আমাদের দেশে নাক, কান ও গলার রোগ বেশ হয়ে থাকে৷ সাধারণ নাক, কান ও গলার রোগ সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে৷ কিন্তু তা জানার পূর্বে নাক, কান ও গলার গঠন ও কাজ জানানো হলো৷
নাকের গঠন: শ্বাস নালীর প্রথম অংশ নাক৷ নাকের গহ্বর একটি সেপটাম বা প্রাচীর দিয়ে দুভাগে বিভক্ত৷ এর দুই অংশ নাকের ছিদ্র দিয়ে বাইরের দিকে উণ্মুক্ত৷ পিছনের দিকে নাকের গহ্বরের দুটো ছিদ্র দিয়ে ফ্যারিংসের সাথে মিলে গেছে৷ নাকের গহ্বরের পার্শ্বের দেওয়ালে তিনটি বাঁকানো ঝিনুকের মত অংশ রয়েছে যাকে কন্কা বলে৷ এগুলো নাকের প্রতিটি গহ্বরকে তিনটি পথে বিভক্ত করে৷ উপরের পথ, মাঝখানের পথ এবং নিচের পথ৷ চোখের জল একটা নালী দিয়ে নিচের পথের সামনের দিকে আসে, এই নালীর নাম নেসোলেক্রিমাল ক্যানাল৷ এ কারণেই কাঁদলে চোখের পানি নাকের ভিতরে চলে আসে৷ নাকের গহ্বরের ভিতরটা শ্লেষ্মাঝিল্লী দ্বারা পুরোপুরি আবৃত থাকে৷ শ্লেষ্মাঝিল্লীর উপরে থাকে ছোট ছোট চুলযুক্তি (সিলিয়া) এপিথেলিয়াম কোষ৷ এই ছোট ছোট চুলগুলো সব সময় পেছনের দিকে অর্থাত্ নাকের গহ্বরের পেছনের খোলামুখের দিকে আন্দোলিত হয়৷ নাকের গহ্বরের উপরের অংশে ঘ্রাণ গ্রহনক্ষম অলফ্যাক্টরি কোষকলা রয়েছে৷
নাকের কাজ:
*
নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া হয়৷ নাকের ছিদ্রপথ দিয়ে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাসের বায়ু আর্দ্র ও উষ্ণ হয় এবং শ্লেষ্মাঝিল্লীর আর্দ্র পরিবেশের সংস্পর্শে আসে৷ এতে বায়ুর ধূলিকণার বেশ বড় অংশ এখানেই রয়ে যায় যা পরবর্তীতে প্রশ্বাসের সাথে বের হয়ে আসে৷ নাক এখানে ফিল্টারের বা ছাঁকুনির কাজ করে৷ তাই ফুসফুসে যে বাতাস যায় তা অনেক পরিষ্কার থাকে৷যে সব জীবাণু নাক দিয়ে ঢোকে এবং ধূলিকণার সাথে বের হয়ে যায় না সেগুলোকে নাকের শ্লেষ্মাঝিল্লীর সংস্পর্শে এসে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং মারা যায়৷
*
নাক এবং নেসোফ্যারিংস শব্দ সৃষ্টিতে সাহায্য করে৷
*
নাকের সাহায্যে আমরা ঘ্রাণ নেই৷
কানের গঠন
কানের প্রধান তিনটি অংশ
*
বহিঃকর্ণ বা বাইরের কান
*
মধ্য কর্ণ বা মাঝের কান
*
অন্তঃকর্ণ বা ভিতরের কান
বহিঃকর্ণ
কান বলতে আমরা সাধারণভাবে যা দেখি সেটা মূলত বহিঃকর্ণ৷ এটির আবার দুটো অংশ রয়েছে৷ একটা হচ্ছে কানের পাতা বা অরিকল যা তরুনাস্থি ও চামড়া দিয়ে গঠিত৷ আর একটা হচ্ছে কানের বাইরের ছিদ্রপথ বা এক্সটারনাল অডিটরি ক্যানেল৷ এই ছিদ্রপথের বাইরের এক তৃতীয়াংশ তরুনাস্থি ও চামড়া দিয়ে গঠিত আর ভেতরের দিকের দুই তৃতীয়াংশ অস্থি চামড়া দিয়ে গঠিত৷ এই ছিদ্রপথ একটা অঁাকা বঁাকা সুড়ঙ্গের মতো৷ সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে রয়েছে কানের পর্দা বা টিমপেনিক মেমব্রেন৷ এই অন্ধ গলিপথটি আঁকা বাঁকা থাকায় কানের পর্দায় সহজে বাইরের আঘাত এসে লাগে না৷
কাজঃ এই অংশের কাজ হচ্ছে বাইরের শব্দ তরঙ্গ যা আমাদের কানে পৌঁছে তাকে মধ্য কর্ণের দিকে পরিচালিত করা৷ এছাড়াও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কানের এই অংশের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে৷
মধ্য কর্ণ
মধ্য কর্ণে রয়েছে কানের পর্দা বা টিমপ্যানিক মেমব্রেন এবং ছোট ছোট তিনটি হাড়৷ কানের পর্দা বহিঃকর্ণ ও মধ্য কর্ণের মধ্যে অবস্থিত৷ এটি একটি পাতলা পর্দা যা একটি প্রায় গোলাকার হাড়ের রিং দিয়ে টান টান অবস্থায় থাকে৷ মর্ধ কর্ণে অডিটরি টিউব নামে একটি নালী থাকে যা নাকের ভিতরের অংশে ন্যাসোফ্যারিংস এর সাথে মাঝের কানের সংযোগ রক্ষা করে৷ এই নাসাকর্ণ পথের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে৷ খাওয়ার সময় বা ঢোক গেলার সময় এই নলের মুখ খুলে যায় ও হাওয়া ঢোকে৷ মধ্য কর্ণের ভিতরে সবসময় কিছু বাতাস থাকে৷ এই হাওয়া বাইরের পারিপার্শ্বিক বায়ু চাপের সঙ্গে মধ্যকর্ণের সমতা রক্ষা করে৷ এই বায়ু চাপের ভারসাম্যের হেরফের হলেই মধ্যকর্ণের অসুবিধা দেখা দেয়৷ এছাড়াও কধ্যকর্ণে রয়েছে মাস্টয়েড বায়ুকোষ প্রণালীর মুখ৷ ম্যাস্টয়েড কোষে টিমপেনিক ক্যাভিটির মত বাতাস থাকে৷ এই বাতাস অডিটরী নালী দিয়ে ওই জায়গাতে যায়৷
কাজঃ শোনার ক্ষেত্রে কানের এই অংশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে৷ বায়ুর মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ কানের পর্দার ওপর পড়ে৷ তরঙ্গের ধাক্কায় কানের পর্দা আন্দালিত হয় এবং এর ভিতরের গায়ে লেগে থাকা ছোট ছোট হাড়গুলোতে তা ছড়িয়ে দেয়৷ এভাবেই মধ্যকর্ণ থেকে শব্দ তরঙ্গ অন্তঃকর্ণে গিয়ে পৌঁছায়৷
অন্তঃকর্ণ
কানের ভেতরের এই অংশটি অনেকটা শামুকের খোলের মতো অস্থি দিয়ে গঠিত৷ অস্থির ভেতরে আছে পর্দার মতো বস্তু৷ এর তিনটি অংশ রয়েছে৷ যেমনঃ
কর্ণমুখ (ভেসটিবিউল)
অর্ধবৃত্তাকার নালীপথ (সেমিসারকুলার ক্যানাল)
শ্রবণযন্ত্র (ককলিয়া)
কাজঃ কানের ভেতরের এই অংশে এসে শব্দ তরঙ্গ বিদ্যুত্ তরঙ্গে পরিণত হয়৷ এই বিদ্যুত্ তরঙ্গগুলো মস্তিস্কে পৌছালে আমরা শুনতে পাই৷ এছাড়া এই অংশে যে যন্ত্রাদি রয়েছে তার সাহায্যে মানুষ নিজের ভারসাম্য রক্ষা করা, চলাফেরা করা, দাড়িয়ে থাকা, ইত্যাদি যাবতীয় কাজ-কর্ম করে থাকে৷ অনেক সময় দেখা যায়, চরকির মতো কিছুক্ষণ ঘোরার পর স্থির হয়ে দাঁড়ানো যায় না, মাথা ঘুরতে থাকে৷ এর পেছনে যে কারণ দায়ী তা হলো ক্রমাগত ঘোরার ফলে ফেসটিবিউল বা কর্ণমূলে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, তার জের বেশ কিছুক্ষণ ধরে অনুভূত থাকে৷ আর তাতেই মাথা ঘোরে৷ ভেসটিবিউলের ত্রুটি কিংবা অস্বাভাবিক থাকলে একই উপসর্গ দেখা দেয়৷
নাক কান গলার কিছু সাধারণ রোগের নাম নিম্নে দেওয়া হলো-
নাক
১. নাকের ভিতর বাইরের পদার্থ প্রবেশ করা
২. নাক দিয়ে রক্ত পড়া
৩. নাকের পলিপ
৪. নাকের সংক্রমণ বা প্রদাহ
৫. ঘ্রাণ ইন্দ্রীয় নেই
৬. সাইনোসাইটিস
কান
১. কানের ভিতরে বাইরের পদার্থ প্রবেশ
২. কানপাকা
৩. কানে ফোড়া
৪. বধিরতা
গলা
টনসিল