মাত্র তিন বছর বয়সেই শিশুরা কোনটা সুন্দর আর কোনটা সুন্দর নয়, তা বুঝতে শিখে ফেলে। শিশুরা যে আদুরে চেহারার পুতুল ও বাচ্চা প্রাণীগুলোকে বেশি ভালোবাসে, তার কারণ সম্ভবত এটাই।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা বয়স্ক কুকুর ও বিড়ালের চেয়ে কুকুরছানা বা বিড়ালছানাকে বেশি সুন্দর হিসেবে দেখে থাকে। এমনকি, অন্য কোনো শিশুকেও একজন বয়স্ক মানুষের চেয়ে তারা সুন্দর মনে করে। এটা তাদের ভেতরে চলে আসে স্কুলে যাওয়া শুরু করার অনেক আগেই। যুক্তরাজ্যের একদল মনোগবেষক গবেষণাটি চালিয়েছে। গবেষণা নিবন্ধটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী ফ্রন্টিয়ারস ইন সাইকোলজিতে।
শিশুদের এই সুন্দর-অসুন্দর বোঝার ক্ষমতাকে ‘বেবি স্কিমা’ আখ্যায়িত করেছেন গবেষকেরা। শিশুর এই ক্ষমতার কারণেই তার প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক লোকজনের মধ্যে যত্নশীল মানসিকতা তৈরি হয়।
আগের গবেষণাগুলোতে এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, বয়স্ক ব্যক্তিরা শিশুসুলভ আচরণগুলোর প্রতি দুর্বল। এ কারণে তাঁদের মধ্যে শিশুদের প্রতি স্নেহময় আচরণ জেগে ওঠে এবং আগ্রাসী মনোভাব দমে যায়। তবে কিছু বিষয় এত দিন অজনা ছিল। যেমন, বেড়ে ওঠার কোন পর্যায়ে একটা মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম এই অনুভূতি জাগ্রত হয় বা মানুষ-প্রাণী ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে এটা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?
নতুন গবেষণাটিতে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিঙ্কনের মনোবিজ্ঞানী মার্তা বোরগি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা এই “বেবি স্কিমা” প্রভাব প্রত্যক্ষ করে থাকেন। তাঁরা অধিকতর শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্যগুলোকে অনুভব করতে পারেন। তবে কোনো কিছু দেখেই শিশুর পছন্দ করে নেওয়ার এই বৈশিষ্ট্যগুলো যে বেড়ে ওঠার একেবারে শুরুর দিকেই আত্মপ্রকাশ করে, সে বিষয়ে আমাদের গবেষণার ফল প্রথমবারের মতো সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিল।’
গবেষকেরা দুটি পরীক্ষা চালান। এসব পরীক্ষায় তিন থেকে ছয় বছর বয়সী শিশু এবং মানুষ, কুকুর ও বিড়ালের ছবি ব্যবহার করা হয়।
প্রথম পরীক্ষায় তিন থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের মানুষ, কুকুর ও বিড়ালের ছবি দেখতে দেওয়া হয়। শিশুদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ছবিগুলো তাদের কাছে কেমন লেগেছে। দ্বিতীয় পরীক্ষায় শিশুদের চোখের গতিবিধির ওপর নজর রেখে, তাদের অনুভূতি ধরার চেষ্টা করা হয়।
ছবিগুলোতে শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। একই ছবি কিছুটা কম সুন্দর করতে তাতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়।
এই গবেষণা পোষা প্রাণীগুলোকে নিয়ে ঝুঁকি (যেমন, কুকুরের কামড়) কমানোর গবেষণাগুলোকে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষণাটির তত্ত্বাবধান করেন ইউনিভার্সিটি অব লিঙ্কনের অধ্যাপক কেস্টিন মেইন্টিস। তিনি বলেন, ‘আমরা এটাও দেখতে পেয়েছি যে শিশুদের মধ্যে কুকুর ও কুকুরছানার প্রতি প্রবল আকর্ষণ রয়েছে। এই আকর্ষণ শিশুর যে কুকুরের আচরণ শনাক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে, সেটাকে দুর্বল করে দেয় কি না, তা আমরা এখন এটা জানার চেষ্টা করছি।’
সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের এই গবেষণা নতুন নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে, যেগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো যাবে।
তথ্যসূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট।