তাঁর ছবি, নাম আর ক্যারিয়ার রেকর্ড দিয়ে সাজিয়ে কারা যেন একটা টি-শার্ট বের করেছে। গায়ে সেই টি-শার্ট। হোটেল আগ্রাবাদের লবিতে ভক্তদের উঁকিঝুঁকি। এর মধ্যেই অনুশীলন থেকে ফিরল নিউজিল্যান্ড দল। রস টেলরকে নিজের পেশি ফুলিয়ে কপট হুমকি দিলেন। আইপিএলে কেকেআর সতীর্থ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করলেন ‘ইটস্ রেইনিং’ বলে! এর আগে-পরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে সাকিব আল হাসান-এর সাক্ষাৎকার নিলেন উৎপল শুভ্র
নিউজিল্যান্ড দেশে আসার পর থেকেই তো ‘বাংলাওয়াশ’ রব উঠে গেছে। আপনিই ছিলেন ওই বাংলাওয়াশের নায়ক। নিশ্চয়ই মনে পড়ছে সেই স্মৃতি...
সাকিব আল হাসান: সত্যি কথা, আজ পর্যন্ত আমার মনে পড়ে নাই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে শেষ সিরিজে আমি কী কী করেছি। একেবারে সত্যি কথা।
বললেই হলো!
সাকিব: আপনি বিশ্বাস করেন বা না-ই করেন, সত্যি কথাই বললাম। যখন কেউ বলে, তখন মনে পড়ে...ওই যে শেষ ম্যাচটা রুবেল জেতাল। এটুকুই...
আসলেই বিশ্বাস করছি না। ওই সিরিজ শুরুর আগের মতো এখনো তো ৪-০ অবিশ্বাস্য মনে হয়!
সাকিব: আমরা প্রথমে চিন্তা করেছিলাম, পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ যদি হয়, আমরা যদি দুইটা ম্যাচ জিততে পারি, অনেক ভালো। প্রথম ম্যাচ জিতে গেলাম, পরের ম্যাচটাও, এরপর আবার হলো বৃষ্টি। তখন আমাদের মনে আলাদা একটা কনফিডেন্স যে আমাদের তো আর হারার চান্স নাই। আরেকটা ম্যাচ জিতে গেলে সিরিজ জিতে যাব। তো পরের ম্যাচটাও জিতে গেলাম। শেষ ম্যাচটাতে ওরা এমন এলোমেলো যে আমরা যা করেছি তাতেই জিতে গেছি।
আপনার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিও তো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে...
সাকিব: আমার প্রথম ৫ উইকেটও।
সেটিও বলতাম, ২০০৮ সালে এই চট্টগ্রামে ৩৬ রানে ৭ উইকেটই তো বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানকে চেনাল...
সাকিব: এগুলো তো বাড়তি একটা কনফিডেন্স দেয়ই, আগেও করেছি, আবার কেন পারব না করতে? এ ছাড়া কিছু নয়। শেষ পর্যন্ত তো এটা নতুন দিন, নতুন ম্যাচ, নতুন উইকেট...সবকিছুই নতুন।
নিউজিল্যান্ডের মতো চট্টগ্রামও আপনার ক্যারিয়ারে আলাদা হয়ে থাকার কথা। এখানেই টেস্ট অভিষেক। এখানেই বোলার হিসেবে পুনর্জন্ম...
সাকিব: চিটাগাংয়ে আমি যতবারই খেলেছি, বোলিংটা সব সময় ভালো হয়েছে। যদিও আমি এইভাবে কখনোই চিন্তা করি না যে চিটাগাংয়েই আমি ভালো বোলিং করি। ঢাকায়ও দুইবার না তিনবার ৫ উইকেট পেয়েছি। চিটাগাংয়ে বোধহয় দুইবারই। চিটাগাং তাই আলাদা কিছু নয়।
কিন্তু যে মাঠে টেস্ট অভিষেক, সেটি আলাদা হয়ে থাকবে না?
সাকিব: ওই জিনিসটা আমার কখনোই মনে হয় নাই। মাঠ প্রিয়-ট্রিয় মনে হওয়ার কথা যদি বলেন, সেটি আমার শুধু মিরপুরে নামলেই মনে হয়। ওই মাঠটা দেখলেই আমার মনে শান্তি লাগে। আর কোনো মাঠে এমন হয় না।
কিন্তু টেস্ট অভিষেক তো জীবনে একবারই হয়। শুধু খেলার কথা বলছি না, যখন জানলেন অভিষেক হচ্ছে, প্রথম সকালের অনুভূতি—এসব মনে নেই?
সাকিব: কিছুই মনে নাই। এগারোজন প্লেয়ার বলতে বলেন, আমার মনে নাই। সত্যি বলছি, কাদের সঙ্গে খেলেছি, সেটা বলতে পারব না।
এই প্রশ্নটা আগেও অনেকবার করেছি। এই যে কোনো কিছু বড় করে না দেখা, এটা কি আপনার সহজাত...সাফল্যের রহস্যও কি এটাই?
সাকিব: (হাসি) আমি জানি না ভাই...আমার কাছে মনে হয়, যেটা চলে গেছে সেটা নিয়ে চিন্তা করে তো লাভ নাই। সামনে কী আছে, এটা নিয়ে চিন্তা করা ঠিক আছে। কালকে (আজ) টেস্ট ম্যাচ শুরু, এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ আছে। যেটা চলে গেছে, ওখান থেকে যদি কোনো শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপার থাকে, নিয়ে নিয়েছি।
ঠিক আছে, সামনে যা আছে তা নিয়েই বলুন, টেস্ট সিরিজ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী কী?
সাকিব: আমি খুবই আশাবাদী যে আমাদের একটা ম্যাচ জেতা সম্ভব। একটা ম্যাচ জিতলেই ওরা আর সিরিজ জিততে পারছে না। আর প্রথমটা জিতে যদি পরেরটা ড্র করতে পারি, তাহলে তো সিরিজই জিতে গেলাম। এটা খুবই সম্ভব।
ওয়ানডে সিরিজ?
সাকিব: এটা এখনো বলার সময় আসেনি। টেস্ট সিরিজের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিশেষ করে প্রথম টেস্টের ওপর। এটাতে যদি আমরা ভালো খেলি, ভালো খেলে যদি হেরেও যাই, তাহলে কনফিডেন্স থাকবে যে সেকেন্ডটা আমরা জিততে পারি। যদিও ওয়ানডেতে আমরা অনেক ভালো দল, তার পরও এই টেস্ট সিরিজটাই বলে দেবে আমরা ওয়ানডেতে কেমন করতে পারি।
প্রথম টেস্টের নির্ধারক কী হতে পারে বলে আপনার ধারণা?
সাকিব: আমাদের স্পিনাররা কেমন বল করে। আমার বিশ্বাস, উইকেট ভালো হলে আমাদের পক্ষে পাঁচ শ, সাড়ে পাঁচ শ, ছয় শ রান করা সম্ভব। এর নিচে যদি বোলাররা ওদের আটকাতে পারে..
পাঁচ শ, ছয় শ রান, বলেন কী!
সাকিব: দুই ইনিংসে। ছয় শ প্লাস আমার মনে হয় উইনিং টোটাল। আমার বিশ্বাস, আমাদের ব্যাটসম্যানরা এটা করতে পারবে। আর টেস্ট জিততে হলে তো ২০ উইকেট নেওয়ার কোনো বিকল্প নাই। ওইখানে আমাদের স্পিনারদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। আমাদের স্পিনাররা যদি ভালো বোলিং করে, তাহলে সম্ভব।
নিউজিল্যান্ড দলে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে যদি কাউকে বেছে নিতে বলি...
সাকিব: না, ওরকম কেউ নেই। ওরা এখন হলো টিম। আমাদেরও তা-ই, একজন-দুজন ম্যাচ জেতাতে পারে না। জিততে হলে তিন-চারজনের ভূমিকা রাখতে হবে।
শেষ প্রশ্ন, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলা হলে একই ধরনের প্লেয়ার বলে ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকত। ভেট্টোরিকে কি মিস করছেন?
সাকিব: কেন মিস্ করব! বাংলাদেশের জন্য তো এটা অনেক বড় একটা প্লাস পয়েন্ট। আমাদের বিপক্ষে ওর যে পারফরম্যান্স...শুধু বোলিংই না, এখানে টেস্টটা (২০০৮) তো ও ব্যাটিং করেই জিতিয়ে দিল। ওর মতো একটা প্লেয়ার নাই, এটা তো আমাদের জন্য অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ। আমরা যেন এই অ্যাডভান্টেজটা নিতে পারি, সেই চেষ্টাই করা উচিত।