ওজন কমাতে নিয়ম মেনে পরিমাণমতো ভাত খেতে পারেন। মডেল: দয়িতা। ছবি: খালেদ সরকারধোঁয়া ওঠা এক প্লেট ভাত নিমেষেই মন ভালো করে দেয় ভেতো বাঙালির। তিন বেলা খাবারের দুই বেলাতে অনেকে ভাত খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়ায় ইদানীং উপেক্ষা করছেন এই খাবারটিকে। কিন্তু ওজন তো কমে না। কী দরকার ভাত খাওয়া বন্ধ করার? ভাত খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই বিষয়ে পরামর্শ দিলেন ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলো।
আখতারুন্নাহার বলেন, ‘ওজন কমানোর জন্য শুরুতেই আমরা ভাতটাকে বাদ দিয়ে দিই। কিন্তু ভাত খাওয়া তো আমাদের অনেক দিনের অভ্যাস। তার জন্য মন টানবেই। দুপুরে আমরা ভাত না খেয়ে এটা-ওটা নানা জিনিস খেয়ে পেট ভরাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সেই খাবারগুলোতে অতিরিক্ত তেল থাকে, তাই ওজন কমার বিপরীতে বেড়ে যেতে পারে।’ তাঁর মতে, পরিমাণমতো ভাত দুপুরে ও রাতে খেয়ে নিলে পেটের সঙ্গে সঙ্গে মনও ভরবে। ভাজাপোড়া-জাতীয় খাবারের দিকে আকর্ষণ থাকবে না। থাকবে না ওজন বাড়ার আশঙ্কাও।
সকাল-দুপুর-রাত—তিন বেলা না হোক, দুই বেলা তো ভাত আমরা খেতেই পারি। অবশ্যই তা নিয়ম মেনে। দুই বেলা ভাত খেয়েও কীভাবে আমরা আমাদের ওজনটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব, তা নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন আখতারুন্নাহার। প্রথমেই ভাতটাকে একটা মাপের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সেটা হতে পারে এক কাপ কিংবা দেড় কাপ। যেটুকু ভাত খাবেন, ঠিক সমপরিমাণ কাঁচা সবজির সালাদ খেতে হবে। এই সালাদে থাকতে পারে শসা, টমেটো, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি। খুব সামান্য লবণ। মনে রাখতে হবে, সালাদে তেল দেওয়া যাবে না। আরেকটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আমরা ভাত দিয়ে তরকারি খাব না, তরকারি দিয়ে ভাত খাব। সেই হিসাবে খাওয়ার শুরুতে যদি আমরা পাতে ভাত নেওয়ার বদলে তরকারি নিই, সেটা হবে একটা ভালো উদ্যোগ। সালাদ কিংবা সবজির তরকারি বেশি করে নিয়ে পরে ধীরে ধীরে প্লেটে ভাত তুললাম। কিন্তু সেটাও খুব অল্প করে। এতে দেখবেন ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমে গেছে অনেকখানি। ভাতের সঙ্গে খেতে হবে ডাল। মাছ বা মাংস—যেকোনো একটা খাওয়া যায়। সালাদ, ডাল ইত্যাদি আপনার ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেবে। খেতে বসে অজান্তে বেশি যেন খেয়ে না ফেলেন, সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে।
মনে রাখতে হবে, ভাত যদি খেতেই হয়, তবে রাইস কুকারে রান্না করা ভাত বা বসাভাত খাওয়া যাবে না মোটেও। বাদ দিতে হবে ভাতের সঙ্গে কোনো আলুভর্তা বা আলুর তরকারি। এর বদলে তাজা সবজি ও শাক খেতে হবে বেশি পরিমাণে। একটা কাজ ইচ্ছা করলেই করতে পারেন আপনি, তা হলো ভাতের টেবিলে বসেই পান করে নিন এক গ্লাস পানি। এরপর এক বাটি সালাদ। দেখবেন, ভাতের খিদেটা কমে গেছে।
প্লেটভর্তি ভাতের বদলে এক চামচ ভাতই তখন মনোযোগ পাবে আপনার। আবার নিজেকে দুই কাপ ভাত থেকে দেড় কাপ এবং এরপর এক কাপ, এ রকম গণ্ডির মধ্যে বেঁধে ফেললে দেখবেন, ওজন আর বাড়ছে না। ওজন কমানোর জন্য ‘আমি তো ভাত খাই না’, তারপরও এমন মোটা হচ্ছি কেন? এমন প্রশ্ন যাঁরা করেন, তাঁরা একটু ভেবে দেখুন তো, ভাত বন্ধ করলেও প্রক্রিয়াজাত কিংবা তেলে ভাজা খাবার কি বন্ধ করেছেন আপনি? ডায়েটে ভাত বন্ধ নয়, বন্ধ করলে করতে হবে প্রক্রিয়াজাত-তেলে ভাজা খাবার ও কোমল পানীয়। দেখবেন, শরীরের স্থূলভাব কমে যাবে এমনিতেই।
আর যারা আমরা নিয়মিত পরিমাণমতো ভাত খাচ্ছি, তারা মনে রাখব, খাওয়ার পরপরই বিছানায় যাওয়া যাবে না। হোক সেটা দুপুরের ছোট্ট তন্দ্রা। দুপুর ও রাতে ভাত খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে নিতে হবে।
খাবারের চেয়ে ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই সচেতন হওয়া যায় সেদিক থেকেও। আমরা আমাদের পছন্দমতো ভাত খেলাম ঠিকই, কিন্তু যেটুকু জায়গায় রিকশার বদলে হেঁটে যাওয়া যায়, সেখানে হেঁটে গেলে এবং টুকটাক ঘরের কাজ শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে সাহায্য করবে।