মঙ্গল গ্রহ থেকে ভূপৃষ্ঠে পতিত নাখলা নামের উল্কাপিণ্ডের মধ্যে লৌহসমৃদ্ধ অতিক্ষুদ্র স্বচ্ছ কাদামাটির উপাদানে গঠিত ডিম্বাকৃতি একটি কাঠামোর সন্ধান পেয়েছেন গবেষকেরা। এতে বিভিন্ন রকমের খনিজ এবং খনির গভীরে হিমায়িত উপাদানের চিহ্ন রয়েছে। হয়তো সেই উপাদানগুলো গলে গিয়ে মঙ্গলের পৃষ্ঠতল ও কিছুটা নিচের নানা রকম তরলের সঙ্গে মিশেছিল।
নতুন ওই কাঠামোর উৎস কী হতে পারে, তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে এটির গঠন সম্পর্কে একটি অনুকল্প দাঁড় করিয়েছেন। এ-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ অ্যাস্ট্রোবায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটি লিখেছেন গ্রিসের ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব অ্যাথেন্সের এলিয়াস চাৎজিথিওদোরিদিস এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের সারা হেই ও ইয়ান লিওন। তাঁরা এক্স-রে, ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র ও বর্ণালিবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করে সেই ডিম্বাকৃতি কাঠামোটি বিশ্লেষণ করেছেন। এটি বিভিন্ন জৈব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল—এমনটা তাঁরাও বিশ্বাস করেন না। তবে তাঁদের অনুমান, মঙ্গলপৃষ্ঠে জীবনধারণের উপযোগী পরিবেশ থাকতেও পারে। কারণ, উল্কাপিণ্ডে প্রাপ্ত ডিম্বাকৃতি কাঠামো থেকে সে রকম ইঙ্গিত কিছুটা হলেও পাওয়া যাচ্ছে।
অ্যাস্ট্রোবায়োলজির প্রধান সম্পাদক ও প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির প্রধান বিজ্ঞানী শেরি এল ক্যাডি বলেন, পাথুরে কাঠামোটি থেকে প্রাণের চিহ্নসংবলিত কোনো উপাদান পাওয়া যায় কি না, তা বিভিন্নভাবে যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ জন্য নানা রকমের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের গুরুত্ব সম্পর্কে নিবন্ধটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লেখকেরা যদিও সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারেননি যে ডিম্বাকার কাঠামোটি কোন ধরনের প্রাণের চিহ্ন বহন করে। তাঁদের গবেষণার কৌশল থেকে মঙ্গলপৃষ্ঠে প্রাণের উপস্থিতির ইঙ্গিত সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য মিলেছে।
মঙ্গল গ্রহ নিয়ে মানুষের কৌতূহল অপরিসীম। বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও একদিন গ্রহটিতে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। পৃথিবী থেকে অনেকটা লাল দেখানোর কারণে মঙ্গল গ্রহকে অনেকে ‘লাল গ্রহ’ বলে থাকেন। সেখানেও পৃথিবীর মতো পৃষ্ঠতল রয়েছে। আর আছে অতি ক্ষীণ বায়ুমণ্ডল। মঙ্গলপৃষ্ঠে চাঁদের মতো অসংখ্য খাদ, আর পৃথিবীর মতো আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মঙ্গলের ঘূর্ণনকাল এবং ঋতু পরিবর্তনও অনেকটা পৃথিবীর মতো। গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব কখনো ছিল কি না বা সেখানে জীবনধারণ আদৌ কখনো সম্ভব কি না, যাচাই করে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে বহু আগে থেকেই। বর্তমান গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে লাল গ্রহে বসবাস অথবা প্রাণের বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা নির্ভর করছে মূলত সেখানকার পৃষ্ঠতলে পানির অস্তিত্বের ওপর। মঙ্গলে যে একসময় পানিপ্রবাহ ছিল বলে বিভিন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইউরেকা অ্যালার্ট।