আকাশের বিদ্যুৎ চমক থেকে বজ্রপাত হয়। আর তার আঘাতে মানুষের মৃত্যু থেকে শুরু করে দাবানলের সূত্রপাত পর্যন্ত হতে পারে। জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের ফলে বজ্রপাতের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী গত বৃহস্পতিবার এমনটিই দাবি করেছেন। তাঁরা বলেছেন, চলতি শতকের শেষ নাগাদ বজ্রপাতের হার ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
নেচার সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং মেঘের প্লবতা পরিমাপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। ২১০০ সালে পৃথিবী কতটা উষ্ণ হতে পারে, তা অনুমানের জন্য বিজ্ঞানীরা ১১টি ভিন্ন ভিন্ন নমুনা জলবায়ুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলিতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ডেভিড রম্পস বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতগুলো আরও বেশি ধ্বংসাত্মক হবে। উষ্ণায়নের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প বাড়বে। আর আশপাশে যদি বেশি বেশি জ্বালানি ছড়িয়ে থাকে, কোনো ধরনের প্রজ্বলন ঘটলেই তা বেশি সময় স্থায়ী হবে।
বজ্রপাতের ধরনে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে, সে সম্পর্কে জানার প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীদের পূর্ববর্তী অনুমানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের বিষয়টি কম গুরুত্ব পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় জ্বালানি বা শক্তির পাশাপাশি বায়ুমণ্ডলে বাতাসের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতের হার সমন্বিতভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
পরিবেশে প্রাপ্ত সংযোজক শক্তি (সিএপিই) পরিমাপের জন্য বেলুনবাহী যন্ত্র রেডিওসোন্ড ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে দিনে দুবার এই পদ্ধতিতে সিএপিই পরিমাপ করা হয়। রম্পস বলেন, বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরণ বা প্রজ্বলনের মাত্রা কতটা বেশি হতে পারে, তা সিএপিইর মাধ্যমে জানা যায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং সিএপিইর সমন্বিত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তাঁরা একটি অনুকল্প তৈরি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে গবেষকেরা দেখতে পান, সিএপিই এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখে বজ্রপাতের ৭৭ শতাংশ বৈচিত্র্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। ব্যাপারটা অনেকটা অবিশ্বাস্য মনে হয়।
গবেষকেরা আরও জানান, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাতের হার প্রায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আর চলতি শতকের শেষে তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে তখন বজ্রপাত প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে বছরে এখন প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ বার বজ্রপাত হয়। এ অবস্থায় বজ্রপাতের হার বৃদ্ধি পেলে মানুষের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। এ ছাড়া বনভূমি এবং প্রাণিবৈচিত্র্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুষ্ক বনাঞ্চলে দাবানলের আশঙ্কা আরও বাড়বে এবং সেখানকার পাখিসহ বিলুপ্তপ্রায় নানা রকমের প্রাণীর প্রজাতি ধ্বংস হবে।
মেঘের ভেতরে স্থিতিশীল চার্জ বা আধান হিসেবে বজ্রপাতের সূচনা হয়। অভ্যন্তরে আলোড়নপূর্ণ বাতাসের কারণে মেঘের নিচের দিকে ঋণাত্মক আধান এবং ওপরে ধনাত্মক আধান তৈরি হয়। যখন এসব বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন করে, বায়ুমণ্ডল আর সেই বৈদ্যুতিক আধানগুলো পৃথক করে রাখতে পারে না। আর তখনই ঘটে যায় বজ্রপাত। রম্পস বলেন, মেঘের অভ্যন্তরে আধানের বিচ্ছিন্নতার কারণে বজ্রপাত ঘটে। আর আধানের বিচ্ছিন্নতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে চাইলে বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প এবং ভারী বরফকণার পরিমাণ বাড়াতে হবে। বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ যত দ্রুত হয়, বজ্রপাত তত বেশি হয়। আর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলেও বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
সূত্র: এএফপি