‘এখন সে ইচ্ছেমতো বাটার-চিকেন খেতে পারবে’

Author Topic: ‘এখন সে ইচ্ছেমতো বাটার-চিকেন খেতে পারবে’  (Read 1223 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
শুধু বড় ভাই নন, অজিত টেন্ডুলকার তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু, পথপ্রদর্শক। আজকের শচীন টেন্ডুলকার হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদানও এই মানুষটার। ছোট ভাইয়ের বিদায়বেলায় খুব স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত তিনিও। ইন্ডিয়া টুডে-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে খুলে দিয়েছেন তিনি মনের দুয়ার—
 ১৮ নভেম্বরের পরে জীবন কেমন হবে? টেন্ডুলকার অবসর নেবেন সেদিন...
অজিত টেন্ডুলকার: ওই দিনের পর সে আর কখনো ভারতের ক্যাপ পরবে না। এটা ওর জন্য একটা বিশাল ব্যাপার। কারণ দেশের ক্যাপটা নিয়ে সে গর্বিত। যখনই টেন্ডুলকার ব্যাট করতে যায়, ভক্তরা আশা করে সে সেঞ্চুরি করবে। এই ক্যাপটাই তার সেই আশাপূরণের প্রেরণা। ওই দিনের পর আর কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। এখন সে ইচ্ছেমতো বাটার-চিকেন খেতে পারবে (হাসি)।
 আপনাদের পরিবারের সবার মানসিক অবস্থা কেমন?
আমাদের পরিবার খুশি। কারণ মা তাকে কখনো সরাসরি খেলতে দেখেনি, এমনকি নেটেও না। তিনি ছেলের ২০০তম এবং শেষ টেস্ট দেখতে ওয়াংখেড়ে যাবেন। ওর জন্য, মায়ের জন্য আমাদের সবার জন্য এটা অবশ্যই আবেগঘন একটা মুহূর্ত।
 এর আগে আপনাদের পরিবারের কেউ কখনো তাঁর ব্যাটিং দেখতে যাননি কেন?
এটা নিয়ে বন্ধুরা আগেও অনেক হাসাহাসি করত। টেন্ডুলকারের ব্যাটিং না দেখে আমরা নাকি অনেক কিছু মিস করেছি। আসলে আমরা যেতাম না, কারণ আমরা খুব ভয়ে থাকতাম। এমনকি সে যখন অনেক রান করে তখনো আমরা নার্ভাস থাকি। ও ব্যাট করতে নামলে আমার মা প্রার্থনা শুরু করেন, আমার বোন উপবাস শুরু করে। ও যতক্ষণ ক্রিজে থাকে আমরা সবাই কিছু না-কিছু করি।
 রমাকান্ত আচরেকারের কাছে টেন্ডুলকারের প্রথম দিনটি কেমন ছিল?
আমি যখন ওকে আচরেকার স্যারের কাছে নিয়ে গেলাম, সে একটা টি-শার্ট আর হাফ প্যান্ট পরা ছিল। স্যার তাকে বললেন পরের দিন ট্রাউজার পরে আসতে। সেদিন সে ব্যাটিং করার সুযোগ পায়নি, কিছুক্ষণ ফিল্ডিং করেছিল। ওকে কয়েকটা উঁচু ক্যাচ নিতে দেখে আমিও অবাক হয়েছিলাম। পরের দিন আমিও ওর ব্যাটিং দেখতে চেয়েছিলাম। সে খুব দ্রুত ছন্দ পেয়ে গেল এবং আচরেকার স্যার সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলেন টেন্ডুলকার সব সময় চার নম্বরে ব্যাট করবে।
 টেন্ডুলকার থেকে তিনি কীভাবে ভারতের প্রথম কোটিপতি ক্রীড়াবিদ হলেন?

আমার কাছে তো সে যখনই সেঞ্চুরি করত, তখনই কোটিপতি। যখন সে একটা সেঞ্চুরি করত, আমরা নিজেদের কোটিপতি ভাবতাম যদিও তখনো আমরা অটোরিকশায় চলাফেরা করি। আর যখন পারত না তখন ফেরারিতে চড়েও কোটিপতি মনে হতো না। আজ সে এক শ সেঞ্চুরির মালিক। আমি বলতে পারি, সে আসলেই কোটিপতি।
 কিছুদিন আগেও নাকি তিনি একবার ট্যাক্সিতে চড়ে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন?
একদিন সকালের ঘটনা। আমরা বিএমডব্লিউ এক্স ফাইভে করে বান্দ্রা উড়ালসেতু দিয়ে যাচ্ছিলাম। ও আমাকে বলল, গাড়িতে সমস্যা হয়েছে। আমি বের হয়ে দেখলাম টায়ার বসে গেছে। তখন সকাল সাড়ে ছয়টা, তাই খুব বেশি জ্যাম ছিল না। আমি গাড়ি থেকে নেমে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম, তারপর বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। সবাই খুব অবাক হয়েছিল টেন্ডুলকার ট্যাক্সিতে আসছে দেখে।
 টেন্ডুলকার সম্পর্কে সবচেয়ে বড় প্রশংসা কী পেয়েছিলেন?
শারজায় একটা ওয়ানডে টুর্নামেন্টে খেলছিল সে। পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ভারতকে জেতাল। আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু ফোন করে বলল, তার মা টেন্ডুলকারের ব্যাটিং দেখেছেন এবং আনন্দে কাঁদতে শুরু করেছেন।
 আপনার বাবার মৃত্যুর সেই কঠিন দিনটা?
বাবা যদি পাঁচ মিনিটের জন্যও ওপার থেকে ফিরে আসতেন, তাহলে তিনি ওকে ফিরে গিয়ে ভারতের হয়ে খেলার জন্য বলতেন। তিনি এটাই চেয়েছেন সব সময়। সে যখন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ থেকে ফিরে এসেছিল আমরা খুব মন খারাপ করেছিলাম। এর মাস দুয়েক আগে বাবা একবার হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন, আমি ওকে কিছুই বলিনি, কারণ তখন সে দেশের হয়ে খেলছিল। তবে সে ফিরে গেছে এবং পরের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
 দুই ভাইয়ের মধ্যে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব?
আমাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে যেটুকু দ্বিমত হয় সেটা ক্রিকেট নিয়েই। এর বাইরে অন্য বিষয় নিয়ে আমরা খুব বেশি কথা বলি না। আমার জন্য খুবই আনন্দের যে টেন্ডুলকার সব সময় আমার কথা শুনেছে। ও যত জায়গায় খেলেছে, আমি তার অনেকগুলো মাঠেই যাইনি। কিন্তু তার পরও আমার পরামর্শ নিয়েছে সে। মাঝেমধ্যে আমার নিজেকে মূর্খ মনে হতো, আমি যে জায়গায় যাইনি সেটা নিয়েও ওকে পরামর্শ দিচ্ছি!
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy