আমরা কি আল্লাহ্‌র প্রতি অন্যায় করতে পারি?

Author Topic: আমরা কি আল্লাহ্‌র প্রতি অন্যায় করতে পারি?  (Read 1426 times)

Offline Nazia Nishat

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 132
  • Test
    • View Profile

আমরা প্রায়ই মানুষের সাথে মানুষের অন্যায় আচরণ নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। আলাপ করার সময়ে আমরা কি ভেবে দেখেছি যে, মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রতি অন্যায় করে কিনা? এটাই ডঃ ইউসুফ ইসলামের নিজের কাছে প্রশ্ন।
আমরা যখন বন্ধু বান্ধবীর সাথে আড্ডা দেই, প্রায়শই ন্যায়নীতি বিষয়ক আলাপ আলোচনা হয়।  বেশির ভাগ সময় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ঃ  মানুষের সাথে মানুষের অন্যায়।  এইসব আলোচনার মধ্যে কখনো কি সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের অন্যায় বিষয়ক কথা বার্তা হয়? এর উত্তরে একজন বলে বসতেই পারে যে, সৃষ্টিকর্তা তো সর্বশক্তিমান–কিভাবে কেউ তাঁর সাথে অন্যায় করতে পারে?     
কারো ক্ষতি করা আর তার সাথে অন্যায় করা এক জিনিস না।  আমরা যতই অন্যায় করিনা কেন তাতে আসলে সৃষ্টিকর্তার কোন ক্ষতি হয়না! অন্যায় কাজ প্রকৃতপক্ষে অন্যায়কারীর চরিত্রের প্রতিফলন ঘটায়।  সাধারণত আমরা যখন কোন উপহার পাই তখন যে উপহার দিলো তাকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ না হলে আমাদের ভিতরে একরকম অপরাধবোধ কাজ করে।  একই সাথে যারা উপহার দেয়নি তাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কথা কি কখনো ভাবি? সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রে একইভাবে, এটা কি অন্যায় হবে যদি আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করি যাদের সৃষ্টিকর্তার দেয়া নেয়ামতের সাথে কোন সম্পর্ক নেই? উদাহরণস্বরূপ আমরা জানি যে একমাত্র তিনিই আমাদের পরীক্ষায় সাফল্য দিতে পারেন।  তাই পরীক্ষার আগে সাফল্য পাওয়ার  জন্য আমরা অতিরিক্ত নামাজ পড়ে প্রার্থনা করি যাতে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাফল্য দেন।  আমাদের সৃষ্টিকর্তা কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেনঃ
“তারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহকে চিনতে পারলো; অতঃপর অস্বীকার করলো, এবং তারা বেশির ভাগই অকৃতজ্ঞ।”[১৬.৮৩]
একবার যখন আল্লাহ্‌ তালা পরীক্ষায় সাফল্য দিয়ে দেন তখন কি আমরা এর প্রেক্ষিতে সরাসরি তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই?  বরং কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের জন্য শিক্ষকের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাই এবং নিজেদের সাফল্যের উপর খুশি হই এবং মনে করি আমরা নিজেরাই কেবল এই অর্জনের জন্য দায়ী।  আরেকটা এমন অবস্থার কথা চিন্তা করি যেখানে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাচ্ছি, ধরে নেই, আমাদের একটি চাকরি দরকার এবং আমাদের ইন্টার্ভিউতে ডাকা হয়েছে।  এ অবস্থায় আমরা কি করি? আমরা সৃষ্টিকর্তার  কাছে প্রার্থনা করি! কিন্তু আমাদের প্রার্থনার প্রতি সৃষ্টিকর্তার উত্তরের জন্য ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা না করে আমরা পাথরের আংটি কিনে ফেলি – যদি আংটি বা পাথর দ্বারা সৌভাগ্য লাভ হয়ে যায়! অতঃপর একজন হয়ত পীরের কাছে যাওয়ার উপদেশ দেয় অথবা ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সদস্যদের সাথে দেখা করার  অথবা কোন ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতার সাথে দেখা করার উপদেশ দিতে পারে।  এ অবস্থায় আমরা সঙ্গে সঙ্গে এসব করতে যাই এটা ভেবে যে, যদি যেকোনো কিছুর দ্বারা কাজ হয়ে যায়, অর্থাৎ- সৃষ্টিকর্তা যদি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়ে দেন অথবা আংটি কাজ করে অথবা যদি ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সদস্য সাহায্য করে অথবা ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতা আশাবাদী কথাবার্তা বলেন।  যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা চাকরি পাচ্ছিনা ততক্ষন পর্যন্ত যদি সবকিছুই কাজ করে তাহলে তো বেশ ভালো! আমাদের এই কাজগুলো প্রমাণ করে যে আমরা যুক্তি সহকারে বিশ্বাস করি যে- আংটি, পীর, বোর্ডের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা সবকিছুরই সমান ক্ষমতা আছে আমাদের চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে! এটা চিন্তা করে আমরা কি সৃষ্টিকর্তার প্রতি অন্যায় করছিনা? এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌ আমাদের কোরআনে বলেছেন যে তিনি শেষ বিচারের দিনে এসব শরীকদের আমাদের সামনে হাজির করে প্রশ্ন করবেন। 
“মুশরিকরা যখন ঐ সব বস্তুকে দেখবে, যেসবকে তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছিল, তখন বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা এরাই তারা যারা আমাদের শেরেকীর উপাদান, তোমাকে সহ আমরা যাদেরকে ডাকতাম। তখন ওরা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা মিথ্যাবাদী।” [১৬:৮৬]
প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তা একজনই এবং বাস্তবে তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী অর্থাৎ অন্য কোন সত্তা বা বস্তুর আমাদের উপকার করার কোন ক্ষমতাই নেই।  যখন আমরা ভাবি যে অন্যান্য জিনিসের ক্ষমতা আছে তখন আমরা অবিশ্বাস প্রদর্শন করি এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি অন্যায় করি যিনি আমাদের যা প্রয়োজন সবকিছু দেন। সৃষ্টিকর্তা ন্যায়কারী,  তিনি অন্যায়কারী মানুষের মতো না।  তিনি তাঁদের পুরষ্কার দিবেন যারা তাঁর প্রতি ন্যায় করেছে যেরকম পবিত্র কিতাবসমূহে বলা হয়েছে।  নিচের এই গল্পটি বর্ণনা করে কিভাবে ইউসুফ (আঃ) ন্যায় দাবী করেছিলেন যাতে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার আগে তাঁর উপর থেকে মিথ্যা অভিযোগগুলো সরে যায় এবং কিভাবে সৃষ্টিকর্তা তাঁকে পুরস্কৃত করলেন।
১২:৫০ “এবং মিশরের বাদশাহ বললেন,”তাঁকে আমার কাছে নিয়ে আসো।” কিন্তু যখন বার্তা বাহক তাঁর কাছে আসলো।  ইউসুফ বললেন “তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও এবং জিজ্ঞাসা কর, “ঐ মহিলাদের মামলার কি হল যারা নিজেদের হাত কেটেছিল?” প্রকৃতই আমার রব তাদের পরিকল্পনা সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে জানেন।”
কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার আগে ইউসুফ (আঃ) চাইলেন বাদশাহ যাতে তাঁর নির্দোষ হওয়ার ব্যাপারটা ঐ মহিলাদের কাছ থেকে যাচাই করে নেয়। 
১২:৫১ “বাদশাহ মহিলাদের বললেন, “মামলাটি কি ছিল যখন তোমরা ইউসুফকে অশ্লীলতায় অভিযোগ দেখেছিলে?” মহিলারা বাদশাহকে বলল, “আল্লাহ্‌ তালা নিখুঁত (যিনি ইউসুফের মতো নির্মল চরিত্র সৃষ্টি করেছেন)!  তাঁর বিরুদ্ধে কোন খারাপ কিছু আমাদের জানা নেই!”  আজিজের স্ত্রী বলল , “এখন সত্য সামনে এসে গেছে; প্রকৃতপক্ষে আমিই তাঁকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করতে চেয়েছিলাম, সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।”
ইউসুফ (আঃ) এর দীর্ঘ সময় ধরে ধৈর্যসহ কারাবাসের পর আজিজের স্ত্রী শেষপর্যন্ত নিজের দোষ স্বীকার করে নিল।  সে বাদশাহের সামনে ইউসুফ (আঃ) কে সব রকম দোষারোপ থেকে মুক্তি দিলো এবং নিজেকেও তার স্বামীর কাছে এই ব্যাপার নিয়ে সকল রকম সন্দেহ থেকে মুক্ত করতে চাইলো।
১২:৫২ “আজিজের স্ত্রী বলল, “এটা এজন্য বলছি, যাতে আজিজ জেনে নেয় যে, আমি গোপনে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।  আরও এই যে, আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণাকে এগুতে দেন না।””
১২:৫৩ “আজিজের স্ত্রী বলল , “আমি নিজেকে (দোষমুক্ত) পাপমুক্ত করছিনা।  নিশ্চয় মানুষের আত্মা মন্দ কর্মের দিকে ঝুঁকে রয়েছে কিন্তু আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন সে এর অন্তর্ভুক্ত নয়।  নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল,অসীম দয়ালু।””
আজিজের স্ত্রী নিজের দোষ স্বীকার করলো যে, সেই ইউসুফ (আঃ) কে অশ্লীল প্ররোচনা  দিয়েছিলো।  যাহোক, যেহেতু আর বেশি কিছু ঘটেনি সে মাফ চেয়ে নিল।  বাদশাহ ইউসুফ (আঃ) এর চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে, তিনি শুধুমাত্র ভালো চরিত্রের অধিকারীই নন, তিনি অন্যদের ভিতরকার ভালো সত্তাকে জাগাতেও সক্ষম।  তাই বাদশাহ চাইলেন এই ভালো চরিত্রের মানুষ তার কাজে নিযুক্ত হোক।
১২:৫৪ “বাদশাহ বললেন, “তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো; আমি তাকে আমার নিজের বিশ্বস্ত হিসেবে নিযুক্ত করবো।” অতঃপর যখন বাদশাহ ইউসুফের সাথে মতবিনিময় করল, তখন বললঃ “আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আজ থেকে আপনার বিশ্বস্ততা পূর্ণরূপে প্রমানিত হল এবং আপনি বিশ্বস্ত হিসাবে মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন!”
বাদশাহ শুধুমাত্র ইউসুফ (আঃ) কে সকল রকম মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্তই করলেন না, আদালতে তিনি তাঁকে একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিলেন।  এভাবে ইউসুফ (আঃ)এর ধৈর্য এবং পূর্ণ বিশ্বাসের কারণে আল্লাহ্‌ তাঁকে পুরস্কৃত করলেন।     
১২:৫৫ “ইউসুফ বললেন, “আমাকে দেশের রাজকোষের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করুন।  আমি এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করবো তাঁর মতো যে জানে এগুলোর গুরুত্ব কতটুকু।””
 ১২:৫৬ “এবং এভাবে আমি এই ভূমির উপর আধিপত্য দিয়ে ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং সে যেখানে চায় তাঁকে সেখানেই নিযুক্ত করলাম। আমি যার উপর খুশি হই তাঁর প্রতি দয়া দেখাই এবং যে ভালো কাজ করে তাঁর প্রতিদান নষ্ট করিনা।”
যেহেতু আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ক্ষমতা নেই, এটাই সঠিক এবং ন্যায় কাজ যে নামাজ পড়ার পর আমরা ধৈর্য সহকারে তাঁর দেওয়া সমাধানের জন্য অপেক্ষা করি- এটাই ন্যায়পরায়ণতা।  আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যদি আল্লাহ্‌ কোন সমস্যার সমাধান না করেন অথবা উপশম না করেন, আর কেউ সেটা করতে পারবেনা! আমরা যদি নামাজ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন (সমস্যার ভয় না পেয়ে এবং কল্পনায় বানানো শক্তির পিছে না ছুটে) করতে পারি তবে, আল্লাহ্‌র নেয়ামতের কোন সীমানা নেই।  তাঁর আসল পুরষ্কার শেষ বিচারের দিনের পরই সকলেরই বোধগম্য হবে।
১২:৫৭ “কিন্তু সত্যই পরকালের পুরষ্কারই সর্বোত্তম তাঁদের জন্য যারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং দৃঢ়তার সাথে ন্যায়পরায়ণ থাকে।”

Offline Md. Zakaria Khan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 376
  • active
    • View Profile
We should love Allah. May Allah bless us for our success.
« Last Edit: June 06, 2017, 03:13:34 PM by Md. Zakaria Khan »

Offline Ms Jebun Naher Sikta

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 190
  • Test
    • View Profile
May Allah(s.w.t) be kind to all of us.