অপরাধীর গতিবিধি অণুজীবের মাধ্যমে জানা যাবে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরা বলেছেন, কোনো অপরাধ সংঘটনের সময় ডিএনএর পাশাপাশি বিভিন্ন অণুজীবের সাহায্যেও তাদের গতিবিধি জানা যাবে। মাইক্রোবায়োম সাময়িকীতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের জুতা এবং ফোনে একধরনের ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। সেগুলো ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির অতীত গতিবিধি নির্ণয় করা যেতে পারে। আর এই প্রক্রিয়া কোনো অপরাধীকে শনাক্ত করার কাজে বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও খালি চোখে দেখা যায় না—এমন অনেক অণুজীব বা জীবসত্তা এই পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। এগুলো আমাদের ত্বক থেকে শুরু করে শরীরের ভেতরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গজুড়ে বসবাস করছে। যখন কোনো ব্যক্তি অন্য লোকজন, পোষা প্রাণী, বাতাস, ভূপৃষ্ঠসহ বিভিন্ন তলের মাধ্যমে এসব অণুজীবের সংস্পর্শে আসেন, সেগুলো তাঁর ব্যক্তিগত পারিপার্শ্বিক ক্রিয়ায় যুক্ত হয়। বিষয়টি ওই ব্যক্তির মাইক্রোবায়োম নামে পরিচিত।
এ রকম অণুজীবের সঙ্গে বসবাসের ব্যাপারটা দ্বিমুখী রাস্তার মতো। যখন আপনি বাড়ির দিকে যাবেন, বিভিন্ন জিনিস আপনাকে স্পর্শ করে যেতে হবে। আর সেগুলোতে আপনার শরীরে বসবাসকারী কোনো কোনো অণুজীব থেকে যাবে। সাম্প্রতিক গবেষণায় কোনো কোনো ব্যক্তির নিজস্ব অণুজীবের বৈশিষ্ট্য বা ‘মাইক্রোবায়াল স্বাক্ষর’ শনাক্ত করা হয়েছে তাঁর স্পর্শ করা জিনিসপত্র থেকে, যেমন: কম্পিউটারের কিবোর্ড।
গবেষক দলটির প্রধান সাইমন ল্যাক্স বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের অণুজীবগুলোর বৈশিষ্ট্য বদলে যায় কি না—সেটা এখন তাঁরা দেখতে আগ্রহী।
মানুষ নিকট অতীতে কোন কোন এলাকায় চলাফেরা করেছে, তা চিহ্নিত করার ব্যাপারে অণুজীবগুলো কতটা সহায়ক হতে পারে—সেটা নির্ণয়ের জন্য ল্যাক্স ও তাঁর সহযোগীরা দুই ব্যক্তির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁদের মুঠোফোন, জুতা এবং হেঁটে যাওয়া রাস্তা ও মেঝেগুলো দুই দিন ধরে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যাচাই করে দেখা হয়। গবেষণাটি তুলনামূলক সীমিত পরিসরের হলেও বিজ্ঞানীরা প্রতিটি স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে সমর্থ হন। ওই দুই ব্যক্তির জুতা এবং রাস্তা বা মেঝে থেকে সংগৃহীত অণুজীবের বৈশিষ্ট্যে অনেক মিল পাওয়া যায়। জুতা এবং মেঝের মধ্যে দ্রুত সংস্পর্শের কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। ল্যাক্স বলেন, একজন মানুষ যখন নিজের ঘর থেকে তাঁর বন্ধুর কক্ষে যান, তখন তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে অণুজীবগুলোর অবস্থান ও গঠনগত পরিবর্তন শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞানী লরা ওয়েরিচ বলেন, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে চলাফেরা করার কারণে মানুষের জুতার অণুজীবগুলো দ্রুত পরিবর্তিত হলে দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্যক্তির গতিবিধি নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই কোনো অপরাধ সংঘটনের কয়েক সপ্তাহ পর নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় কারও উপস্থিতি চিহ্নিত করতে এই পদ্ধতির সাফল্য কমে যেতে পারে।
আবার মুঠোফোনে লেগে থাকা বিভিন্ন অণুজীবের সাহায্যে কোনো ব্যক্তির গতিবিধি নির্ণয় করাটা আরও বেশি কঠিন। কারণ হিসেবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, মুঠোফোনে বসবাসকারী অণুজীবগুলোর বৈশিষ্ট্য তুলনামূলক দ্রুত পাল্টে যায়। কানাডার ভ্যাঙ্কুভার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনটি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৮৯ ব্যক্তির জুতা ও মুঠোফোনের অণুজীবগুলোর নমুনা পরীক্ষা করেন গবেষকেরা। তবে একই পরিবেশের অণুজীবগুলোর মধ্যে মিল থাকার সম্ভাবনা বেশি হওয়ায় ওই গবেষণা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ। তবে মার্কিন গবেষকেরা মনে করেন, শহুরে পরিবেশে সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে মাইক্রোবায়োমনির্ভর পদ্ধতি অপরাধ কর্মকাণ্ডের তদন্তে ভবিষ্যতে বিশেষ সহায়ক হতে পারে।
সূত্র: সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।