গ্রাহাম বেলের টেলিফোন আবিষ্কারের পর যে কয়জন ফোন ব্যবহার করতেন তারা সবাই সবার সাথে সরাসরি তার দিয়ে কানেকটেড ছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় প্রয়োজন পড়লো সুইচিং-এর। ১৮৯৭ সালে এ।বি। স্ট্রাউজার প্রথম ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল সুইচ আবিষ্কার করলেন অনেক বেশি ব্যবহারীকে তুলনামূলকভাবে কম খরচে এবং কম জটিলতায় টেলিফোন কানেকশান দিতে। আমেরিকার মিসৌরিতে কানসাস নগরীতে প্রথম এই সুইচ স্থাপন করা হয়। এই সুইচের বিস্তারিত বিবরণ আমরা পরে জানাবো।
এরপর ১৯০৪-০৬ সালে বিজ্ঞানী ফ্লেমিং এবং লি ডি ফরেস্ট এর হাত ধরে অর্ধপরিবাহী যন্ত্র ভ্যাকুয়াম টিউব ডায়োড এবং ট্রায়োড আবিষ্কারের পর ইলেকট্রনিক সুইচের আগমন ঘটলো। এরই সাথে তারবিহীন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থারও গোড়াপত্তন হলো।
টেলিযোগাযোগের মূল কথা হলো আমাদের কথাকে বা চিঠিকে অনেক দূর পৌঁছে দেয়া যেখানে আমাদের হেঁটে পৌঁছাতে গেলে অনেক সময় লেগে যেত। এদিকে আমাদের শব্দেরও কম্পাংক কম, তাই শুধু তার পক্ষে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব হয় না।
এজন্যে টেলিযোগাযোগের মূল যে বিষয়টি সেটি হলো আমাদের কথাগুলোকে বা লেখা চিঠিটাকে (message) প্রথম প্রচলিত মাধ্যম থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল তরঙ্গ-এ রূপান্তর করা হয়। তারপর তাকে আরেকটি উচ্চতর কম্পাংকের (carrier) সাথে মিলিয়ে ট্রান্সমিটার দিয়ে দূরবর্তী স্থানে পাঠানো হয়। এ পদ্ধতিকে বলে ‘মডুলেশান’ (modulation)। তরঙ্গটি যে পথ দিয়ে ভ্রমণ করে তাকে বলে ‘চ্যানেল’ (channel)। এটি তারমাধ্যমও হতে পারে, আবার তারহীন মাধ্যমও হতে পারে। এরপর রিসিভার অ্যান্টেনার মাধ্যমে উচ্চ তরঙ্গটি গ্রহণ করে তাকে ‘ডিমডুলেশান’ (demodulation) এর মাধ্যমে বাদ দেয়া হয় এবং মূল ম্যাসেজ তরঙ্গ বা আমাদের কথাকে বা পাঠানো চিঠিটিকে পুনোরুদ্ধার করা হয়। এছাড়াও পথ দিয়ে যাবার সময়ে চ্যানেলের ভিতরে নানারকম অনাকাংখিত ব্যাপার ঘটতে পারে, বিভিন্ন রকম অপ্রত্যাশিত তরঙ্গ (noise) যুক্ত হয়ে যেতে পারে আমাদের মূল ম্যাসেজের সাথে, এতে করে আমাদের ম্যাসেজ তরঙ্গটির তথ্যের পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে, বিভিন্ন রকম ভুল হতে পারে, সেগুলোকে দূর করতে ট্রান্সমিটার পার্শ্বে আগে থেকে এক ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, যাকে বলে ‘এনকোডিং’ (Encoding)। এটা মডুলেশানের আগেই করা হয় এবং মূলত ডিজিটাল টেলিযোগাযোগে এ কাজটি করা হয়। এরই বিপরীত কাজটি করা হয় রিসিভার প্রান্তে, ‘ডিকোডিং’ (Decoding)।
আপনারা, এই টেলিযোগাযোগে মূল বিষয়টিকে তুলনা করতে পারেন আমাদের মনুষ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে। আমরা যদি দূরবর্তী কোন জায়গায় ভ্রমণ করতে যেতে চাই, পায়ে হেঁটে গেলে অনেকদিন সময় লাগে (গতি কম বিধায়) এবং আমরা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পারি (শক্তি কম বিধায়)। এখন যদি আমরা সেই জায়গায় রিকশা বা প্রাইভেট কারে বা বাসে বা জাহাজে বা প্লেনে যাই, তাহলে আমরা পরিবহন অনুযায়ী অনেক দ্রুত পৌঁছাতে পারবো, সেগুলোর গতি অবশ্যই বেশি হবে, সেসব যানবাহনের জন্য জ্বালানীর প্রয়োজন পড়বে, যেটি যত দ্রুতগতিসম্পন্ন যান, তার তত বেশি জ্বালানীর প্রয়োজন, এবং সেখানে খরচও বেশি। এই বাস্তবজীবনের উদাহরণের সাথে মেলাতে গেলে আমরা হলাম ‘ম্যাসেজ’, যানবাহন হলো ‘উচ্চ তরঙ্গ’, আমাদের যানবাহনে আরোহণ করাটা হলো ‘মডুলেশান’, আবার গন্তব্যে পৌঁছে যান থেকে নেমে যাওয়া হলো ‘ডিমডুলেশান’, আমাদের পাসপোর্ট বা টিকেট হলো এক ধরণের ‘এনকোডিং’ বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা।