শীতে যে খাবার হরহামেশাই নিরাপদে খেয়ে ফেলা গেছে, গরমে কিন্তু সেসবের অনেক খাবারেই হতে পারে বদ হজম। এ থেকে হতে পারে পেটের অসুখও। তাই গরমে শিশুদের স্কুলের খাবার তালিকায় দিতে হবে বাড়তি নজর। গ্রীষ্মের খরতাপে আর পড়াশোনার ব্যস্ততায় ছোটাছুটিতে ওদের প্রতিদিনের পানি ও ইলেকট্রোলাইট চাহিদা বেড়ে যাবে অনেকখানি। ফলে শিশুর খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে পর্যাপ্ত পানীয় আর খাবার হতে হবে সহজপাচ্য। যতটা সম্ভব এড়াতে হবে বাইরের খাবার।
আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এই মৌসুমে শরীরে বাড়তি ক্যালরি ও রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদাও বাড়বে কিছুটা। তাই খাবার বাছাইয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি। একই সঙ্গে সচেতনতা তৈরি করে দিতে হবে শিশুদের মধ্যেও। যেহেতু দিনের একটা বড় অংশ কম বয়সী ছেলেমেয়েরা স্কুলেই কাটায় তাই স্কুলের টিফিন হওয়া চাই স্বাস্থ্যসম্মত। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে বাড়ির খাবারেও। এই গরমে আপনার স্কুলগামী সন্তানদের জন্য খাবার বাছাই আর স্কুলের টিফিন তৈরিতে খেয়াল রাখতে পারেন নিচের বিষয়গুলোর প্রতি।
স্কুলের টিফিনে
১. দিনের কতটা সময় বাইরে থাকতে হবে সে অনুযায়ী পানি দিয়ে দিতে হবে শিশুকে। পানির পাত্রটা নিয়মিত পরিষ্কার করাটাও জরুরি।
২. মৌসুমি ফল থেকে ঘরে তৈরি জুস দিয়ে দিতে পারেন টিফিনের সঙ্গে। তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে, বেল থেকে বেছে নিন পছন্দ মতো। ক্লাসের প্রথম দিকের বিরতিতেই খেয়ে নিতে হবে জুস। নইলে জুসের স্বাদ, তারল্য খানিকটা বদলে যেতে পারে।
৩. মাঝে মাঝে ডাবের পানি দিতে পারেন পানীয় হিসেবে। আগে থেকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে দিলে ডাবের পানির সঞ্জীবনী গুণ থাকবে আরেকটু বেশি সময় ধরে।
৪. টিফিনে কেবল আপেল কমলা না দিয়ে পেয়ারা, আমের মতো অন্যান্য মৌসুমি ফলও স্লাইস করে দিয়ে দিতে পারেন। দিতে পারেন বড়ই, কামরাঙার মতো ফলও। ফলের সঙ্গে একটু গোলমরিচ বা সরিষার মণ্ড বানিয়ে দিলে খেতে ভালো লাগবে।
৫. তেলে ভাজা স্ন্যাকস এড়িয়ে চলুন। মাংসের বদলে সবজির প্রাধান্য রাখুন খাবারদাবারে।
৬. খাবারে বৈচিত্র্য আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিফিন একঘেয়ে হয়ে গেলে শিশুর যেমন আকর্ষণ কমে যায় তেমনি তা বাইরের খাবারের প্রতি আকর্ষণও বাড়িয়ে দিতে পারে।
৭. টিফিন তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই সন্তানের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন।
বাড়ির সময়টুকু
১. বাড়িতে থাকার সময়টুকুতেও শিশুর পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করুন।
২. প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন শাকসবজি ও কোনো না কোনো মৌসুমি ফল। খেয়াল রাখবেন, সেখানে যেন থাকে সবুজসহ অন্য দুই তিনটি রঙের সবজি বা ফল। সবজি ও ফলের এই সব ভিন্ন ভিন্ন রং আসলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।
৩. দিনে-রাতের প্রধান খাবারের পাশাপাশি নাশতা হিসেবে তরল ও জলীয় খাবার বেশি রাখুন। আর দুপুর বা রাতের খাবারেও দুষ্পাচ্য ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
গরমের দিনে খাবারে অসাবধানতার কারণে সহজেই পেটের অসুখ, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। খাবারের সমস্যা থেকে ত্বকে ব্রণের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সচেতনতা ও সঠিক অনুপাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ এসব সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে অনেকটাই বাঁচাতে পারে। আর ফাস্ট ফুড বা বাইরের খাবার না খাওয়ার জন্য সন্তানকে জোরাজুরি না করে বা ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন। শিশুদের জানান কোন কোন খাবারে কী কী কার্যকারিতা আর কী কী স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাহলে ওদের মধ্যেই সচেতনতা তৈরি হবে। এখনকার ছেলেমেয়েরা কিন্তু অনেক স্মার্ট, ওদের শুধু পথটা বাতলে দিন।