‘স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে শচীন’

Author Topic: ‘স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে শচীন’  (Read 1170 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
উইজডেন-এর বিচারে ভারতের গত শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার তিনি। সেই কপিল দেব পর্যন্ত বলছেন, শচীন টেন্ডুলকারের পাশে খেলতে পেরেই তিনি গর্বিত। কলকাতার একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক কথা বললেন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ার নিয়ে—

টেন্ডুলকারকে কতটা মিস করবেন...

 কপিল দেব: আমাকে ভুল বুঝবেন না, কিন্তু আমার মনে হয় না ওকে মিস করব আমি...যে আমাদের এত কিছু দিয়েছে, এত কিছু অর্জন করেছে, এমন একজনকে কীভাবে মিস করব! শচীন যা করেছে, তার জন্য ওকে আমি সর্বান্তঃকরণে শ্রদ্ধা করি।

টেন্ডুলকারের কাছে যা প্রত্যাশা ছিল...
 প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি করেছে শচীন। আনন্দ দিয়েছে আমাদের, স্বপ্ন পূরণ করেছে...সত্যি বলতে স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা করব অন্য কারও জন্য, যে শচীনকে ছোঁবে বা শচীনকেও ছাড়িয়ে যাবে। প্রায় প্রতিটি প্রজন্মই অন্তত একজন করে জিনিয়াসের জন্ম দেয়, জীবনচক্রের নিয়মই এটা। সানি (সুনীল গাভাস্কার) যখন অবসর নিল, অন্য সবার মতো আমিও ভাবছিলাম, এরপর কে! বছর দুয়েকের মধ্যে শচীন চলে এল। দেখা যাক, ওর পরে কে!
টেন্ডুলকারের সবচেয়ে বড় অবদান...
 ছেলেমেয়েদের ক্রীড়ায় ক্যারিয়ার গড়তে দিতে মা-বাবাদের অনুপ্রাণিত করা...আমার ছেলেবেলায় সবাই বলত, ‘খেলাধুলা করলে হবে খারাপ, পড়ালেখা করলে হবে নবাব’। এটাই সবার মানসিকতা ছিল, শচীন সেটা বদলে দিয়েছে। এখন অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের খেলায় নিরুৎসাহিত করেন না।
টেন্ডুলকারের অভিষেক টেস্টের সকাল...
 শচীন নার্ভাস ছিল কি না, এতটা আমার মনে নেই। তবে মনে আছে, সব সময় ওর হাতে কোনো না কোনো ফল থাকত। প্রচুর ফল খেত ও।
ওই সিরিজের শেষ টেস্টে ওয়াকারের বাউন্সারে নাক ফাটার পরও টেন্ডুলকারের খেলে যাওয়া...
 ওই ঘটনা প্রমাণ করেছিল শচীনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, প্রমাণ হয়েছিল ওই বয়সেই মানসিকভাবে কতটা শক্ত ছিল সে।
১৯৯০ সালের ইংল্যান্ড সফরে টেন্ডুলকারের রুমমেট হওয়ার স্মৃতি...
 তখন সবে শুরু...আমি রুমমেট বদলে দিতে বলেছিলাম, কারণ শচীন আমার চেয়ে অনেক ছোট ছিল (১৪ বছরের ব্যবধান)। আর সেই সময় শচীন কোনো একটা পরীক্ষার জন্য সন্ধ্যায়, রাতে পড়াশোনা করত। বেচারা পড়তে পড়তে বুকের ওপর বই রেখেই ঘুমিয়ে পড়ত। আমি বই সরিয়ে লাইট নিভিয়ে দিতাম। শচীনের জন্য তখন দিনে ছিল ক্রিকেট, এর পর পড়াশোনা। বাইরে যেতেই চাইত না। ১৭ বছরের ছেলেটির জন্য আমার খারাপ লাগত।
১৯৯২ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে পার্থের সেঞ্চুরিকে অনেকে মনে করেন টেন্ডুলকারের টার্নিং পয়েন্ট...
 টার্নিং পয়েন্টের চেয়েও বেশি, এই সেঞ্চুরি টেন্ডুলকারের মনে এই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল যে সে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার যোগ্য। পুরো দেশও নিশ্চিত হয়েছিল ওকে নিয়ে।
গত ১০-১২ বছরে ব্যাটিংয়ের বদলে যাওয়া ধরন
 আমার মনে হয়, শচীন যদি আগের মতোই ব্যাটিং করত! যখন সে অনেক স্বাধীনতা নিয়ে খেলত, বোলারদের প্রতি ছিল নির্মম। হয়তো চোটের একটা ভূমিকা আছে ব্যাটিংয়ের ধরন বদলে ফেলায়।
২০০ টেস্ট খেলে টেন্ডুলকারের বিদায়...
 প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান করেছিল সানি, আমি কখনো ভাবতেও পারিনি ওর রানকে কেউ ছাড়িয়ে যাবে...আর ২০০ টেস্ট? নাহ্, কখনোই ভাবিনি কেউ এত দূর যেতে পারবে। শচীন অবশ্যই স্পেশাল...সত্যি বলতে, আমি কখনো এটাও ভাবতে পারিনি যে কোনো বোলার একদিন ৮০০ উইকেট (মুত্তিয়া মুরালিধরন) পাবে!
শচীনকে যেভাবে মনে রাখবেন...
 প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ ক্রিকেটার আর অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব...সিধু (নভজ্যোত সিং) যখন আমার সঙ্গে খেলত, প্রায় কথাই বলত না। এখন সে কথা না বলে থাকতে পারে না! আমি আশা করব, লোকে এখন শচীনের অনেক কথা শুনতে পারবে। ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওর ২৪ বছরের ক্যারিয়ার নিয়ে ওর কথা বলা উচিত। যেহেতু কথা খুব কম বলে, আমি ওকে ক্রিকেটার হিসেবে বিচার করতে পারি, মানুষ হিসেবে নয়।
টেন্ডুলকার ও ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ...
 অন্তত দুই বছর ওর উচিত হবে না খেলা নিয়ে কিছু করা। এরপর ওর সিদ্ধান্ত ওকেই নিতে হবে।
বিদায়বেলায় শচীনের প্রতি বার্তা...
 তুমি আমাদের গর্বিত করেছ, তোমার পাশে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। পারফরম্যান্স আর উৎকর্ষের মানদণ্ড বেঁধে দিয়েছ তুমিই।
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy