দক্ষিণ আমেরিকার স্বাদুপানির ভয়ঙ্কর রাক্ষুসে মাছের নাম পিরানহা। চলে ঝাঁকে ঝাঁকে, লাখে লাখে। আকারে খুব বড় না হলেও বিপদের দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে। বলা হয়ে থাকে মাত্র ৫ মিনিটেই একটি জলজ্যন্ত হাতি সাবাড় করে দিতে পারে এই মাছ। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে এই রাক্ষুসে মাছের একটা প্রজাতি এখন বাংলাদেশের জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। নিষিদ্ধ হলেও গোপনে চাষ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পুকুর, জলাশয়ে।
রাক্ষুসে প্রজাতির এই মাছের রয়েছে শক্ত ও তীক্ষ্ণ দাঁত এবং শক্তিশালী চোয়াল। এ জন্য এরা খুব সহজেই শিকারের দেহ থেকে মাংস ছিঁড়ে নিতে পারে। আর একবার কোন প্রাণীর পেট ফুটো করে ভেতরে ঢুকে পড়তে পারলেই হল, নাড়ী-ভুড়ী সব নিমিষেই কেটে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। দক্ষিণ আমেরিকার গহীন অরণ্যের বৃহত্তম সাপ অ্যানাকোণ্ডাকেও এভাবেই ধরাশায়ী করে ফেলে পিরানহা। সাধারণত এরা মাংসাশী স্বভাবের মাছ। পিরানহা লম্বায় সাধারণত ১৪-২৬ সেন্টিমিটার হয়। তবে কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে এরা ৪৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমাজনের অববাহিকায় বিশেষ করে ব্রাজিলের অরিনকো, গায়ানা ও প্যারাগুয়ের পারানা নদীতে এদের দেখা মেলে।
পিরানহা মাছকে বাংলাদেশে বিক্রি করা হয় রূপচাঁদা মাছ হিসেবে। বাংলাদেশে যে প্রজাতিটি আছে তার সঙ্গে অবশ্য রূপচাঁদার অনেকটা মিলও আছে। স্বাদ খুব একটা সুবিধার না। তবে অল্প দামে পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে এই মাছ দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন বাজারে গেলে হরহামেশাই দেখা যায় এই মাছটিকে। বাংলাদেশে এই মাছ কীভাবে এলো সেটা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় থাইল্যান্ড থেকে প্রথম এই মাছ বাংলাদেশে আনা হয়। এ্যাকুয়ারিয়ামের বাহারি মাছ হিসেবে বাংলাদেশে এর আগমন হলেও প্রথমে উৎসাহী হ্যাচারি টেকনিশিয়ানের হাতে সফল প্রজননের পর এ্যাকুয়ারিয়ামের গণ্ডি ছাড়িয়ে চলে যায় চাষের পুকুরে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই মাছ চাষ ও বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রায় ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদের দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু এ রকম বহিরাগত রাক্ষুসে মাছ আমাদের মৎস্য সম্পদের বিশাল ক্ষতি করতে পারে। মৎস্য গবেষকদের মতে, এ মাছ চাষের পুকুর বাদে মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে তা হবে ভয়াবহ সংবাদ। রাক্ষুসে মাছটি ছোট মাছ, বড় মাছ, গৃহপালিত পশু এমনকি মানুষ পর্যন্ত এর হাত থেকে রক্ষা পাবে না। পুকুরে এই প্রজাতির মাছ চাষের ফলে পুকুরে অবস্থিত দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কোনভাবে পুকুর থেকে এই মাছ নদীতে চলে আসলে আমাদের মৎস্য সম্পদের জন্য এক মহা বিপর্যয় নেমে আসবে।
Source: বিডি-প্রতিদিন/০৭ জানুয়ারি ২০১৫