একটা জিনিস ভাবুন তো- সাদা গরুর দুধ সাদা রঙের, আর বাদামী গরুর দুধ চকলেট রঙের হলে কতই না মজার হতো! আসলে এমনটা হয় না। কিন্তু একটা জিনিস ঠিকই হয়। গোলাপি রঙের রেশমপোকা থেকে গোলাপি রঙের রেশম উৎপাদন করা হয়! রেশমপোকা যেন নিজেরাই রঙিন তন্তু উৎপাদন করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে গিয়েই অভিনব এই পদ্ধতি খুঁজে পান। রেশম পোকাকে লাল রঙ খাওয়ানোর মাধ্যমে তারা উৎপাদন করতে সক্ষম হন গোলাপি রঙের তন্তু।CSIR-National Chemical Laboratory in India এর গবেষকেরা সাধারণ রেশমপোকা নিয়েই এই গবেষণা করেন। তাদের সাধারণ খাবার হলো তুঁত গাছের পাতা। এই পাতার ওপরে স্প্রে করে দেওয়া হয় লাল রঙ। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সাতটি ফেব্রিক ডাই ব্যবহার করা হয় এবং এর মাঝে একটি থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়। কি এই ফলাফল? সাধারণ সাদা রঙের রেশমের পরিবর্তে এই ডাই খেয়ে রেশমপোকা উৎপাদন করে গোলাপি রঙের রেশম। শুধু তাই নয়, রেশম উৎপাদন করার আগে এসব রেশমপোকার শূককীট নিজেরাই গোলাপি রঙের হয়ে যায়। এই রঙ পরিবর্তনের ফলে তাদের শারীরিক বৃদ্ধিতে কোনও তারতম্য হয় না। অবশ্য রেশম পোকার থেকে রেশম আহরণের সময়ে এরা এমনিতেই মারা যায়। সে কারণে এদের স্বাস্থ্যের ওপর কোনও প্রভাব পড়লেও মানুষের কিছু আসে যায় না। ACS Sustainable Chemistry & Engineering জার্নালে প্রকাশিত হয় এই গবেষণার তথ্য।
বিভিন্ন ধরণের ডাই ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ফলাফল পাওয়া যায়। কিছু রঙ এই পোকার শরীর থেকে রেশমে একেবারেই পরিবাহিত হয় না। অন্যগুলো রেশমপোকার শরীর এবং কোকুনে পরিবাহিত হয় বটে, কিন্তু রেশম তন্তু ছাড়ানোর সময়ে এই রঙ ধুয়ে চলে যায়। শুধুমাত্র “ডাইরেক্ট অ্যাসিড ফাস্ট রেড” নামের একটি রঙ এই রেশম তন্তুকে স্থায়ীভাবে রঙিন করতে সক্ষম হয় আর সেই রঙটি হলো একটি হালকা, মিষ্টি গোলাপি।
কি কারণে এই ধরণের গবেষণা করা হয়? রেশম তন্তুকে রঙ করতে হলে প্রচুর পরিমাণে ভালো পানির অপচয় হয়। আর এই কাজ করতে গিয়ে সেই পানির সাথে মিশে যায় প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। পানি থেকে এই দূষণ দূর করে তাকে আবার সুপেয় পানিতে রুপান্তরিত করতে গেলেও অনেক খরচ হয়। অনেক অসাধু কারখানা মালিক সেই কাজটি করেন না এবং সেই দূষিত পানিটিকেই পরিবেশে মুক্ত করে দেন যার ফলে জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ক্ষতি এড়াতে গবেষকদের এই নতুন পদ্ধতি অনেক ভালো কজে আসতে পারে। রেশম পোকাকে এভাবে রঙ করা পাতা খাওয়ানোর ফলে কোনও অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন হয় না। ফলে দূষণের পুরো ব্যাপারটাই এড়ানো যায়। এই পদ্ধতিটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী কিনা তা নিয়ে এখন গবেষণা চলছে।