এয়ারশিপ বা বাতাসের চেয়ে হালকা আকাশযান বেশ পুরোনো বিষয়। আধুনিক উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আকারে বিশাল ও সে অনুযায়ী ভারী। তবে এয়ারশিপের ব্যবহারের ক্ষেত্রটি আলাদা।
যুক্তরাষ্ট্রের একদল প্রকৌশলী আবার তৈরি করছেন নতুন ধরনের এয়ারশিপের নকশা। তাঁদের দাবি, এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ হাজার ফুট উঁচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের হালকা ও অতি ঠান্ডা বাতাসের স্তরে চলাচল করবে।
প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, সাধারণ জেট বিমানের দ্বিগুণ উঁচুতে উড়বে এই এয়ারশিপ। নিচে থেকে বিজ্ঞানীরা এটির চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবেন। উড়ন্ত বেলুনের মতো এই হালকা আকাশযানে বহন করা যাবে শক্তিশালী দূরবীক্ষণযন্ত্র। এতে করে দূর ছায়াপথ যেমন, তেমনি ভূপৃষ্ঠের কোনো মহাসাগরের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করাও সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরভিনে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী সারাহ মিলার বলেন, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে চলাচলের উপযোগী এ এয়ারশিপ বিপুল ব্যয়ে মহাশূন্যে না গিয়েও মহাশূন্যের কাছাকাছি পরিবেশ তৈরি করে প্রায় সে রকম অবস্থার বিবরণ দিতে পারবে!
অতি উঁচুতে চলার উপযোগী এয়ারশিপ তৈরির প্রযুক্তি বলতে গেলে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হালকা আকাশযান ৬৫ হাজার ফুট উঁচুতে আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলাচল করতে পারেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কেক ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের গবেষকেরা বলছেন, আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ারশিপ শিগগিরই তৈরি করা সম্ভব হবে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) এ রকম এয়ারশিপ নির্মাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রত্যাশিত ওই উচ্চতায় এসব এয়ারশিপই যে প্রথম গেছে, তা নয়। রকেট ও কৃত্রিম উপগ্রহগুলো প্রায় নিয়মিত ৬৫ হাজার ফুট পেরিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করছে। আর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত বেলুনগুলোও ইতিমধ্যে ওই উচ্চতায় পৌঁছার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
বেলুনে ব্যবহৃত হিলিয়াম গ্যাস দিনের বেলা উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হয়। আর রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে গ্যাসটি সংকুচিত হয়ে পড়ে। বাতাসের চেয়ে হালকা আকাশযান তৈরির জন্য এটি এক বড় বাধা।
মার্কিন প্রকৌশলী স্টিভ স্মিথ বলেন, এয়ারশিপ তৈরির একটি বড় কারিগরি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এতে ব্যবহৃত গ্যাসীয় উপাদানের ভারসাম্য রক্ষা করা। রাতে বিধ্বস্ত হওয়া এড়াতে এয়ারশিপের ভেতরে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস থাকা চাই। আবার একই সঙ্গে এতে শক্তিশালী কিছু উপাদান থাকতে হবে, যাতে দিনের বেলা বিস্ফোরিত না হয়। আর যানটির আকৃতিও হতে হবে হালকা বায়ুতে চলাচলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
তবে সমস্যা হচ্ছে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে চলাচলের উপযোগী এয়ারশিপ তৈরির ব্যাপারটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল আর পরীক্ষামূলক চালনাও বেশ জটিল। তহবিলের অভাবে এ ধরনের যান তৈরির প্রচেষ্টা বাদ দিয়েছেন অনেক দক্ষ প্রকৌশলীও। তবে নাসার উদ্যোগে এখন হয়তো এ ব্যাপারে নতুন করে অগ্রগতি হতে পারে। আবার গ্যাসের পরিবর্তে এয়ারশিপ চালাতে বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহারের চিন্তাভাবনাও করছেন প্রকৌশলীরা। এটি দিয়ে বিজ্ঞানীরা গ্যাসচালিত এয়ারশিপের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে গবেষণাকাজ চালাতে পারবেন। কারণ, গ্যাসভিত্তিক এয়ারশিপের ক্ষেত্রে তাঁরা অনেকটা অনিশ্চয়তায় ভোগেন। তাই এ রকম যানের ওপর নির্ভর করে তাঁরা ব্যয়বহুল গবেষণাকাজ পরিচালনার উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে যান।
অনেক মহাকাশ স্যাটেলাইটের মতো বেলুনগুলোও চলন্ত অবস্থায় বিধ্বস্ত হওয়ার নজির রয়েছে। তখন তাতে পরিবহন করা সব যন্ত্রপাতিই নষ্ট হয়ে যায়। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী বার্থ নেটারফিল্ড বলেন, বিদ্যুৎ-চালিত এয়ারশিপ যখন ইচ্ছা নামিয়ে আনার সুযোগ থাকবে। তবে কার্যকর এয়ারশিপ চালু করার পথে এখনো অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস।