কেন মা দিবসের সূচনা করে নিজেই তা বন্ধের সংগ্রাম করেছিলেন আনা জারভিস

Author Topic: কেন মা দিবসের সূচনা করে নিজেই তা বন্ধের সংগ্রাম করেছিলেন আনা জারভিস  (Read 3143 times)

Offline Tofazzal.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 314
  • Test
    • View Profile
মা দিবস। মায়ের প্রতি সমস্ত ভালোবাসা আর আবেগ প্রকাশের বিশেষ একটি দিন। আর এ বিশেষ দিনটির সূচনা করেছিলেন মার্কিন নাগরিক আনা জারভিস। মূলত মা দিবস পালনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজের মা অ্যান জারভিসের স্বপ্নকেই পূরণ করেছিলেন জারভিস। ১৯০৮ সালের ১০ইমে নিজের শহর পশ্চিম ভার্জিনিয়া গ্রাফটন শহর আর ফিলাডেলফিয়াতে মা দিবস উদযাপন শুরু করেন জারভিস। গ্রাফটনে সশরীরে না গিয়ে একটি চার্চে ৫শ’টি কারনেশন ফুল পাঠিয়েছিলেন তিনি। জারভিসের মায়ের পছন্দের ফুল ছিল কারনেশন। আর তাই মা দিবসের প্রতীক হয়ে ওঠে কারনেশন ফুল। ১৯১৪ সালে মা দিবসকে আনুষ্ঠানিক ছুটি ঘোষণা করেন উইড্রো উইলসন। আর মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে বেছে নেয়া হয় দিবসটি পালনের জন্য।

**জারভিসের দৃষ্টিতে মা দিবস যেভাবে উদযাপনের কথা ছিল
আচমকা বাড়িতে গিয়ে মাকে চমকে দেয়া... কিংবা মাকে বড় করে কোন চিঠি লেখা... বেহিসেবী আর স্বতস্ফূর্ত আবেগ প্রকাশের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট একটা দিনে বিশ্বজুড়ে মার প্রতি ভালোবাসার অভিপ্রকাশ ঘটাবে সন্তানেরা; এমনটাই ছিলো জারভিসের স্বপ্ন। তবে জারভিসের স্বপ্ন পর্যবসিত হয় স্বপ্ন-ভঙ্গে। বিকশিত বাজার-ব্যবস্থার অধীনে পণ্যায়িত হয় জারভিসের বিশুদ্ধ আবেগের ‘মা দিবস’।

**মা দিবসের বাজারিকরণের শুরু যেভাবে
যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মা দিবসের প্রবর্তন সে মাহাত্ম্য ক্রমশ বিলীন হয়ে যেতে থাকে পণ্যায়নের কাছে। আরসবকিছুর মতোই ‘মা দিবস’এর আবেগজনিত দুর্বলতাকেই পণ্য বানিয়ে ছাড়ে মুনাফাপ্রবণ বাজার। আবেগের পরিমাপ নির্ধারিত হয় আর্থিক মূল্যে। হাতে লেখা চিঠির জায়গায় ঠাঁই করে নেয় শুভেচ্ছা কার্ড আর ফুলের তোড়া। মা দিবসে মায়েদের শুভেচ্ছা জানাতে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক কার্নেশন ফুলেরও দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। একসময় জারভিস টের পান মে’ মাস আসলেই কারনেশন ফুলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেই নিজের উদ্যোগের প্রতি তিক্ত হয়ে ওঠেন জারভিস। এ যেন তার আরেক সংগ্রাম। মা দিবস চালু করতে যে অসমতল পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠলো এর বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধের সংগ্রাম।
মা দিবস শুরু হওয়ার ক’বছর পরই ১৯২০ সালের শুরুর দিকে মায়েদের জন্য ফুল আর অন্য উপহার সামগ্রী কেনা থেকে সন্তানদের বিরত থাকতে বললেন জারভিস। এমনকি এর জন্য বাণিজ্যিক চেতনাধারী নিজের সাবেক সমর্থকদেরও বিরোধিতা করতে কুন্ঠাবোধ করেননি তিনি। তিনি দেখলেন যে ফুল ব্যবসায়ীরা মা দিবস প্রবর্তনে তাকে সহায়তা করেছিল তাদের অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে মুনাফার দিকে। ফুল ব্যবসায়ী, শুভেচ্ছা কার্ড উৎপাদনকারী এবং কনফেকশনারিকে দস্যু, দালাল, ছেলেধরাসহ বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করে জারভিস বলেন, নিজেদের লোভ মেটাতে একটি প্রেমময়, সৎ ও আদর্শিক উদ্যোগকে খর্ব করার চেষ্টা করছে মুনাফাভোগীরা।

**মা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে জারভিসের প্রচেষ্টা
মা দিবসকে ঘিরে ফুল ব্যবসায়ীদের বাজারমুখী প্রবণতা বন্ধ করতে নারী, স্কুল ও চার্চ গ্রুপগুলোর কাছে বিনামূল্যে ফুল পাঠালেন জারভিস। এমনকি ফুল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করার ও মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের প্রতীক কার্নেশন ফুলকে ট্রেডমার্ক করার আবেদন করবেন বলে হুমকি দেন তিনি। জবাবে উল্টো জারভিসকেই প্রলোভিত করে মুনাফার জগতে সামিল করার চেষ্টা চালায় ফুল ব্যবসায়ীরা। তাঁকে কমিশন দেয়ার কথা বলা হয়। আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অ্যানা জারভিস। কারনেশন ফুল দিয়ে মা দিবস উদযাপনে ব্যবসায়ীদের প্রচেষ্টা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন জারভিস।
১৯৩৪ সালে ইউনাইটেড স্টেটস পোস্টাল সার্ভিস থেকে মা দিবসকে সম্মান জানিয়ে একটি স্টাম্প চালু করা হয়। স্টাম্পে রাখা হলো, শিল্পী জেমস হুইসলারের মাকে নিয়ে আঁকা হুইসলার’স মাদার নামের পেইন্টিংটি। আর স্টাম্পের কোণায় ছিল ফুলদানীতে রাখা কার্নেশন ফুল। স্টাম্পটি দেখে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জারভিস। তিনি বিশ্বাস করতেন স্টাম্পের কোণায় ফুলদানীতে রাখা কার্নেশন ফুলের নতুন সংস্করণটি মূলত ফুল ব্যবসা শিল্পের বিজ্ঞাপন ছাড়া কিছুই নয়।

**প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন জারভিস
মা দিবসে মায়েদের সহায়তার জন্য চ্যারিটি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে তহবিল সংগ্রহেরও বিরোধিতা করেছিলেন জারভিস। এমনকি মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমানোর নামে মা দিবসকে ব্যবহার করে টাকা তোলার বিরুদ্ধে সেসময়কার ফার্স্ট লেডি এলিয়ানোর রুজভেল্টকেও চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। মা দিবসের বাজারিকরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন জারভিস। কার্নেশন ফুলের বিক্রি বন্ধের চেষ্টা করায় শান্তি বিনষ্টকারী হিসেবে উল্লেখ করে জারভিসকে একবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আমেরিকান ওয়ার মাদার’স নামে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটির এক বৈঠকে চিৎকার চেঁচামেচি করায় তাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেয়া হয়েছিল। একদিন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের টি রুমে মা দিবসের বিশেষ সালাদ দেখে তা অর্ডার করেন জারভিস। তাকে সালাদ এনে দেয়ার পর দাঁড়িয়ে গিয়ে তা তুলে মেঝেতে ফেলে দেন তিনি। একইসঙ্গে সালাদের দাম পরিশোধ করে হন হন করে বেড়িয়ে যান তিনি।

**পৃথিবীর সব সন্তানের প্রতি জারভিসের পরামর্শ
বাজারমুখী প্রবণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে যেসব সন্তানরা মাকে চিঠি না লিখে শুভেচ্ছা কার্ড কিংবা রেডিমেইড টেলিগ্রাম পাঠাতে লাগলেন, তাদের উদ্দেশ্য করে জারভিস বললেন, ‘এভাবে শুভকামনা, কৃতজ্ঞতা কিংবা ভালোবাসা জানানোর মানে হলো পৃথিবীতে যে নারী তোমার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখতে পর্যন্ত তোমরা আলস্য বোধ করছো।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেকোন অভিনব, গোছালো এবং কৃত্রিম শুভেচ্ছা কার্ডের চেয়ে সন্তানের লেখা অগোছালো একটি লাইনও মায়ের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

**মা দিবস বন্ধ করতে জারভিসের তৎপরতা, অতঃপর মানসিক চিকিৎসালয় শেষ ঠিকানা
মা দিবস বাণিজ্যিকরণ নিয়ে জারভিস এতটাই হতাশ ছিলেন যে একটা সময় দিবসটি বাতিল করার দাবি জানিয়ে করা এক পিটিশনের পক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে ফিলাডেলফিয়ার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি তিনি। হয়তো সেই কষ্টবোধ থেকেই জীবনের শেষ সময়টুকুতে এসে নিভৃতচারী হয়ে যান জারভিস। মা দিবসের এ উদ্যোক্তার নিজের কোন সন্তান ছিল না। সারাজীবন অবিবাহিতই থেকেছেন তিনি। জীবনের শেষ সময়ে পেনসিলভানিয়ার ওয়েস্ট চেস্টারের মার্শাল স্কয়ার সানিতারিয়াম নামের একটি মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ঠাঁই হয় জারভিসের। ১৯৪৮ সালের ২৪শে নভেম্বর জীবনের ওপারে পাড়ি জমান তিনি। তবে মুত্যুর আগ পর্যন্ত জারভিস জানতে পারেননি কৃতজ্ঞ ফুলব্যবসায়ীদের একটি দল তার মানসিক কেন্দ্রে অবস্থানকালীন যাবতীয় বিল পরিশোধ করেছিল।
Muhammad Tofazzal Hosain
Lecturer, Natural Sciences
Daffodil International University

Offline Nurul Mohammad Zayed

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 663
  • Life is simple., Learn and Teach
    • View Profile
    • Dr. Nurul Mohammad Zayed
Dr. Nurul Mohammad Zayed
Assistant Professor 
Department of Business Administration 
Faculty of Business & Entrepreneurship
Daffodil International University

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University