সহিংস প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মধ্যে নেপালের আলোচিত নতুন সংবিধান গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
গতকালও নতুন সংবিধানে দেশকে সাত রাজ্যে বিভক্ত করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এদিন দক্ষিণ নেপালের পারসা জেলায় বিক্ষোভের সময় একজন নিহত হন। খবর বিবিসির।
নেপালের দীর্ঘ বিলম্বিত সংবিধান প্রণয়ন ও গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়ার শেষ দিকে এর বিরোধীরা সহিংস বিক্ষোভ করেন, যাতে পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হন।
নতুন সংবিধানে যা যা থাকছে: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা,প্রাচীন যুগ থেকে প্রচলিত ধর্ম ও সংস্কৃতির সুরক্ষা ,ধর্মান্তরকরণ নিষিদ্ধ ,ধর্মীয় ও লৈঙ্গিক সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ ,সমকামী, উভকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের সুরক্ষা (এশিয়ার মধ্যে প্রথম) ,জাতীয় ফুল রডোডেনড্রন, জাতীয় পশু গরু
নতুন সংবিধান হবে নেপালের প্রথম পূর্ণ গণতান্ত্রিক সনদ। সাংবিধানিক গণপরিষদে প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদব গতকাল নতুন সংবিধানে স্বাক্ষর করার পর সেটি গৃহীত হওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর গণপরিষদের সদস্যরা হর্ষধ্বনি করে উল্লাস প্রকাশ করেন। ভাষণে রামবরণ দেব বলেন, ‘আমি নেপালের প্রতিটি মানুষকে অভিনন্দন জানাই।’
নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা পদত্যাগ করে একটি নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদারপন্থী কমিউনিস্ট নেতা কে পি ওলি নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।
নতুন সংবিধান তৈরি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। নেপালকে যাঁরা এত দিন চলে আসা হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান, তাঁরা নতুন সংবিধানটির বিরোধী। সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীগুলোর আশঙ্কা, এই সংবিধান কার্যকর হলে বৈষম্য তৈরি হবে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের থারু ও মদেশি জনগোষ্ঠীর বিক্ষোভে নেপালের বিভিন্ন স্থানে জীবনযাত্রা ও কার্যক্রমে বেশ কয়েক সপ্তাহ বিঘ্ন ঘটে। কর্তৃপক্ষ কারফিউ জারি করে এবং নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে।
গতকাল সংবিধান গৃহীত হওয়ার আনন্দে আতশবাজি ফোটানোর পাশাপাশি নেপালের কয়েকটি স্থানে চলে বিক্ষোভ। নেপাল পুলিশের মুখপাত্র কমল সিং বাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে গণপরিষদের কয়েকজন সদস্যের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে।
নেপালে ২০০৪ সালে একটি শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে সরকার ও মাওবাদী বিদ্রোহীদের ১০ বছরব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটে। পরে মাওবাদীরা নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তোলেন। ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে তাঁরা সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এরপর ২০০৮ সালে দেশটির ২৪০ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক মতবিরোধের কারণে পার্লামেন্টে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের চেষ্টা বারবার ভেস্তে যায়।