অংশ বা মস্তিষ্ক এবং খুলির মধ্যবর্তী কোন অংশ বা শিরা থেকে রক্তপাত ঘটার কারণেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ ধরনের স্ট্রোককে ‘হেমোরেজিক স্ট্রোক’ বলা হয়।
‘ইসকেমিক’ স্ট্রোক ক্ষণস্থায়ী হয় এবং এক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে রোগের লক্ষণ থেকে মুক্তি লাভ করতে দেখা যায়। একবার ‘ইসকেমিক’ স্ট্রোকে আক্রান্তদের আবার একই ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি থাকে পরবর্তীতে এদের হেমোরেজিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বেশি। ‘হেমোরেজিক স্ট্রোকে’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার কারণে স্ট্রোকজনিত লক্ষণসমূহ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে এবং চিকিৎসা লাভের পরও শারীরিকভাবে সুস্থ্য হয়ে উঠতে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু সময় লাগে এবং কোনও কোনও সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেখা যায়। মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হওয়ার কারণে সাধারণত মাথার যেদিক আক্রান্ত হয় তার বিপরীত দিকের শরীরের অংশ বা অংশ বিশেষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা নড়াচড়ায় নিয়ন্ত্রণহীনতা দেখা দেয়, স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তির ক্ষতি সাধিত হয়, ভাষা ব্যবহারে এবং বুঝতে অসুবিধা হয়, আবেগের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা এবং ব্যথাসহ স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়ার আশংকা থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রোগীর সেরে ওঠার মাত্রা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশের কতটা কোষকলা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর।
তবে যে কোনও ধরনের স্ট্রোকই হোক না কেন চিকিৎসা লাভের ক্ষেত্রে যত বেশি কালক্ষেপণ হয় ততই তা জটিল হয়ে উঠতে পারে এবং মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকাও বেশি থাকে। তাই লক্ষণের প্রকাশ দেখা গেলেই তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত।
কাদের ঝুঁকি বেশি : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার আশংকা বাড়তে থাকে বিশেষ করে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলস্টেরল বা হূদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত এবং ধূমপায়ীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি। কোকেনজাতীয় মাদকসেবনের ফলে ৫০ বছরের চেয়ে কম বয়সীদেরও কখনও কখনও রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
লক্ষণ : রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে এ রোগের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক এবং মানসিক কিছু জটিল সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব এবং সেই সঙ্গে মৃত্যু ঝুঁকিও অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সূচকের ওপর নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের মধ্যে লক্ষণের পার্থক্য দেখা দেয়।
‘ইসকেমিক’ এবং ‘হেমোরেজিক’ উভয় স্ট্রোকের একই ধরনের লক্ষণ হতে পারে। প্রধান লক্ষণ হল কথা বলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়া। তাই হঠাৎ বয়স্ক কারও শব্দ চয়নে অসুবিধা বা কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। হাতের আঙুল, পায়ের পাতা, শরীরের একদিকের হাত বা পা নাড়াতে কষ্ট হওয়া, মুখমণ্ডল নাড়ানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা বা মুখের একদিকের মাংসপেশিতে অসাড়তা দেখা দেয়া, আগে কখনও অনুভূত হয়নি হাত বা পায়ে এমন ধরনের ভার বোধ হওয়া, খিল ধরে যাওয়া, অসাড়তা দেখা দেয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যাগুলোর তীব্রতা মাঝারি থেকে প্রবল হয়ে উঠতে পারে। দৃষ্টিশক্তি ঝাঁপসা হয়ে পড়া, ঝিমুনি ভাব, শরীরের ভারসাম্য অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বমি হওয়া, মলমূত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা ইত্যাদিও এ রোগের লক্ষণ। কারও কারও ক্ষেত্রে মানসিক বিভ্রম বা বিষণ্নতাও দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয় : কোন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা ঘরে বসে নির্ণয় করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর হাসতে অসুবিধা হচ্ছে কি না বা হাসতে গেলে গাল বা চোখ বেঁকে বা কুঁচকে যাচ্ছে কিনা, রোগী দু’হাত উপরে ওঠাতে এবং সোজা অবস্থায় ধরে রাখতে পারছে কিনা অথবা রোগী সঠিকভাবে কথা বলতে এবং বুঝতে পারছে কিনা তা পরীক্ষা করা যেতে পারে। যে কোনও একটি লক্ষণের প্রকাশ ঘটলেই রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাসপাতালে রোগীর স্ট্রোকের ধরন ও আক্রান্ত স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য সাধারণত ‘কমপিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি)’ বা ‘ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) করা হয়। এছাড়া আনুষঙ্গিক আরও বিভিন্ন ধরনের কিছু পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসা : অসুখের ধরন জেনে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ‘ইসকেমিক’ স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ‘অ্যাসপিরিন’ বা অন্য কোন ধরনের রক্ত পাতলা করার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কখনও কখনও শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এমনকি ক্যাথেটারের সাহায্যে তা সরাসরি মস্তিকেও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করার জন্য বা সরু হয়ে যাওয়া শিরার প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য মস্তিষ্কে অপারেশন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কখনও কখনও হূৎপিণ্ডের ন্যায় এক্ষেত্রেও এনজিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়ায় ‘স্ট্যান্টিং’ করার ব্যবস্থাও করা হয়।
‘হেমোজেরিক’ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ ও মস্তিষ্কের চাপ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত শিরা মেরামত করার লক্ষ্যে অপারেশন করার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়। জটিল ক্ষেত্রে শিরার কিছুটা অংশ কেটে ফেলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব রোগী যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
পুনর্বাসন : চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই রোগী যেন অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজস্ব দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে বয়স, স্বাস্থ্য এবং ক্ষতির পরিমাণ ভেদে বিভিন্ন মাত্রায় পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এগুলোর মধ্যে ‘ফিজিওথেরাপি’, শরীরচর্চা, ভাষা ব্যবহারে সাহায্য করা বা বিকল্প পদ্ধতিতে মনের ভাব প্রকাশের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া মানসিক সুস্থতা লাভের ব্যাপারেও বিশেষ মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন থাকে।


Md.Yousuf.Miah
Accounts Officer
Daffodil International University