দুঃসময় পাড়ি দিতে
দুঃসময় যাচ্ছে? জীবনে যখন দুঃসময় আসে তখন সবকিছুই যেন কঠিন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কঠিন এ সময়ে ইতিবাচক থাকা চাই। দুঃসময়ে ইতিবাচক থাকতে যে পরামর্শগুলো কাজে লাগতে পারে তা নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
চাই ইতিবাচক মানুষের সাহচর্যদুঃসময়ে আপনার পাশে ইতিবাচক মানুষ থাকা প্রয়োজন। ইতিবাচক মানুষের সংস্পর্শে থাকলে তাঁরা আপনার কঠিন সময় পাড়ি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নেতিবাচক কোনো বিষয় নিয়ে যখন ভেঙে পড়বেন তখনই এই মানুষগুলো আপনার পাশে ইতিবাচক আশা নিয়ে দাঁড়াবে। দুঃসময়ে নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে চলুন। আপনার জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলতে তাঁরা, মনের স্পৃহা নষ্ট করে দেবে। নিজেকে অর্থহীন করে তুলবে এই নেতিবাচক মানুষেরা। অন্যদিকে ইতিবাচক মানুষের সংস্পর্শে জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর দিকেই আপনার বেশি নজর পড়বে, নতুন আশা খুঁজে পাবেন, নতুন সম্ভাবনা দেখবেন।
যা নেই তা নিয়ে বিলাপ নয়এ সময় নিজের যা কিছু আছে তা আনন্দচিত্তে উপভোগ করুন, মনে রাখবেন যা নেই তা নিয়ে বিলাপ করা সহজ। যা নেই তা নিয়ে ভাবার চেয়ে যা আছে তা নিয়েই বেশি ভাবুন। দৃষ্টিভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তন আনুন। আমরা কঠিন সময় যখন পার করি তখন অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ থাকা, চাকরিতে বহাল থাকা এবং যাঁরা দুঃখে আনন্দে পাশে থাকে এ এমন প্রিয় মানুষ বা বিষয়কে মূল্যায়ন করি না। এই বিষয়গুলোকে আশীর্বাদ মনে করুন।
কৃতজ্ঞ থাকুনকৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রশিক্ষণ নিন। প্রিয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। যে বিষয়গুলোর জন্য আপনি ভালো সময় কাটাতে পারেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
অলসতা নয়একেবারে শুয়ে বসে অলস সময় কাটাবেন না। হেঁটে চলে বেড়ান। কোথাও ঘুরে আসুন। ব্যায়াম করুন। হালকা ব্যায়াম করলে শরীরে এনডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা মন ভালো করে দিতে পারে। ব্যায়াম করলে মানসিক প্রশান্তিও মিলতে পারে। বাগান বা পার্ক থেকে একটু হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন। মন ভালো করে দেওয়ার জন্য প্রকৃতির নিজস্ব ক্ষমতা আছে। নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখুন।
বাজার করতে পারেনকেনাকাটা করতে পারেন। ফোনে কোনো কিছু অর্ডার করার চেয়ে আশেপাশের কোনো মুদি দোকানে যান বা একটু হেঁটে চলে বাজার করুন। মন ভালো হতে পারে।
ধ্যান করতে পারেনসময় সুযোগ পেলে একটু-আধটু মেডিটেশন করে নিতে পারেন। জীবনের কঠিন সময় যখন যাচ্ছে তখন একটু মেডিটেশন বা ধ্যান করলে ইতিবাচক ফল পেতে পারেন।
কী করবেন তার তালিকা তৈরি করুনপ্রতিদিন কী কী করতে চান, প্রতি মাসে কী লক্ষ্য অর্জন করতে চান বা কী কাজ করতে চান, বছর শেষে কী করতে চান তার তালিকা করে লিখে রাখুন। মনের মধ্যে সেই ছবিটা আঁঁকুন আর সেই লক্ষ্য অর্জনে কতটা এগোলেন তা ভেবে দেখুন।
অন্যদের দেখুননিজের দুঃসময়ের চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে মনটাকে অন্যদিকে যেতে পারেন। অন্যদের সাহায্য করুন। মানুষের পাশে দাঁড়ান। মন ভালো করা ও আত্ম উদ্যম বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো পন্থা হচ্ছে নিজের ওপর থেকে ফোকাস সরিয়ে অন্যের ওপর না নিবদ্ধ করা। প্রতিদিন অন্যের উপকারে তত্ক্ষণাত্ ফলে আশা বাদ দিয়ে অন্তত পাঁচটি কাজ করুন। মনে রাখুন, যা আপনি দেবেন তা ফেরতও পাবেন।
ভাষা ঠিক রাখুননেতিবাচক ভাষা ব্যবহারে এবং নেতিবাচক বার্তা বিনিময়েও সতর্ক থাকুন। মন মেজাজ ঠিক না থাকলেও কারও ওপর চটে খারাপ ভাষা ব্যবহার করবেন না। কর্মস্থল বা ব্যক্তিগত জীবনে আপনার ভাষা প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সবার সঙ্গে ইতিবাচক থাকুন।
নিজের আদর্শকে জানুননিজেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় কখন দেখেছেন সে অবস্থার চিত্র মনে আঁঁকুন। নিজের এই আদর্শের জায়গায় আবার আপনাকে যেতে হলে কী কী করতে হবে তা ঠিক করে নিন এবং কাজ শুরু করুন। দেখবেন দুঃসময় পেছনে ফেলে তরতর করে এগিয়ে গেছেন।
নিজের সৃজনশীলতা দেখানআপনি হয়তো ছবি আঁঁকতে পারেন, কবিতা লিখতে পারেন কিংবা পারেন কোনো সৃজনশীল কাজ করতে। এই প্রতিভা আপনার দীর্ঘদিন অব্যবহূত হয়ে ছিল। দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে সৃজনশীল কাজগুলো করতে পারেন। এতে মন ভালো ও ইতিবাচক হবে।
ব্যর্থতার ভয় দূর করুনমনে রাখবেন ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’। মনের বাঘে আপনাকে যেন শেষ করে না দেয়। ব্যর্থতার ভয়কে জয় করুন। মনে রাখবেন, ব্যর্থ হওয়ার ভয় পেলে সামনে এগোতে পারবেন না। জীবনে ব্যর্থতা ছাড়া সামনে এগোনো যায় না। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন। কেন ব্যর্থ হচ্ছেন তা খুঁজে দেখুন এবং সামনে এগিয়ে যান। সফল হবেন।
বর্তমান নিয়ে ভাবুনঅতীতের বেদনা কিংবা ভবিষ্যতের দুর্ভাবনা আপনার মাথায় যেন না ঢুকতে পারে। বর্তমান নিয়ে খুশি থাকুন। বর্তমান জীবনের দিকে ইতিবাচকভাবে তাকান এবং কর্মোদ্যমী হন। অন্যদের সঙ্গে জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করুন। হাসুন।
নিজেকে রিচার্জ করুনআপনার যদি জীবন-স্পৃহা ঠিক না থাকে ইতিবাচক হবেন কি করে? নিজেকে রিচার্জ করুন। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট কোথাও একটু নিরিবিলি বসুন ফোন, ল্যাপটপ, চিন্তা-ভাবনা বন্ধ করে। চেয়ারে কিংবা কোথাও বসে শরীরটাকে শিথিল করে একটু চোখ মেলে চারপাশটাকে দেখুন। নিজেকে এভাবে রিচার্জ করে নিতে পারেন।
সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া