আমাদের দেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি এখন ছয় মাস। কর্মজীবী নারীদের তাই গর্ভাবস্থায় বেশ কিছুদিন অফিস করতেই হয়। এ সময়কার নানা শারীরিক সমস্যা, অস্বস্তিকর ঝামেলা মোকাবিলা করে কাজ চালিয়ে যাওয়াটা অনেকেই বেশ কঠিন মনে করেন। তবে সচেতনতা আর সাবধানতা থাকলে তা অসম্ভব নয়। আর এ জন্য হবু মায়ের প্রতি চাই সহকর্মীদের সহযোগিতাও।
ফারজানা ফিরোজ একটি বেসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপক পদে আছেন। গর্ভাবস্থায়ও কাজ করেছেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। বিশেষ সেই সময়টিতে নিজের কাজের ক্ষেত্রে পেয়েছেন কিছু আলাদা সুবিধা। ‘সেই সময় একবার আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি, চিকিৎসকের পরামর্শমতো পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়েছিল বেশ কয়েক দিন। তখন অফিসে ছুটির ব্যাপারে কোনো সমস্যা তো হয়ইনি, বরং বলা হয়েছিল যত দিন প্রয়োজন, তত দিনই বিশ্রাম নিতে পারব।’ বলছিলেন তিনি।
শুধু তা-ই নয়, কোনো রকম যেন অস্বস্তি না হয়, সেজন্য অফিসে তাঁর জন্য একটি আরামদায়ক স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁর বসার সেই স্থানটিকে বেশ খানিকটা বিস্তৃত করে দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে সেখানেই বিশ্রাম নিতে পারতেন। তাঁর অফিসে কেউ কখনো কাজের টেবিলে খাওয়াদাওয়া করেন না, তবে সেই সময়টাতে তাঁকে খানিকক্ষণ পরপরই খাবার খেতে হতো বলে কাজের টেবিলেই সারতেন তা, এতে অফিসের কেউ কিছু মনে করতেন না। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হতো ফারজানার। অফিসে আবার লিফটও নেই। তাই যেসব মিটিংয়ে তাঁকে যোগ দিতে হতো, সেগুলোর আয়োজন হতো তিনি যে ফ্লোরে কাজ করতেন, সেখানেই। সহকর্মীরাও সহযোগিতা করতেন সব সময়। গর্ভকালে ফারজানার মতো সুবিধা সবাই পান কি? আর অফিসেরই বা একজন হবু মায়ের প্রতি কি দায়িত্ব আছে? এ প্রসঙ্গে জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী পরিচালক মাসুমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কাজের পরিবেশ অনেক ভালো। আর গর্ভবতী মায়ের জন্য কিছু বিষয় প্রত্যেকেরই বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।’ তিনি জানালেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বছরের যেকোনো সময় নৈমিত্তিক ছুটি হিসেবে ২০ দিন ছুটি নিতে পারেন যে কেউ। গর্ভবতী নারী তাঁর প্রয়োজনমতো এই ছুটি কাজে লাগাতে পারেন। আর মাতৃত্বকালীন ছয় মাসের ছুটি তো রয়েছেই। এ ছাড়া অর্জিত ছুটিও নেওয়া যায় বছরে ৩৩ দিন হিসেবে। আর চিকিৎসাজনিত ছুটি নিলেও অর্ধেক বেতন পাওয়া যায়। আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই গর্ভবতী নারীর জন্য প্রত্যেকের সহানুভূতি থাকা প্রয়োজন, যাতে তিনি কাজের পরিবেশে গিয়ে স্বস্তি পান।
কর্মজীবী নারীর জন্য গর্ভকালীন সতর্কতার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অবস বিভাগের অধ্যাপক সালমা রউফ। জেনে নিন তাঁর পরামর্শ—
গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে খুব বেশি বমি হতে পারে। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা বেশি হয়। তাই রাতে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। আর সকালে দাঁত ব্রাশ করতে হবে ঘুম ভাঙার কিছুক্ষণ পরে। বিছানা ছাড়ার আগে টোস্ট বিস্কুট বা কোনো হালকা খাবার খেতে পারেন।
শুকনো খাবার খেলে বমি হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। তাই টোস্ট বিস্কুট, মুড়ি বা এ ধরনের খাবার খেতে পারেন।
খাওয়ার ঠিক পরপরই পানি পান করবেন না। দুইবার খাবার খাওয়ার মাঝে পানি পান করুন। তবে এসব সতর্কতা সত্ত্বেও বমি হতে পারে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আর অফিসে বারবার বমি হলে সহকর্মীদেরও এ ব্যাপারে সহানুভূতি থাকতে হবে। একটি মেয়ে বারবার ওয়াশরুমে যাচ্ছে, এটি নিয়ে বিরক্ত হওয়া যাবে না।
পুষ্টিকর ও সহজে পরিপাকযোগ্য খাবার খেতে হবে।
প্রচুর পানি পান করতে হবে অফিসে গিয়েও।
গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে বারবার প্রস্রাব লাগতে পারে। অফিসে বারবার বাথরুমে যেতে হলেও অস্বস্তি করবেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় প্রস্রাব না করে থাকলে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে।
ভারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে প্রথম তিন মাস। ভারী বস্তু তোলা ও প্রয়োজন ছাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওঠাও ঠিক নয়।
যাঁদের দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়, তাঁদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিছুক্ষণের জন্য হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল করা ঠিক নয়। যানবাহনে উঠতে হলে এটিও খেয়াল রাখতে হবে।
গর্ভকালীন সমস্যাগুলোতে মনের জোর হারালে চলবে না। বুঝতে হবে, সমস্যাগুলো সাময়িক। তবে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে।
রাফিয়া আলম
সূত্র: প্রথমআলো