Entrepreneurship > Agriculture

Mushroom cultivation method

(1/1)

ariful892:
মাশরুম চাষ

আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপীকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উত্পাদিত হয়, তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘মাশরুম’। মাশরুমের চাষ এবং এর ব্যবহার আমাদের দেশে এখনও তেমন প্রসার ঘটেনি। আমাদের দেশে শুধু চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোয় মাশরুম স্যুপ একটি উপাদেয় খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। তবে পৃথিবীর বহু দেশে স্যুপ ছাড়াও এটা অন্যান্য সবজির মতো খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাশরুম একদিকে যেমন অত্যন্ত কম সময়ে উত্পাদিত হয়, তেমনি এগুলো রান্না করতেও সময় কম লাগে। মাত্র তিন-চার মিনিটেই মাশরুম সিদ্ধ হয়ে যায়।
মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে থাকে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ০.৮ গ্রাম স্নেহ, ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.৪ গ্রাম আঁশ, ৪.৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মি. গ্রাম কেলসিয়াম, ১১০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ১.৫ মি. গ্রাম লৌহ, ০.১৪ মি. গ্রাম ভিটামিন বি১, ০.১৬ মি. গ্রাম বি২, ২.৪ মি. গ্রাম নায়াসিন, ১২ মি. গ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ কেলোরি। সাধারণত মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশি এবং প্রচলিত শাক-সবজির চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাক-সবজির চেয়ে চারগুণ। এছাড়াও এতে যে ফলিক এসিড থাকে তা অ্যামিনিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমুত্র রোগী এবং যারা মোটা তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার। এটা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজেই হজম হয়।
মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। এটা চাষের জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য। বেকার যুবক-যুবতী এবং মহিলারা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, এজন্য এটা চাষ করা অত্যন্ত লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রফতানির সুযোগ বিদ্যমান। গ্রীষ্মকালে যে কোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে ‘স্ট্র মাশরুম’ এবং শীতকালে ‘ওয়েস্টার’ জাতের মাশরুম চাষ উপযোগী।

প্রয়োজনীয় উপকরণ - ক.) মাশরুমের বীজ বা স্পন। খ.) বেড বা মাদা তৈরির জন্য ধানের শুকনা খড়। গ.) বেডের স্তরে ও উপরে ব্যবহারের জন্য মিলের ছাঁট তুলা/শিমুল তুলা এবং ধানের কুড়া/ছোলার বেসন। ঘ.) খড় ভেজানোর জন্য ড্রাম বা মাটির বড় চাড়ি/গামলা। ঙ.) বেডের তলায় ও উপরে ব্যবহারের জন্য পলিথিন কাগজ। চ.) মাপ মতো বেড তৈরির জন্য একটি কাঠের তলাবিহীন বাক্স।

মাশরুম চাষ পদ্ধতি
* পরিমাণমত শুকনো পরিষ্কার ধানের খড় সংগ্রহ করে পানিভর্তি ড্রামের মধ্যে কিংবা মাটির বড় চাড়ির মধ্যে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে ভিজিয়ে নিন।
* ভেজানো খড়গুলো একটা ঝুড়িতে রেখে অতিরিক্ত পানি বের হতে দিন।
* এবার ভেজা খড়গুলো একটা পরিথিন কাগজের ওপর স্তূপ করে রেখে তার ওপর আরেকটি পলিথিন কাগজ দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন।
* পরিমাণমত শিমুল তুলা কিংবা মিলের পরিত্যক্ত তুলা একটি পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন।
* যে ঘরে বা স্থানে মাশরুম চাষ করা হবে সে জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মেঝেতে পলিথিন বিছিয়ে দিন।
* এক মিটার লম্বা, এক মিটার চওড়া এবং ৩০ সি.মি. উঁচু তলাবিহীন কাঠের ফরমা বা বাক্সটি পলিথিন বিছানো কাগজের ওপর রাখুন।
* এখন কাঠের ফরমার মধ্যে সমানভাবে ভিজা খড় একটু চাপ দিয়ে সাজাতে থাকুন যেন বিছানো খড়ের স্তর ৮-১০ সে.মি. পুরু বা উঁচু হয়।
* চারদিকে খড়ের স্তূপের কিনার থেকে ৫ সে.মি. ছেড়ে এক সে.মি. পুরু ও ৫ সে.মি. চওড়া করে ভিজা তুলা ঠিকমত বিছিয়ে দিন।
* মাশরুমের বীজ ছিটানোর পর একই নিয়মে আবার ৮-১০ সে.মি. করে খড় বিছিয়ে ২য় স্তর তৈরি করে একইভাবে তুলা বিছিয়ে তাতে মাশরুম বীজ ছড়িয়ে দিন।
* এরপর একইভাবে ৩য় স্তর তৈরি হলে বেডের উপরের সব অংশে তুলা ছড়িয়ে তার ওপর মাশরুম বীজ বুনে আবার হালকাভাবে সামান্য খড় ছিটানোর পর বাক্সটি ভরে গেলে সাবধানে তুলে নিন।
* একই নিয়মে পাশাপাশি ১০ সে.মি. ফাঁকে ফাঁকে একটির পর একটি বেড প্রয়োজনমত বসাতে থাকুন।
* প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাজানো শেষ হলে বেডগুলো পলিথিন কাগজ অথবা চট দিয়ে ঢেকে দিন।

মাশরুমের পরিচর্যা
* মাশরুম বেডে বীজ বপনের পর থেকে গজানোর আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ সে.এর মধ্যে রাখা দরকার এবং মাশরুম গজাতে শুরু করলে তাপমাত্রা ৩০-৩৫ সে.-এর মধ্যে রাখতে হবে।
* পলিথিন দ্বারা ভালোভাবে ঢেকে তাপ বাড়ানো এবং খুলে দিয়ে তাপ কমানো যায়। কাজেই অবস্থার প্রেক্ষিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
* মাশরুম বেডকে পোকা-মাকড় ও জীব-জন্তুর উপদ্রব থেকে রক্ষা করুন।
* মাশরুম বেড সব সময় ভেজা থাকা দরকার। বেডের উপরিভাগ শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

মাশরুম সংগ্রহ
* মাশরুম বেডে বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যে আলপিনের মাথার আকারে মাশরুম গজানোর লক্ষণ দেখা যায়। মাত্র ২ দিনের মধ্যে এ অবস্থা পেরিয়ে মাশরুম দেশীয় মুরগির ডিমের আকার ধারণ করে। এ অবস্থা মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
* সংগ্রহে বিলম্ব হলে মাশরুম ছাতার মতো হয়ে ফুটে যায় এবং এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই সময়মত মাশরুম সংগ্রহ করা আবশ্যক।
* একটা বেড থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত দফায় দফায় মাশরুম সংগ্রহ করা যায়।
* মাশরুম সংগ্রহ শেষ হলে বেডের সব আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সেখানে পরের বারের জন্য মাশরুম চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

মাশরুম সংরক্ষণ
* মাশরুম তাজা অবস্থায় খাওয়া উত্তম।
* পলিথিন ব্যাগে সাধারণভাবে মাশরুম ১০-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে।
* রিফ্রিজারেটরে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মাশরুম অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।
* রোদে শুকিয়ে নিয়ে মাশরুম দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
* রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট টিনে বহুদিন ধরে সংরক্ষণ করে খাওয়া চলে।

অন্যান্য তথ্যাবলী
* ৫ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া ঘরের মেঝেতে পূর্বে বর্ণিত পরিমাপের ৩০টি বেডে একত্রে মাশরুম চাষ করা যায়।
* তাক বা র‌্যাক তৈরি করে তাতে চাষ করলে এ সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি করা যায়।
* প্রতি বেডে গড়ে এক কেজি ’স্ট্র’ জাতের মাশরুম ফলে।
* বেড প্রতি ৩-৪ কেজি খড়, ২০০ গ্রাম তুলা এবং ১০০-১৫০ গ্রাম মাশরুম বীজের প্রয়োজন হয়।
* বীজ বপন থেকে শুরু করে মাশরুম সংগ্রহ পর্যন্ত একটা ফসল চক্র শেষ হতে সর্বমোট ২০-২৫ দিন সময় লাগে। অন্য কোনো সবজি এত তাড়াতাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়।
* এক কেজি মাশরুম উত্পাদনে খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকা।
* ৫ মিটার দৈর্ঘ ও ৫ মিটার চওড়া আয়তনের একটা ঘরে বাঁশের তাক তৈরি করে ১২০টি বেডে মাশরুম চাষ করে প্রতি ২০ দিনে ১২০ কেজি মাশরুম উত্পাদন করা সম্ভব হবে। উত্পাদিত মাশরুম প্রতি কেজি বর্তমান বাজার মূল্য ২০০ টাকায় বিক্রি করলে মোট ২৪,০০০ টাকা পাওয়া যাবে, যা থেকে ১২,০০০ টাকা খরচ বাদ দিয়ে ১২০০০ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে। মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪ তে।

mustafiz:
Nice & productive information

Navigation

[0] Message Index

Go to full version