পার্কে পরস্পরের হাতে হাত রেখে বসে আছে মুন আর স্টার। স্টারের আসল নাম হচ্ছে তারা মিয়া। কিন্তু 'তারা মিয়া'র মতো ক্ষেত নাম নিয়ে মুনের মতো স্মার্ট আর অভিজাত ঘরের মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা দুস্কর হয়ে যাবে বলেই তারা মিয়া হয়ে গেছে 'স্টার'। তারা মিয়ার যুক্তি হচ্ছে- তারা ইংরেজি যেহেতু স্টার, অতএব নিজের নাম পরিবর্তন করার বিশেষ একটা অধিকার তার রয়েছে। মুনও তারা মিয়া ওরফে স্টারকে সে মাত্রাছাড়া ভালোবাসে। যার প্রতি এত ভালোবাসা, তার যে কোনোকিছু মেনে নেওয়া যায়। অনেকক্ষণ হাতে হাত রেখে বসে থাকার পর স্টার মিয়া বলে, এইভাবে পার্কে পার্কে ঘুরে প্রেম করতে আর ভালো লাগে না। চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। মুন গলা খাদে নামিয়ে বলে, বিয়ে যে করব, মা-বাবার অনুমতি লাগবে না? তাদের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তারা নিশ্চিত আমাকে ত্যাজ্য করবে। ত্যাজ্য করার কথা শুনে অাঁৎকে ওঠে স্টার মিয়া। মুনের ভ্যানিটি ব্যাগের চেইন খুলে পানির বোতল বের করে পানি খায়। মুনকে যদি ত্যাজ্য করে তাহলে সর্বনাশ। মুন তার বড়লোক বাবার যাবতীয় সহায়-সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। মুন বঞ্চিত হলে স্টারও বঞ্চিত হবে। স্টার পানি খেয়ে চেহারা থেকে অাঁৎকানো ভাবটা দূর করে বলল, এমন কিছু করা যাবে না, যাতে তোমার মা-বাবা মনে কষ্ট পান। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের রাজি করিয়েই তোমাকে বিয়ে করব। মুন কিছুটা খুশি হলেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারে না, আমার বাবা তোমার সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিতে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। কারণ তুমি বেকার। স্টার মিয়া শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে, আমি বেকার হতে পারি। কিন্তু অনার্স মাস্টার্স তো করা আছে। যেকোনো সময় চাকরি হয়ে যাবে। একদিন তুমি আমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে চলো। দেখবে তোমার বাবা আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা শুনলে আমার সঙ্গে তোমাকে নাচতে নাচতে বিয়ে দিয়ে দেবেন। মুন বলল, অসম্ভব! স্টার ভড়কে গেল, অসম্ভব কেন? মুন বলল, অসম্ভব এই জন্য, কারণ আব্বুর কোমরে পুরনো বাতের সমস্যা আছে। সে যদি তোমার সঙ্গে আমাকে নাচতে নাচতে বিয়ে দিতে যান, তাহলে তার বাতের ব্যথাটা আবার বাড়বে। তাকে ছুটতে হবে সিঙ্গাপুর। আমাদের বিয়ে পিছিয়ে যাবে। বলেই মুন হাসতে থাকে। স্টারও দাঁত কেলায়। তার দাঁত আবার হাতির দাঁতের মতো এত বড় না। হাতির দাঁতের চেয়ে সামান্য একটু ছোটই আছে। পরের সপ্তাহে মুরবি্বদের নিয়ে মুনদের বাড়িতে মিষ্টান্ন সমেত হাজির হয়ে গেল স্টার মিয়া। স্টার মিয়া আগেই মুরবি্বদের বলে দেয়, মুনদের বাড়িতে তাকে যেন তারা মিয়া নামে না ডাকে। কিন্তু তার এক চাচা মুখ মুনের বাবার সামনে ফসকে বলে ফেলে, শোন তারা... মুনের বাবা জিজ্ঞেস করেন, 'তারা' কে? চতুর তারা মিয়া জবাব দেয়, 'তারা' কেউ না আংকেল। আমার চাচা আসলে বলেছেন 'তাড়া'। মানে তার বাড়িতে যাওয়ার খুব তাড়া তো। মুনের বাবা বলে, তাড়া যেহেতু আছে, তাহলে কথাবার্তা তাড়াতাড়িই শেষ করি। দেখো স্টার বাবা, তুমি বেকার, এটা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই। তুমি উচ্চশিক্ষিত, এটাই আমার বড় পাওয়া। বেকার হয়ে বরং ভালোই হয়েছে। আমার কোম্পানিতে জয়েন করবে। তা বাবা, তুমি কোন ভার্সিটি থেকে অনার্স মাস্টার্স করেছ? স্টার মিয়া বলে, আংকেল, 'আপ ডাউন ভার্সিটি' থেকে। হবু শশুর অবাক হন, আপ ডাউন ভার্সিটি! এটা আবার কেমন নাম? স্টার বলে, আসলে আংকেল, নর্থ সাউথ ইস্ট ওয়েস্ট সব সাইড নিয়েই তো ভার্সিটির নাম হয়ে গেছে, বাকি আছে শুধু আপ আর ডাউনটা। তাই আমাদের ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ...। হবু শশুর এবার মোবাইলে ইন্টারনেট ঘাঁটেন। দশ মিনিট, বিশ মিনিট, এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা ঘেঁটেও 'আপ ডাউন' নামে কোনো ভার্সিটির নাম না পেয়ে স্টার মিয়ার দিকে অগি্নদৃষ্টিতে তাকান। স্টার মিয়া ততক্ষণে ঘেমে টেমে একাকার। হবু শশুর হুংকার ছাড়েন, ফাজিল কোথাকার! তুই আমাকে ভুয়া ভার্সিটির নাম বলিস! হবু শশুরের হুংকার শুনে স্টার মিয়ার অবস্থা কেরোসিন হয়ে গেলেও মুনদের বাসার কাজের মহিলাটাকে খুব খুশি মনে হলো। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগল, খালুজানে কী 'ইনিভার্সিটির' নাম কইল? 'বুয়া ইনিভার্সিটি'? যাক, এইবার যদি আমরা বুয়ারা একটু ইনিভার্সিটিতে পড়তে পারি। -
Source: bd protidin