পটভূমি
মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা বিশ্বাস করেছিলেন যে যদি সমগ্র ভিয়েতনাম সাম্যবাদী শাসনের অধীনে চলে আসে, তবে “ডমিনো তত্ত্ব” অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র সাম্যবাদ ছড়িয়ে পড়বে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের ঘটনাবলির সাথে জড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। কিন্তু এই সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের প্রতিবাদে দক্ষিণ ভিয়েতনামে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬০ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা হয়।
ডমিনো তত্ত্ব
পঞ্চাশের দশকে ইন্দোচীনে উত্তর ভিয়েনামে বিপ্লবী ও সমাজতন্ত্রীক ভিয়েতকং বাহিনী যখন ক্ষমতা দখল করল, এর কিছুদিনের মধ্যে এক-এক করে দক্ষিন ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্পুচিয়ায় ও সরকারের পতন ঘটল এবং সেখানে সমাজতন্ত্রীক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো। এটা অনেকটা এ রকম কিছু তাস যদি খাড়া করানো থাকে এবং একটাকে টোকা দিয়ে ফেলে দিলে বাকিগুলোও পড়ে যাবে। এটাই হচ্ছে “ডমিনো তত্ত্ব”
প্যারিস চুক্তি
১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। প্যারিসে শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে জুয়ান থুই, লি ডাক থো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ফেব্রুয়ারি, ১৯৭০ থেকে শান্তি চুক্তির ব্যাপারে গোপনে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিলেন। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৭৩ সালে প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে - ৮০দিনের মধ্যে মার্কিন যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া; যুদ্ধবিরতি; দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন; দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং উত্তর ভিয়েতনামের সেনাদের দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থান অন্তর্ভূক্ত ছিল।২৩ জানুয়ারি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সময়ের প্রয়োজনে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকে। কিছু অঞ্চলে তখনও যুদ্ধ চলছিল। ২৯ মার্চের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করে। উত্তর ভিয়েতনামে বোমাবর্ষণ হতে থাকে। উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। মে ও জুন, ১৯৭৩ সালে কিসিঞ্জার এবং থো শান্তি চুক্তির উত্তরণে প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। ১৩ জুন, ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে।
ফলাফল
১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের পতন রোধকল্পে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও কম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন।