সফলদের স্বপ্নগাথা - ১

Author Topic: সফলদের স্বপ্নগাথা - ১  (Read 1539 times)

Offline masud.eng

  • Newbie
  • *
  • Posts: 27
  • Test
    • View Profile
সফলদের স্বপ্নগাথা - ১
« on: September 06, 2015, 03:02:52 PM »
অন্যের কথা শুনে কে বড় হয়েছে
মিশেল ইয়েও

মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী মিশেল ইয়েও। জন্ম ১৯৬২ সালের ৬ আগস্ট। জেমস বন্ড সিরিজের টুমরো নেভার ডাইস (১৯৯৭) সিনেমায় বন্ড গার্ল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আলোচিত তিনি। ২০০৯ সালে পিপল ম্যাগাজিন তাঁকে পৃথিবী সেরা ৩৫ অভিনেত্রীর একজন হিসেবে ঘোষণা দেয়।

সিনেমার পর্দায় নিজের অ্যাকশন দৃশ্যে আমি নিজে অভিনয় করি। স্টান্টম্যান ছাড়া নিজেই ঝুঁকি নিয়ে নানা দৃশ্যে অভিনয় করি। আমাকে অনেকেই বলেন, ‘অভিনেত্রী হিসেবে আমি ঝুঁকির দৃশ্যে অংশ নিতে পারব না।’ আমি সবার কথা এড়িয়ে নিজের অভিনয় নিজে করে যাই। অন্যের কথা শুনে কে বড় হতে পেরেছে? আর আমি যদি ঝুঁকিই না নিতে পারি তাহলে আমি কিসের জন্য নারী! নারীকে সব সময় অভিযাত্রীর মতো ঝুঁকি নেওয়া জানতে হয়, শিখতে হয়। তুলার চাদরে মুড়িয়ে থাকার জন্য নারীর জন্ম নয়। দরজা ভেঙে মানুষের মতো নিজের স্বপ্নের সিঁড়ি দিয়ে ঘাড় উঁচিয়ে দৌড়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাই নারীর সগৌরব।
আমার জন্ম চীনা-মালয় এক পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে প্রকাশের জন্য মনের চেয়ে শরীরে জোর দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। শারীরিক ভাষা মুখের ভাষার চেয়ে অনেক শক্তিশালী। পৃথিবীতে যাঁরা প্রভাব রাখেন, তাঁরা সবাই কিন্তু শরীর দিয়ে কথা বলতে জানেন, সেভাবেই কথা বলেন। শারীরিক ভাষা কিন্তু মুখের কথার প্রভাব বাড়িয়ে দেয়। অভিনয়শিল্পী হতে চাইলে শব্দের ভাষার চেয়ে শরীর আর মনের ভাষায় শক্ত ধার আনা প্রয়োজন। সাধারণত দেখা যায়, আমাদের মুখের বলা কথায় তেমন বৈচিত্র্য নেই। কিন্তু আমাদের তাকানোর ধরন, চোখের পাতা নাড়ানোর ভাষায় প্রতিমুহূর্তে বদল আনা যায়। সিনেমার দর্শকেরা যদি সব সিনেমায় একই আমাকে দেখে তাহলে আমি অভিনয়শিল্পী নই। সে-ই প্রকৃত অভিনয়শিল্পী যিনি নিজে কোনো চরিত্রকে শরীর আর মনে ধারণ করে দর্শককে তার মধ্যে টেনে নেন।
১৬ বছর বয়সে আমি পিঠের ব্যথার জন্য ব্যালে নাচ ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি লন্ডনের রয়েল একাডেমি অব ড্যান্সে নাচ শিখতাম তখন। তার আগে আমি মানুষের কাছে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার নানা গল্প শুনতাম। ১৬ বছরে আমার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। চিকিৎসক আমাকে নাচের বদলে অন্য কিছু করার পরামর্শ দেন। সেই অন্য কিছু শব্দটাই আমাকে বদলে দেয়। ব্যালে নাচে কিন্তু নাচের চেয়ে অভিব্যক্তিই বেশি। আমি নাচ শেখা বাদ দিই, কিন্তু অভিব্যক্তি শেখার জন্য নাচের একাডেমিতে থেকে যাই। আমি নাটক শেখার চেষ্টা করি। চোখ দিয়েও যে নাচা যায় সেটা সেখানেই শিখি।
হলিউডে এশীয়দের বড় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয় কম। অনেক বছর ধরে কখনো রাঁধুনি, কখনো রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হিসেবেই এশীয়দের হলিউডে অভিনয় করতে হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে এই ধাঁচে অন্যরকম পরিবর্তন আসে। এখন এশিয়ানরাও হলিউড সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করছে। সেই সময়টায় কেউ আমাকে যদি এশিয়ান চরিত্রে অভিনয় করতে বলত, আমি অভিনয় করতাম না। আমি একজন অভিনয়শিল্পী; এশিয়ান বা আফ্রিকান বা মঙ্গলগ্রহের কোনো প্রাণী আমার পরিচয় হতে পারে না।
আমি প্রতিদিন নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। নারী হিসেবে সমাজ আমাকে অনেক নিয়ম আর শৃঙ্খলে আটকে রাখার চেষ্টা করে, আমি প্রতিদিন নিয়ম করে সেসব নিয়ম ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাই। নারীর শক্তি অনেক।
শিশুরা সব সময় অনুপ্রেরণা পায় এমন কাজই আমি করার চেষ্টা করি। শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রতি মাসেই কোনো না-কোনো স্কুলে যাই। আমি সবাইকে একটা কথাই বোঝানোর চেষ্টা করি, দুর্ঘটনায় যে মানুষটি মরে যায় সে কিন্তু আসলে বেঁচে যায়, তার বেঁচে থাকা পরিবারের সদস্যদের এই পৃথিবীতে সে মেরে রেখে যায়।
আমি পশ্চিমের দুনিয়ায় অভিনয় করলেও আমার শিকড়ের কথা ভুলে যাই না। শিখরে উঠতে গেলে শিকড় ভুললে চলবে না। আমি নারী অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। এশিয়ার নারীদের পায়ের সামনে অনেক বাধা থাকে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা সম্মান পান না। এই অঞ্চলের পরিবারের কাছে ছেলেসন্তানই মানুষ। নারীদের ইচ্ছে করেই দরজার বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। এই বাধা সমাজের মানুষেরাই নিজেরা তৈরি করে রেখেছে। আমাদের সবার প্রচেষ্টা দিয়ে এই বাধা দূর করতে হবে। আমরা রাতারাতি বাধা-বিপত্তি ডিঙাতে পারব না, কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?
সিনেমায় অভিনয় করার সময় আমাকে সবাই বলে, ‘আরে তুমি তো নারী হিসেবে অনেক অ্যাকশন দেখাতে পারো।’ জেমস বন্ডের টুমরো নেভার ডাইস সিনেমার পরিচালক আমার সব ধারণা বদলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মিশেল, তুমি অ্যাকশন পারো বলে তোমাকে সিনেমায় নেওয়া হয়নি। তুমি অভিনয় জানো বলে তোমাকে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মেধা আর মাথা দিয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করে যাও।’ সেই থেকে মেধা, মাথা আর পরিশ্রম দিয়েই আমি এগিয়ে যাচ্ছি।
ব্যক্তিজীবনে আমি পাঁচজন সন্তানের মা। এই পাঁচ সন্তানের জন্ম আলাদা আলাদা পাঁচ মায়ের গর্ভে হলেও তারা সবাই আমার সন্তান। মানুষ যখন নিজের সন্তান ছাড়িয়ে অন্যের সন্তানকে ভালোবাসতে শেখে সে আসলে তখন ঈশ্বরকে খুশি করে। আমি ঈশ্বরকে পাঁচ গুণ খুশি করতে পারি।

প্রাচীন চীনা সাহিত্যে নারীদের সব সময় শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে দেখা যায়। যোদ্ধা, তলোয়ারবিদ হিসেবে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিভিন্ন রূপকথা আমরা পড়ি। রূপকথা কেন বাস্তব হতে পারে না? নারীরাও তো সব পারে, কেন তাদের আটকে রাখা হবে? চীনা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আমি বাঘের বছরে জন্মেছি, আমার রাশি হলো সিংহ। আমি কেন সমাজকে ভয় পাব?
সূত্র: ইন্টারনেট। ম্যারি ক্ল্যায়ার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার অবলম্বনে ভাষান্তর করেছেন জাহিদ হোসাইন খান


কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক প্রথম আলো