মেয়ে দেখানো এবং কিছু ঘটনা

Author Topic: মেয়ে দেখানো এবং কিছু ঘটনা  (Read 2762 times)

Offline Rozina Akter

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 887
  • Test
    • View Profile
আমার চাচাত বোন রুনা আপুকে যেদিন দেখতে আসবে সেদিন ছিল শুক্রবার। চাচা মারা গেছেন অনেক দিন। তাঁর একমাত্র মেয়ে আমাদের সাথেই থাকেন। আসলে আপু চাচাত বোন হলেও আমার আপন বোনের থেকেও বেশি। তবে ওর স্বভাবটা একটু চাপা ধরণের। আমার মত মুখের উপর কোন কথা বলে না।

যাই হোক, মেয়ে দেখার ব্যপারটা আমরা যারা মেয়ে, তারা জানি কতটা অপমানজনক। কিন্তু, দুঃখের বিষয় ছেলেদের চেয়ে আমরাই বেশি এটাকে সমর্থন দিয়ে আসছি। যেমন আমার আপুর ক্ষেত্রেই ধরুন না কেন, দূর সম্পর্কের এক ফুপা যখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসল যে ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট, মেয়েকে একটু দেখতে চায়, অমনি আমার আব্বু যতটানা উৎসাহ দেখাল আম্মু আর চাচী দ্বিগুণ উৎসাহ দেখাতে শুরু করে দিল।

কাঁচা হলুদ থেকে শুরু করে যা যা লাগে সব বাজার থেকে উনারা নিজ দায়িত্বে নিয়ে এসে আপুর গায়ে মাখানো শুরু করলেন, সেই সাথে আমারও। তাঁদের এই আয়োজন দেখে মনে হতে লাগলো, আপু কোরবানীর গরু, যাকে এই হাটে তোলা হবে, যেন ভালো দাম পায়, সে জন্য একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, আপুও দেখি ব্যপারটা রীতিমতো উপভোগ করছে। পরে বুঝেছিলাম, বেচারীর অবশ্য কিছু করার নাই। একে তো বাবা নাই, তারপর গায়ের রং শ্যমলা, ফর্সা না, যেটা আমাদের সমাজে মেয়েদের একটা বিশাল জন্মগত দোষ হিসেবে ধরা হয়। ব্যাপারটা এমন যেন,

    "মায়ের পেটে থাকতে কি করছো? স্নো-পাউডার লাগাইতে পার নাই?"

সাধারনত সব মেয়েই যখন শুনে, কোন ছেলে তাকে দেখতে আসবে বা বিয়ের প্রস্তাব আসছে, প্রথম যে অনুভূতিটা হয়, সেটা হলো ভয়। আপুর ক্ষেত্রেও তাই হলো। অবশেষে, যেদিন দেখতে আসবে সেদিন বাড়িতে সকাল থেকেই একটু অন্যরকম পরিবেশ। মনে হচ্ছে, আব্বু শুধু দেখা না বিয়ের ব্যবস্থাও করে রেখেছে, ছেলেরা রাজি থাকলে আজই ফাইনাল।

উনারা যখন আসলেন তখন আমার উপর দায়িত্ব পড়ল আপুকে নিয়ে ওনাদের সামনে যাওয়া। আমি দেখতে ঐশ্বরিয়া রাই না হলেও গায়ের রং একটু উজ্জ্বল। তাই সবাই আপুর চেয়ে আমাকে বেশি সুন্দরী বলে থাকে। সাধারনত গ্রাম বা মফস্বল শহরগুলোতে, মেয়ে দেখার ব্যপারগুলোতে একটা জিনিস খুব সাবধানে করতে হয়। সেটা হলো, যাকে দেখতে আসছে, তার চেয়ে সুন্দরী, কোন অবিবাহিতা মেয়ে যেন সেই সময়ে উপস্থিত না থাকে। তাই আমার উপরে যে দায়িত্ব পড়ল সেটা সচরাচর করে থাকে ভাবী টাইপ মেয়েরা। যেহেতু আমার ভাই আমার চেয়ে ছোটো তাই বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না। অগ্যতা দায়িত্ব আমার উপর বর্তালো।

যেহেতু, কথা বলা আমার মৌলিক অধিকার, তাই সুযোগ পেলে কথা বলতে ছাড়ি না, উচিৎ কথা হলে আরও বেশী। আর এই স্বভাবটার সাথে আত্মীয়স্বজন সবাই অল্পবিস্তর পরিচিত ছিল। তাই, যে ফুপা বিয়ের প্রস্তাব মানে ঘটকালি করছেন উনি যখন শুনলেন আমি আপুকে নিয়ে যাব তখন উনার মুখটা ডাঙায় তোলা তেলাপিয়া মাছের মতো হা হয়ে গেল। উনাকে আমার বিশেষ পছন্দ না। এর অন্যতম কারণ জগৎ সংসারে উনি মানুষের দোষ ছাড়া গুন কখনো দেখেন না। আর সেই মানুষটি যদি মেয়ে হয় তা হলে তো কোন কথাই নেই।

অবশেষে ফুপা বললেন, “যাচ্ছ যখন যাও, তবে কোন কথা বলবা না।”

আমি বললাম, “তাহলে কি বোবার মতো হাত দিয়ে ইশারা করব?”

উনার মুখ দেখে বুঝলাম, আমি ওনার মেয়ে হলে এতক্ষণে গালে ঠাস্‌ ঠাস্‌ চড় পড়ত। যেহেতু আব্বুর অর্থনৈতিক অবস্থা ওনার চেয়ে ভালো এবং উনি আব্বুর কাছ থেকে কারণে অকারণে টাকা পেয়ে থাকেন তাই আমাকে আর কিছু বললেন না। শুধু বিড়বিড় করে বললেন, “বেয়াদব”।

যাই হোক, আদব সহকারে আপুকে শাড়ি পড়িয়ে যখন ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলাম, দেখি ড্রয়িং রুমে আব্বু আর ফুপা ছাড়াও আরো তিনজোড়া চোখ আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ছেলে, ছেলের মামা এবং ছেলের এক বন্ধু। তিনজনকে দেখেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। জানিনা, কারণ কি।

সব মেজাজ খারাপই যে খারাপ না সেটা সেদিন হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম। আমরা গিয়ে বসার সাথে সাথে ছেলের মামা- যার মুখে পান, ভাবসাব বাংলা সিনেমার মোড়লের চামচার মত, আপুকে একের পর এক প্রশ্ন করা শুরু করলো। মাথার চুল দেখা অতঃপর, ওজুর ফরজ থেকে শুরু করে, চার কালেমাসহ নবী রাসুলের নাম কিছুই বাদ নাই। উনি একে একে প্রশ্ন করছেন আর আমার মেজাজ খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। এক পর্যায়ে মনে হলো বলি, “আপনি এক কাজ করেন, কোন মহিলা মাদ্রাসার একটা মেয়ের সাথে আপনার ভাগ্নের বিয়ে দেন”। আব্বুর চোখের ইশারায় সে যাত্রায় বিরতি দিলাম।

ছেলের বন্ধু নিজেরে পণ্ডিত জাহির করার জন্য যখন জানলো যে আপু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়ছে, প্রশ্ন করলেন-

    "আচ্ছা ট্র্যান্সলেশান করুন তো- মান(এক ধরনের কচু) গাছের গোঁড়ায় ছাই দিলে মান গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়।”

ওনার কথা শুনে মনে হল আমি জিজ্ঞেস করি, আপনি করেন তো - "আমাকে মানুষের মত দেখা গেলেও আমি আসলে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা।”

অবশেষে, হাবিজাবি প্রশ্ন শেষে যখন জিজ্ঞাসা করলো, “বলতো মা, চারজন খাওয়ার জন্য কয় সের চালের ভাত রান্না করা লাগে?”

আমি আর চুপ করে থাকতে না পেরে বললাম,

    “আপনার মুখ যেভাবে নড়ছে তাতে, আপনাদের জন্য চার সের চাল লাগবে আর অন্যদের জন্য কম লাগবে”।

বুঝলাম কথায় কাজ হয়েছে। গাভী গোবর ছাড়ার পর লেজের নিচের অংশ যে রকম মোচড় মারে সে রকম ওনার গালে ও কপালে ভাঁজ পড়ল। তবে মুখে তেলতেলে ভাব অনেক কষ্টে ফিরিয়ে এনে আর কোন প্রশ্ন করলেন না। আমরাও চলে আসলাম।

রাতে আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করতেই হোক আর না হোক, খেলেন মাশাল্লাহ খারাপ না। সে যাকগে, রিজিকের মালিক আল্লাহ্‌। যাবার সময় বলে গেলেন দুইদিন পরে জানাবেন।

বুঝলাম মেয়ে পছন্দ হয় নাই। সব দোষ এসে পড়ল আমার উপর। এরকম একটা সোনার টুকরা ছেলে হাত ছাড়া হয়ে গেল, এজন্য ফুপার আফসোসের সীমা নাই। আম্মুকে বলে, “ভাবী, সিমার মুখটা একটু দেখবেন। এরকম বে-ফাঁস কথাবার্তা যেন না বলে। ওরও তো বিয়ের বয়স হয়েছে”।

ওনার কথা শুনে মনে হলো বলি, “হ, বিয়ার বয়স না আমার তো এতদিনে শাশুড়ি হওয়া উচিৎ ছিল। একবছর হলো এস.এস.সি. পাশ করছি, এতদিনে দু চারটা ছেলে মেয়ের মা ডাক শুনি নাই, তা কেমন কথা”।

পরদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে খবর পেলাম, ছেলের মেয়ে পছন্দ হয়েছে, তবে আপু না আমি। শুনে মনে হল, ওই তিনটারে ধরে পুকুরের পানিতে চুবাই আর পানিতে আফ্রিকার মাগুর মাছ ছেড়ে দেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়- যে ফুপা আমাকে আগেরদিন বলে বেয়াদব, উনিই আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখে বলে- “মা ভালো আছ”। আব্বুকে বুঝায়- “দেখেন ভাই, এরকম ছেলে আর পাবেন না। আর রুনা তো সিমার আপন বোন না, চাচাতো, তাই ওর বিয়ে পরে হলেও সমস্যা নাই”।

আব্বু বলে-“ তোমার কি বুদ্ধি শুদ্ধি কমে গেল নাকি? সিমার বয়স কত?”

ফুপার উত্তর, “ কি বলেন? সামনের বছর ইন্টার দিবে। আর আপনি চাইলে এক কাম করতে পারেন, এখন বিয়ে পড়াইয়া রাখলেন, ওর ইন্টার পরীক্ষার পর তুইলা দিলেন।”

আব্বু মনে হয় ফুপার যুক্তি মেনে নিয়েছিল। তবে আমাকে যখন একথা বলতে আসল, শুধু আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলাম। তারপর আর কেউ কথা বাড়ানোর সাহস পায় নাই।

পরে কোরবানীর ঈদের সময় সবাই যখন আমাদের বাড়ি মানে দাদা বাড়িতে বেড়াতে আসলো, তখন ফুপার বাসায় কাজ করে, আমাদের এক আত্নিয় কাজের মেয়ের কাছ থেকে আসল কাহিনী শুনি।

আমার দাদা ছিলেন বেশ ভালই ধনী এবং গ্রামে তার জায়গা জমি ছিল অনেক। উনি মারা যাবার পর উনার সম্পত্তি আমার আব্বু আর চাচা পায়। আমার আব্বুরা দুই ভাই। নতুন কোন সম্পত্তি তেমন করতে না পারলেও দাদার কোন জমি খোয়া দেন নাই। যে ছেলের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে কোন কালেই ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না। শহরে কি যেন একটা চাকরী করে। ছেলের মামা ফুপার বিশেষ বন্ধু। যেহেতু আমার দাদার অনেক সম্পত্তি, তাই আমরা দুই বোনের যে কোন একজনকে বিয়ে করলেই অনেক জমি পাওয়া যাবে এবং ছেলের গার্জিয়ান বলতে তাঁর ওই মামা ছাড়া আর কেউ নাই। তাই ওই মামাও যে সম্পত্তির ভাগ পাবে সেটা নিশ্চিত ছিল। ছেলের মামা ফুপার সাথে একটা চুক্তিতে আসে যে ফুপাও কিছু জমি বা তার সমপরিমান টাকা পাবে।

ছেলেকে একদিক দিয়ে ধন্যবাদ যে আমাকে পছন্দ করেছিল, যার জন্য বিয়ে হয় নাই। না হলে আপুকে পছন্দ করলে তো খবরই ছিল।

উপরওয়ালা সবার জন্য বোধহয় জোড়া ঠিক করে রাখেন। আপুর পরের বছর বিয়ে হলো। দুলাভাই ডাক্তার। এখন আমার একটা ভাগ্নি নিয়ে সুখের সংসার ওনাদের।

Urboshi.com
Rozina Akter
Assistant Professor
Department Of Business Administration

Offline ABM Nazmul Islam

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 386
  • Test
    • View Profile
Re: মেয়ে দেখানো এবং কিছু ঘটনা
« Reply #1 on: June 11, 2014, 06:50:01 PM »
very good story
ABM Nazmul Islam

Lecturer
Dept. of Natural Science
Daffodil Int. University, Dhaka, Bangladesh

Offline Rozina Akter

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 887
  • Test
    • View Profile
Re: মেয়ে দেখানো এবং কিছু ঘটনা
« Reply #2 on: July 15, 2014, 03:48:00 PM »
Thank you :)
Rozina Akter
Assistant Professor
Department Of Business Administration