আর কিছুক্ষণ পরই সেই মহারণ। গত কিছুদিন ধরে হাহাকার হয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ানো প্রশ্নটারও উত্তর মিলে যাওয়া—কে? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নাকি জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ? এ সময়ের অন্যতম সেরা দুই তারকার মধ্যে কাকে বেছে নেবে বিশ্বকাপ? কার ফুটবলের জাদু দেখা যাবে ব্রাজিলে?
পর্তুগাল-সুইডেন প্রথম লেগ এরই মধ্যে হয়ে গেছে। নিজেদের মাঠের সুবিধা পর্তুগাল সেভাবে তুলতে পারেনি। ৮০ মিনিটে রোনালদোর একমাত্র গোলে জিতেছে তাঁর দল। ফলে একটা শঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে। ফিরতি লেগটা যে সুইডেন খেলবে নিজেদের মাঠে।
সুইডেনের জন্য এটা সুবিধা, আবার অসুবিধাও। আজ পর্তুগাল একটি অ্যাওয়ে গোল করে ফেলতে পারলেই সুইডিশদের জন্য হিসাবটা হয়ে যাবে অনেক কঠিন। তখন তাদের জিততে হবে ৩-১ ব্যবধানে। যে কোনো ড্র হলেই চলবে পর্তুগালের। সেটা গোলশূন্য হলেও ক্ষতি নেই।
তবে এই সময়ের সেরা দুই ফরোয়ার্ড যেখানে খেলছেন, সেখানে ম্যাচটি গোলশূন্য হওয়ার সম্ভাবনাই কম। দুই দলই জানে তাদের প্রাণভোমরা কে। এ কারণে দুই দলই আজ মাঠে নামবে প্রতিপক্ষ দলের প্রাণভোমরাটিকে কৌটো বন্দী করে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে। সুইডেন তো খোলাখুলিই বলেছে, আজ রোনালদোর জীবন তারা দুর্বিষহ করে তুলবে।
ঠেকাও রোনালদো মিশনের ভার যাঁর কাঁধে, সেই সুইড ডিফেন্ডার সেবাস্তিয়ান লারসন পরোক্ষে এমন অভিযোগ তুলেছেন, প্রথম লেগে রোনালদো আর তাঁর দল কিছু ‘অন্যায়’ ফ্রি কিকের সুবিধা পেয়েছে। এবার আর তা তারা পাবে না, ‘এই ম্যাচের দায়িত্বে থাকবেন ইংলিশ রেফারি। তাই আমরা গত ম্যাচের তুলনায় ওর ওপর বেশি করে চড়াও হব। আমি মনে করি না খুব সহজেই মাঠে পড়ে যাওয়ার কৌশলটা এবার সে খাটাতে পারবে। বেশি শরীরনির্ভর খেলা পরিচালনায় হাওয়ার্ড ওয়েব অভ্যস্ত।’
ওদিকে পর্তুগালের কোচ পাওলো বেন্তো এই বলে সতর্ক করছেন, সুইডেন যদি শুধু রোনালদোর ওপর মনোযোগ দেয়, সেটা হতে তাদের জন্য পায়ে কুড়াল মারার সমান। একইভাবে পর্তুগালও শুধু ইব্রাকে ঠেকানোর কৌশল নিয়ে মাঠে নামবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘শুধু একটা খেলোয়াড়কেই ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। আমাদের কাজটা করতে হবে সম্মিলতিভাবে। সুইডেনও যেমন সম্মিলতিভাবে রোনালদোকে আটকানোর চেষ্টা করবে। আমাদের আক্রমণের কাজটাই বেশি করে করতে হবে, এবং অবশ্যই এ ক্ষেত্রে শুধু রোনালদোর ওপর নির্ভর করলে চলবে না। ওরাও যদি রোনালদোকে বিশেষভাবে ঘেরাও করে রাখে, সেটা বাকি খেলোয়াড় এবং বাকি জায়গাগুলো থেকে গোল করার একটা সুযোগ কিন্তু তৈরি করে দেবে।’
অতীতে দেখা গেছে, চাপের মুখে রোনালদো হয় খুব ভালো খেলেন, নয়তো একেবারে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না। পর্তুগাল নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করবে আজ যেন প্রথমটাই ঘটে তাঁর বেলায়। ওদিকে সুইডেনের কোচ এরিক হামরেন দাবি করেছেন, ৩২ বছর বয়সী ইব্রার জন্য ‘চাপ’ এখন বায়বীয় একটা ব্যাপার। এটাই যে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ, সেটাও ইব্রা ভালো করেই জানেন। ফলে নিজেকে উজাড় করেই দেবেন এই স্ট্রাইকার।
আর রোনালদো? তিনি কী বলছেন? ‘পর্তুগাল খুবই সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে। এও জানি আমরা খুবই কঠিন একটা ম্যাচের মুখোমুখি। কিন্তু আমার প্রস্তুত। এই দলের খেলোয়াড়রা ব্রাজিলে যেতে মরিয়া। আর সেই চাওয়া পূরণ করতে আমরা সর্বোচ্চটুকুই দেব’—পর্তুগাল অধিনায়ক বুঝিয়ে দিয়েছেন, মরিয়া তিনিও কম নন।
পর্তুগাল-সুইডেন ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে দুইটায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি সিক্স। আজ বিশ্বকাপ ভাগ্য নির্ধারিত হবে ১৯৯৮-এর চ্যাম্পিয়ন ও ২০০৬-এর ফাইনালিস্ট ফ্রান্সেরও। সেই ম্যাচটি রাত দুটো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি সিক্স এইচডি। প্রথম ম্যাচটা ২-০ গোলে হেরে জিনেদিন জিদান, মিশেল প্লাতিনির দেশ ফ্রান্স যেন এরই মধ্যে বিদায় দেখতে পাচ্ছে!