রাসুল (সা.) এ ধরাপৃষ্ঠে কোন দিন আগমন করেছেন, ইতিহাসবেত্তাদের মাঝে এ নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রবিউল আউয়ালের সেই দিন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দিন। এদিন এমন এক মহামানবের শুভাগমন ঘটেছে এই ধরিত্রীতে, যার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কারো আবির্ভাব ঘটেনি। যার দ্যুতির দীপ্তিতে তৎকালীন জগৎ যেমন আলোক-উদ্ভাসিত হয়েছিল, তেমনি আজ সুদীর্ঘ ১৪০০ বছর পরেও তা সমানভাবে কার্যকর। কালের পরিবর্তন হয়, যুগের বিবর্তন ঘটে, গতকাল যা অপরিহার্য ছিল, আজ তা অপাঙ্ক্তেয় বিবেচিত হয়, নিত্য-নতুন সমস্যার উদ্ভাবন হয় এবং তা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, কিন্তু তিনি এমন এক মহামানব যিনি কখনো সেকেলে ও পুরাতন হন না, যার অনিবার্যতা কখনো ফুরোয় না। আল্লাহ অনেক যশস্বী মনীষী সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য নবী রাসুল। প্রত্যেকেই ছিলেন অনন্য যোগ্যতা, বিরল মনীষা ও রূপ সৌকর্যের অধিকারী। কিন্তু সব নবীর অনুপম চরিত্রের সার নির্যাস ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে যাঁকে প্রেরণ করেছেন এই গ্রহে, তিনি হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নম্রতা, মুসা (আ.)-এর কঠোরতা, নূহ (আ.)-এর দাওয়াতি তৎপরতা, সুলাইমান (আ.)-এর শান-শওকত, ইউসুফ (আ.)-এর সৌষ্ঠব, ঈসা (আ.)-এর বিনয়, আইয়ুব (আ.)-এর ধৈর্য, ইয়াহইয়া (আ.)-এর খোদাপ্রেমসহ আরো অসংখ্য গুণ যাঁর মধ্যে একই সঙ্গে বিদ্যমান ছিল, তিনি হলেন মুহাম্মদে আরবি (সা.)। কবির কল্পনা, শিল্পীর আল্পনা যে সীমা অতিক্রম করতে অক্ষম, দার্শনিকের চিন্তা যেখানে মুখথুবড়ে পড়তে বাধ্য, সাহিত্যিকের লিখনী, সুরকারের সুর যে মঞ্জিল পাড়ি দিতে অপারগ, তারও সহস্র ধাপ উপরে যার অবস্থান, তিনি হলেন আহমদ মুজতবা (সা.)। তাঁর উপমা তিনি নিজেই। তিনি কুফর, শিরক অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অশ্লীলতার অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তরীক্ষে প্রজ্বলন করেছেন তাওহিদের অনির্বাণ শিখা। উঁচু নিচু, ছোট বড়র কৃত্রিম বিভেদ মুছে বর্ণ গোত্রের প্রাচীর ধুলিসাৎ করে মানুষকে সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। দাসত্বের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করে অবলা নারীকে রাণীর সুউচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন তার সামাজিক, অর্থনৈতিক অধিকার। শতধাবিভক্ত মরুচারী বেদুঈন জাতিকে ইসলামের সুমহান শিক্ষার মাধ্যমে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ করে তাদের বিশ্ব নেতৃত্বের উপযোগী করে তুলেছেন। যারা উদয়াস্ত ইসলাম ও মুসলিম বিনাশী কর্মকাণ্ডে প্রবৃত্ত ছিল, যারা দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল, যারা পাথর মেরে দান্দান মোবারক শহীদ করেছিল, তাদের হাতের মুঠোয় পেয়েও তিনি প্রতিশোধের নেশায় বুঁদ হননি, বরং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছেন। তার তুলনা কী হতে পারে? তাই তার অবির্ভাবের দিন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দিন।হাফেজ রিদওয়ানুল কাদির উখিয়াভী
Source:
http://www.kalerkantho.com/print-edition/dhormo/2015/01/02/170397#sthash.CwdJTZha.dpuf