16-01-2014: দৈনিক বণিক বার্তা: টেলিযোগাযোগ পণ্য আমদানিতে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কয়েক দফা রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। ফাঁকি দেয়া রাজস্ব পরিশোধে একাধিকবার দাবিনামা জারি করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে শুল্ক আইনের ২০২ ধারা জারি করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ দেশের কোনো শুল্ক স্টেশন থেকে আমদানি পণ্য ছাড় করাতে পারবে না গ্রামীণফোন।
এ বিষয়ে ৭ জানুয়ারি গ্রামীণফোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, গত মার্চে গ্রামীণফোনের আমদানি করা একটি চালানের (সি-২৬৭৫৭) এইচএস কোড বদলে শুল্কায়ন করা হয়। চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করে নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (বিল অব এন্ট্রি খালাস-উত্তর নিরীক্ষা) করে দেখা যায়, এতে ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৪০৭ টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাস থেকে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে একাধিক কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়াসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব ও জরিমানা মিলে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ট্রেজারি শাখায় জমা দিতে দাবিনামা জারি করা হয়। কিন্তু এতে সাড়া না দেয়ায় গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ২০২ ধারা জারির মাধ্যমে দেশের যেকোনো শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য ছাড়করণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায়ে গ্রামীণফোনকে একাধিকবার দাবিনামাসংবলিত চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না মেলায় শুল্ক আইনের ২০২ ধারা জারি করা হয়েছে। এখন থেকে দেশের কোনো শুল্ক স্টেশন দিয়েই আমদানিকৃত পণ্য ছাড়িয়ে নিতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন তাহমিদ আজিজুল হক বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, পণ্য ছাড়করণে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে লিখিতভাবে বক্তব্য দেয়া হবে।
আমদানি নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গ্রামীণফোন লিমিটেডের নামে আসা পণ্যের একটি চালান (সি-২৬৭৫৭) খালাসের উদ্দেশে গত বছরের ৯ মার্চ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দলিলাদি দাখিল করা হয়। এতে পণ্য হিসেবে ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম ফর মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ঘোষণা দিয়ে এইচএস কোড ৮৪১৪.৫৯.২০ (শুল্ক-৩ ও এটিভি ৪ শতাংশ) শ্রেণীবিন্যাস করে শুল্কায়ন করা হয় এবং বন্দর থেকে তা ছাড়িয়েও নেয়া হয়। শুল্ক কর্তৃপক্ষ পরে চালানটিতে বিল অব এন্ট্রি খালাস-উত্তর নিরীক্ষা করে। তাতে দেখা যায়, আমদানি পণ্য এইচএস কোড ৮৪১৪.৫৯.৯০ (শুল্কহার ২৫%+ ৫%+১৫%+ অন্যান্য করাদি) শ্রেণীবিন্যাসযোগ্য। পণ্যের চালানটি পুনরায় শুল্কায়ন করে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৪০৭ টাকা। এর সঙ্গে জরিমানা নির্ধারণ করা হয় আরো ১০ লাখ টাকা।
এর আগেও টেলিযোগাযোগ পণ্য আমদানিতে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে কয়েক দফা শুল্ক ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। উচ্চশুল্কের এইচএস কোডের পণ্য নিম্নশুল্কের এইচএস কোডে আমদানির অভিযোগে তখনো প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনামা জারি করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তারা দাবিনামার বিপরীতে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে।
প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি বণিক বার্তায় পণ্য আমদানি: শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বারবার ধরা পড়ছে গ্রামীণফোন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।