মানুষের আজন্ম স্বপ্নের একটি হচ্ছে ডানা লাগিয়ে আকাশে ওড়া। কিন্তু তার হাত দুটি মোটেও ডানায় রূপান্তর করা কিংবা ডানার কাজ চালানোর উপযোগী নয়। তাই শূন্যে ভেসে থাকাটা অলৌকিক ক্ষমতার পর্যায়েই পড়ে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবেও এটা সম্ভব। কোনো রকম ছলচাতুরীর আশ্রয় না নিয়ে প্রযুক্তি ও শিল্পের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে চীনের হোংনান প্রদেশে তৈরি করা হয়েছে অদ্ভুত এক অ্যাম্ফিথিয়েটার। আর সাংসিয়াং পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শালিং ফ্লাইং মঙ্কস থিয়েটারে প্রায়ই বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাওয়ায় ভেসে থাকতে দেখা যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন কমলা রঙের কোনো বস্তু ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে হাওয়ায় ভেসে থাকার এই কৃতিত্ব তাঁদের নয়। প্রযুক্তির কল্যাণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। আকাশে ভেসে থাকার জন্য কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন নেই। প্রশিক্ষকের কথা মেনে চললেই এখানে ভেসে থাকা যায়। ভেসে থাকার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে এক ঘণ্টা।
এই অ্যাম্ফিথিয়েটারটির মুক্তমঞ্চের ঠিক নিচেই আছে একটি ইঞ্জিন রুম। অ্যাম্ফিথিয়েটারটি এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে করে ইঞ্জিন রুম থেকে বিশেষ সুড়ঙ্গ বা উইন্ড টানেল দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসতে পারে। সুড়ঙ্গ দিয়ে বাতাস সোজা ওপরের দিকে উঠে যায়। আর এই বাতাসের কারণেই মঞ্চে ভেসে থাকেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। মুক্তমঞ্চের সামনে রয়েছে ২৩০টি আসন। শালিংয়ের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রতি সপ্তাহে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন।
নতুন প্রযুক্তির এই অ্যাম্ফিথিয়েটারটি বানিয়েছেন লাটভিয়ান স্থপতি অস্ট্রিস মাইলটিস। দালানটিতে সংসান পাহাড়ের প্রতিকৃতি ফুটে উঠেছে। এর সঙ্গে গাছের আদলে টাওয়ারের মতো একটি অবকাঠামোও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
সাংসিয়াং পাহাড়ের কোলেই আছে শালিং মন্দির। যার নাম উঠেছে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায়। ধারণা করা হয়, এখানেই পত্তন ঘটেছিল বৌদ্ধ ধর্মের জেন মতবাদ ও আত্মরক্ষার চমকপ্রদ কৌশল কুং ফুর। আর বৌদ্ধ ধর্মের জেন মতবাদ ও কুং ফুর ইতিহাস শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তোলা এবং মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্যই এই অ্যাম্ফিথিয়েটার বানানো হয়েছে।
বলা হয়, একসময় শালিংয়ের কোনো কোনো ভিক্ষু শূন্যে ভেসে থাকার কৌশল রপ্ত করেছিলেন। সুখবর হচ্ছে, এখন থেকে এখন বাতাসে শুধু বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নয়, সাধারণ জনতাও ভেসে থাকার সুযোগ পাবেন।
লিখেছেনঃ আনিকা জীনাত।http://www.kalerkantho.com/feature/mogoj-dholai+/2017/04/23/489670