মনের মানুষটি প্রতারণা করেছে? দূরে চলে গেছে? বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে? পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ এত পরিমাণে হয়েছে যে আর মুখ দেখাতে পারছেন না? চাকরী বাকরি নেই, বেকার? জীবনে এমন ভুল করেছেন, যেটা প্রকাশ হওয়ায় সমাজে আর মুখ দেখানো দায় হয়ে পড়েছে? সর্বোপরি জীবনের প্রতি প্রচণ্ড হতাশ, তাই দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে এর একমাত্র সমাধান আত্মহত্যা!! প্রিয় পাঠক একটু! এটা আমাদের কথা নয়। সমাজে বিভিন্ন স্তরে যে সকল আত্মহননের ঘটনা ঘটে তার পেছনের কারণগুলো। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হল, এই ঘটনাগুলো বেড়েই চলছে। এই লেখাটা আসলে তাদের জন্য নয় যারা না ফেরার দেশে চলে গেছে, বরং এটি আমরা যারা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছি তাদের জন্য বেশী জরুরী।
আত্মহত্যার পথ যে বেছে নেয় সে অবশ্যই মানসিক রোগী। আর দুনিয়ায় এই একটি মাত্র রোগ আছে যা আগে থেকে কখনই নির্ণয় করা যায় না। যেহুতু আমাদের সমাজে যদি একবার রাষ্ট্র হয়ে যায় যে আপনি মানসিক ডাক্তারের কাছে পরামর্শ বা চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন, তাহলে পদে পদে আপনাকে পাগল ডাক শুনতে হবে। আর এই ব্যাপারটা যে আত্মহত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার জন্য বন্দুক এর সামনে থেকে ফিরিয়ে এনে কামানের সামনে দাঁড় করানোর মত। তাহলে কি করবেন? ডাক্তার দেখাবেন না?
অবশ্যই দেখাবেন। তবে একটু গোপনীয়তা রেখে। তার আগে কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান, ভাই বোন বা প্রিয়জন আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিয়েছে। আগেই বলেছি এর কোন সঠিক উপসর্গ নেই। তবে চরিত্রগত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন-
অস্বাভাবিক ভাবে চুপ চাপ হয়ে যাওয়া
একা একা বেশী সময় কাটানোর প্রবণতা
মেজাজ অকারণে খিটখিটে
প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত কথা বলা। অকারণে হাসা
কোন প্রশ্নের জবাব জিজ্ঞাসা করলে, উত্তর না দিয়ে উদাস থাকা
বন্ধু বান্ধবীদের সাথে সম্পর্ক না রাখা বা অনেক কম রাখা।
আর আত্মহত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যক্তিটি যদি আপনি হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। এরকম একটা সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। আপনার জীবন, আপনি রাখবেন না ফেলে দিবেন সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমরা নাক গলানোর কে? তাই, আপনার ইচ্ছা হলো তাই আত্মহত্যা করে ফেলুন। তবে তার আগে
আপনার মায়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে একবার গভীরভাবে চেয়ে দেখুন। আপনি মারা যাবার পর লাশ হয়ে ঠিকই ঘুমাবেন কিন্তু আপনার মায়ের নিশ্চিন্ত স্বপ্নাতুর ঘুম সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাবে। প্রতিরাতে উনি বিছানায় যাবেন কয়েক হাজারটন ওজনের পাথর বুকে নিয়ে।
আপনার বাবার সারাদিন বাইরে কাজ করে ঘরে ফেরার মুহূর্তের সময়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনার সিদ্ধান্তের কথা একবার ভাবুন। তার নতুন জামা কাপড় হয়েছে কি না আপনি জানেন না, অথচ দিনের পর দিন আপনার মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে সব খরচ মুখ বুজে দিয়ে গেছেন উনি।
আপনার ছোট বোন থাকলে চুপি চুপি তার স্বপ্নমাখা চোখের দিকে তাকান। আপনার আত্মহত্যার কারণে আপনার বোনের ভবিষ্যৎ জীবন কতটুকু অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ভেবে দেখেছেন? তাঁর স্কুল-কলেজ, বিয়ে পদে পদে কথা শুনতে হবে।
যেহেতু আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আত্মহত্যা করবেন, তাই দিন ঠিক করে ফেলুন। তার আগে অন্তত ঘোরাঘুরির জন্য দুইদিন সময় রাখুন।
প্রথমদিন। রেললাইনের পাশে বা কোন বস্তিতে যান। ডাস্টবিন থেকে তুলে আনা খাবার নিয়ে সুন্দরমত ভাগ করে খাচ্ছে দুই থেকে দশ বারো বছরের কয়েকটি শিশু। ডাস্টবিনের খাবারতো দুরের কথা জীবনে কখনো ডাস্টবিনের দিকে পাঁচমিনিট তাকিয়ে থেকেছেন? খাবারের কষ্ট কি কখনো জানেন? পারলে ওদের সাথে একবার খেতে বসুন।
দ্বিতীয়দিন। যেহুতু আপনার মৃত্যুর পর পোস্টমরটেম রিপোর্টের জন্য লাশ সরকারী হাসপাতালে পাঠাবে, তাই, আগেই একবার হাসপাতাল ঘুড়ে আসুন। শিশু ওয়ার্ডে একবার ঢুঁ দেন। দেখতে পাবেন দুনিয়ার অস্কার বিজয়ী সব করুন সিনেমাগুলো। এক একটি শিশু জীবনের সাথে কষ্ট করছে আর তার মাথার কাছে মা বসে আছে, ডাক্তারের চিকিৎসা ফেল করলেও নিজের জীবন দেবার জন্য প্রস্তুত মা। এক কাজ করতে পারেন। একটু বার্ন ইউনিট ঘুড়ে আসতে পারেন। দুনিয়ার আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের আত্মচিৎকার শুনতে পাবেন। তারপর ভেবে দেখতে পারেন, পরকাল বলে যদি কিছু থাকে তাহলে আপনার অবস্থা কি হবে? সকল ধর্মেই “আত্মহত্যা মহাপাপ।”
http://bd24live.com/992/%E0%A6%86%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8/#.U28Gh6L9boA