আইসিসি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেটের বাজার যাচাই করে ফিউচার স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট। আগামী ছয় বছরের জন্য টেলিভিশন সম্প্রচারস্বত্ব বিক্রির আগে বিসিবিও অস্ট্রেলিয়ান এই প্রতিষ্ঠানকেই দায়িত্ব দিয়েছিল ক্রিকেটের মূল্যমান ঠিক করতে। সেটা তারা করেও দিয়েছে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, ফিউচার স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের যাচাইকৃত পথে না হেঁটে নিজেদের ক্রিকেটের দাম নিজেরাই কমিয়ে দিচ্ছে বিসিবি!
বিসিবি নতুন করে টেলিভিশন সম্প্রচারস্বত্ব বিক্রি করবে চলতি মে মাস থেকে ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের জন্য। এই সময়ে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের ৩১টি টেস্ট, ৪৩টি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা। অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠানটির পূর্বানুমান অনুযায়ী এসব ম্যাচ বিক্রি করে আয় হতে পারে ৪৯ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। অনুষ্ঠান নির্মাণব্যয়, সম্প্রচারকারীদের লভ্যাংশ এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে যার ৩০-৩৫ মিলিয়ন ডলার আসতে পারে বিসিবির ভান্ডারে। অথচ কাল সম্প্রচারস্বত্বের দরপত্রে অংশ নেওয়া চারটি কোম্পানির কারিগরি প্রস্তাব নিয়ে বোর্ড পরিচালকদের এক সভায় টেলিভিশন সম্প্রচারস্বত্বের ন্যূনতম মূল্য ঠিক হলো মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার! তা-ও বিপণন কমিটির অনেক ‘যুদ্ধের’ পর। কয়েকজন পরিচালক চেয়েছিলেন মূল্যটা ১৮ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে রাখতে।
সম্প্রচারস্বত্বের দরপত্রে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ভারগো মিডিয়া, মিডিয়া কম ও গাজী টিভি এবং ভারতের স্পোর্টি সলিউশন লিমিটেড। আজ এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর্থিক প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রের সব শর্ত পূরণ না করায় ভারগো মিডিয়াকে কালই অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।
ফিউচার স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী নিমবাসের সঙ্গে সর্বশেষ চুক্তিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিক্রি করে বিসিবি, সম্প্রচারকারী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে মোট আয় করেছে ৪৭.৯ মিলিয়ন ডলার। আগামী ছয় বছরের সম্ভাব্য আয়ের হিসাবটাও এটাকে ভিত্তি ধরেই করা। অবশ্য নিমবাসের সঙ্গে সর্বশেষ ৫৬.৮৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি থেকে নির্মাণ খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা থাকলেও বিসিবির কোষাগারে জমা পড়েছে মাত্র ১৩-১৪ মিলিয়ন ডলার। বাকি টাকা পেতে বিসিবি এখন আইনি লড়াই চালাচ্ছে।
অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল্য ক্রমেই বাড়ারই কথা। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড টেলের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল ১১.৭৫ মিলিয়ন ডলারের। নিজেদের ব্যর্থতায় পুরো টাকা আদায় করা যায়নি বটে, তবে নিমবাস-চুক্তিটাও ছিল লোভনীয় । সে ধারাবাহিকতায় এবার যেখানে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ার কথা, সেখানে দু-তিনজন বোর্ড পরিচালকের ‘বেশি দাম ধরলে শেষ পর্যন্ত না টিভিস্বত্ব বিক্রিই না হয়’ ধরনের শঙ্কাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকে।
ক্রিকেটের ‘হট কেক’ ভারতের সঙ্গেই আগামী ছয় বছরে আছে দুটি হোম সিরিজ। ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে যাদের ক্রিকেটের মূল্যমান ঠিক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই ফিউচার স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট বলছে, এই দুই সিরিজেরই প্রাক্কলিত আয় প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলারের মতো। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি দেখিয়েছে, ওয়ানডে ক্রিকেটে গত এক বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের হার (৪২ শতাংশ) প্রায় ইংল্যান্ডের (৪৫ শতাংশ) কাছাকাছি।
কিন্তু আজ যদি সত্যিই কেউ ন্যূনতম ২০ মিলিয়ন ডলার মূল্য প্রস্তাব না করে? বিসিবির বিপণন কমিটির প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ তবু আপস করতে রাজি নন, ‘আমরা সব সময়ই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মূল্য চাই। ন্যূনতম মূল্য না পেলে প্রয়োজনে এই দরপত্র বাতিল করে নতুন করে সবকিছু করা হবে। তবে সিদ্ধান্তটা নেবে বোর্ড।’