মানসিক চিকিৎসায় হিপ-হপ থেরাপি

Author Topic: মানসিক চিকিৎসায় হিপ-হপ থেরাপি  (Read 1047 times)

Offline ehsan217

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 116
  • Test
    • View Profile
র‌্যাপ গান, ব্রেকড্যান্স, গ্রাফিতি আর ডিজেগিরির শেকড় থেকে বেড়ে উঠে সত্তরের দশকে নিউইয়র্কের ব্রংক্স বরোতে যে হিপ-হপ গানের যাত্রা শুরু হয়েছিল তা অনেক আগেই ডালপালা ছড়িয়ে বিশ্বজুড়ে সংগীত ও বাণিজ্যিক বিনোদন জগতে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি হিপ-হপ সংগীতকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বিশ্বাস করেন, সিজোফ্রেনিয়া এবং বিষাদগ্রস্ততার মতো মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসায় দারুণ ফল এনে দিতে পারে হিপ-হপ সংগীত। এই প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছে দ্য অবজারভার।

ব্রিটিশ গবেষকেরা বলছেন, হিপ-হপ সংগীত শ্রোতাদের এমন একটা আত্মশক্তির উপলব্ধি দেয় এবং এভাবে নিজেকে জানার সুযোগ করে দেয়, যা মানুষকে নিজেই নিজের মানসিক সমস্যা সামলাতে সাহায্য করতে পারে। তাদের দাবি, হিপ-হপ শিল্পের নানা প্রকরণের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক সহজাত সচেতনতার বিষয় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

মনোরোগ চিকিৎসায় এ ধারণাটিকে কাজে লাগাতে এবং বিষয়টিকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলতে এরই মধ্যে ‘হিপ-হপ সাইক’ নামে একটা সামাজিক উদ্যোগও শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ চিকিৎসা বিভাগের স্নায়ুবিজ্ঞানী বেকলে ইঙ্কস্টার এবং সাউথ সাসেক্স পার্টনারশিপ ট্রাস্টের পরামর্শক মনোরোগ চিকিৎসক আকিম সুলে যুগ্মভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।

বেকলে ইঙ্কস্টার বলেন, মানুষ যতটুকু ধারণা করে, হিপ-হপ সংগীতে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু আছে। তিনি বলেন, ‘আমি বেড়ে উঠেছি হিপ-হপ সংগীতের সোনালি যুগ নব্বইয়ের দশকে, যখন এটা মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত এত কিছু আছে, যা এখনো অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে। আর এ সবকিছু থেকে বিপুল সুফল পেতে পারেন রোগীরা। হিপ-হপের সুফল কাজে লাগাতে র‌্যাপার, দাতব্যপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা অধিকার গ্রুপগুলোসহ অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে চাই আমরা।’

হিপ-হপ থেরাপি
ইঙ্কস্টার ও সুলের পদ্ধতি অনুসারে মানসিক রোগীরা চিকিৎসার অংশ হিসেবে নিজের মনের কথাগুলো গানের লিরিক হিসেবে লিখবেন। তারপর সংগীতের তালে তালে নিজের লেখা হিপ-হপ গান গাইবেন। পাশাপাশি মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের মানসিক অসুস্থতা বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রেও হিপ-হপকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব করেছেন এই দুই মনোরোগ চিকিৎসক।

এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা এমন একটা পদ্ধতি চর্চার চেষ্টা করছি, যেখানে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরা আগামী এক বা দুই বছরে নিজেদের কোথায়, কীভাবে দেখতে চান সেই ভবিষ্যতের কথাগুলো র‌্যাপ গানের লিরিক হিসেবে লিখে ফেলবেন।’

‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ র‌্যাপ ও হিপ-হপ শিল্পীই শহরের দরিদ্র এলাকাগুলো থেকে এসেছেন। সাধারণত এসব এলাকাগুলো মাদকাসক্তি, পারিবারিক সহিংসতা এবং দারিদ্র্য থেকে সৃষ্টি নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকে। আর এ সমস্যাগুলো প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা এবং মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে থাকে। তাঁদের গানের বিশেষ ভাষা-ভঙ্গি এবং সুরেও এসব সমস্যার বিষয়গুলো গাঁথা থাকে।’

এই দুই মনোরোগ চিকিৎসকের হিপ-হপ সাইক যেসব গান ও শিল্পীদের কাজকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে, তার মধ্যে সবার ওপরে আছে হিপ-হপ শিল্পী ফ্যারেল উইলিয়ামসের নাম। বিশেষত উইলিয়ামসের বহুল জনপ্রিয় ‘হ্যাপি’ শিরোনামের গানটি।

ইঙ্কস্টার ও সুলে অন্যান্য যেসব শিল্পীর গানকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইংলিশ র‌্যাপার প্রফেসর গ্রিন। তাঁর লুলাবি গানটায় যেন বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠার একটা নিশানা আছে, বিশেষত তাঁর বাবা আত্মহত্যা করার পর গ্রিন যেভাবে নিজেকে সামাল দিয়েছিলেন, তার ছায়া আছে এই গানে। এ ছাড়া গ্রিনের অন্যান্য জনপ্রিয় গানে সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে বিরক্ত হওয়া এবং প্রায়ই ব্যর্থ হওয়া তরুণদের জীবনের গল্প আছে।

মনোরোগ চিকিৎসায় হিপ-হপ থেরাপির চর্চাকারী ইঙ্কস্টার আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে হিপ-হপে এবং বিশেষত র‌্যাপ ধারা প্রায়ই এমন সব বার্তা বহন করে, যা আমরা যতটা ধারণা করি তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। আর এ কারণেই তা নিজেদের মানসিক সমস্যাগুলো বুঝতে চাওয়া ব্যক্তিকে সাহায্য করার এবং তার রোগ সারিয়ে তোলার একটা আদর্শ মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে সক্ষম।’