প্রাণীদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায় আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন গবেষকেরা। তাঁরা প্রাণীদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাইমাস ‘তৈরি’ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। সেটি আবার একেবারে ঠিকঠাক কাজও করছে।
স্কটল্যান্ডের একদল গবেষক ইঁদুরের দেহে কিছু কোষ প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে এ সফলতা পেয়েছেন। তাঁদের গবেষণার ফল বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার সেল বায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণা মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতো চিকিৎসার একটি বিকল্প পথ দেখাতে পারে।
প্রাণীদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাইমাস থাকে হৃৎপিণ্ডের কাছাকাছি স্থানে। থাইমাস টি-সেল তৈরি করে থাকে। এই টি-সেলই প্রাণীদেহকে রোগের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে কাজ করে।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিনের বিজ্ঞানীরা এ গবেষণা চালিয়েছেন। প্রথমে তাঁরা ইঁদুরের ভ্রূণ থেকে পাওয়া কোষ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এসব কোষ জিনগতভাবে পরিবর্তন করা হয়। এর ফলে সেগুলো এমন একধরনের কোষে রূপান্তরিত হতে শুরু করে, যেটি থাইমাসের মধ্যে পাওয়া যায়। রূপান্তরিত ওই কোষগুলো অন্যান্য সহায়ক কোষের সঙ্গে মিশিয়ে ইঁদুরের দেহে স্থাপন করা হয়। ইঁদুরের দেহে স্থাপন করার পর মিশ্রিত ওই কোষগুলো থেকে পাওয়া যায় সক্রিয় থাইমাস।
চলতি গবেষণার সময় থাইমাসটি একেবারে প্রাকৃতিক থাইমাসের মতোই কাজ করেছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। গঠনগত দিক দিয়ে এতে কর্টেক্স ও মডুলা রয়েছে, যা থাইমাসের প্রধান দুটি অংশ। আবার সেটি টি-সেল তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে।.
গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য ক্লারা ব্লাকবার্নের মতে, এই গবেষণায় সফলতা আসার বিষয়টি বুঝতে পারার মুহূর্তটিই ছিল তাঁদের কাছে অন্য রকম। তিনি বলেন, ‘আমরা জিনগতভাবে পরিবর্তিত কোষ থেকে একেবারে সোজাসুজি পথে যে অঙ্গটি পেয়েছি, সেটি পূর্ণাঙ্গভাবে কর্মক্ষম ও সুগঠিত। যখন বিষয়টি বুঝতে পারলাম যে আমরা সত্যিই এটি করতে পেরেছি, সেটি আমাদের জন্য ছিল বিরাট একটি চমক।’ তিনি আরও বলেন, বিষয়টি তাঁদের কাছে খুবই আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি বলে মনে হয়েছে, কারণ এটি রিজেনারেটিভ মেডিসিনের জন্য বড় সুখবর বয়ে আনতে পারে।
বিশেষ করে যাঁদের বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে এবং যেসব শিশু অকার্যকর থাইমাস নিয়ে জন্মায়, তাঁদের চিকিৎসায় নতুন গবেষণা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, এর ফলে অন্যের দেহ থেকে পুরো অঙ্গ সংগ্রহ করে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা আর লাগবে না। তবে এ পদ্ধতি মানবদেহে ব্যবহারের উপযোগী করার আগে এখনো যে অনেক পথ হাঁটতে হবে, তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই পদ্ধতিতে থাইমাস পেতে ভ্রূণ ব্যবহৃত হয়। তার মানে, নতুন থাইমাসে এমন টিস্যু না-ও হতে পারে, যেটি রোগীর সঙ্গে মিলে যাবে। পাশাপাশি গবেষকদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, প্রতিস্থাপিত কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির দরুন যেন ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি না হয়। এসব বাধা দূর করতে বেশি বেশি গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: বিবিসি