বেতন না বাড়ায় বিপাকে বেসরকারি চাকুরেরা

Author Topic: বেতন না বাড়ায় বিপাকে বেসরকারি চাকুরেরা  (Read 1198 times)

Offline myforum2015

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 218
  • সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রন এক আল্লাহ্ তায়ালারই
    • View Profile
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও বেসরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ছে না। অথচ দেশের চাকুরেদের বেশীরভাগ বেসরকারি খাতে কাজ করেন। ফলে বেসরকারি চাকুরেদের বেতন না বাড়ায় বিপদে নানামুখী বিপাকে পড়েছেন তারা। ইতোমধ্যে বেসরকারি চাকুরেদের দু-একটি সংগঠন বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

বেসরকারি চাকুরেদের ৪১টি খাতের নিন্মতম বেতন নির্ধারণ করে দেয় সরকারের গঠিত ‘নিম্নতম মজুরি বোর্ড’। বোর্ড নিজে থেকে বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে না। তাই সরকারি নির্দেশনা না পেলে বেসরকারি চাকুরেদের বিষয়ে তাদের (বোর্ডের) কিছুই করার থাকে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব মিতসু শাওলিন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘যদি কোনো খাতের সংগঠন তাদের বেতন বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায় তবেই মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নতুন করে বেতন পর্যালোচনার সুযোগ হয়। আমরা উদ্যোগী হয়ে কিছু করতে পারি না।’

অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ঘোষণা আসার কথা রয়েছে কয়েক দিনের মধ্যে।

কিন্তু, বেসরকারি চাকুরেদের বেতন বৃদ্ধি না পাওয়ায় তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেনন্টেটিভ এ্যাসোসিয়েশন(ফারিয়া), ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

আবার কেউ কেউ সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে দাবি জানাচ্ছে। গত ২৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে ওষুধ কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেনন্টেটিভদের (এমআর) সংগঠন ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ এ্যাসোসিয়েশন(ফারিয়া)-এর ঢাকা মহানগর শাখা।

বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে দেশব্যাপী প্রায় আড়াই লাখ এমআর কাজ করে। তাদের আলাদা কোনো বেতন কাঠামো নেই। নিজেদের নতুন বেতন কাঠামো গঠন ও বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্মানজনক বেতন নির্ধারণে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবি না মানলে আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।

সংসার চালাতে হিমসিম

‘ইনফোসিস’ নামের বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরি করেন শফিক আহমেদ। থাকতেন আজিমপুর কবরস্থানের পাশের একটি এপার্টমেন্টে, ভাড়া ১৮ হাজার টাকা। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই বাসা ছেড়ে উঠেছেন কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি বাসায়, ভাড়া ১৫ হাজার টাকা।

শফিক আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাজার খরচই অনেক বেড়ে গেছে। আসছে জানুয়ারিতে বাসাভাড়া বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিল মালিক। কিন্তু আমার বেতন বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। তাই আগেই কম ভাড়ার বাসায় উঠলাম। কষ্ট করে ওলি-গলি দিয়ে যাতায়াত করতে হবে আর কী!’

আন্দোলনে বেসরকারি সংগঠন

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সংগঠনের নেতারা অবিলম্বে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। বেতন বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে কাজ করা এই সংগঠটির নেতা ওয়াজেদুল ইসলামসহ অনেকে বলছেন, ‘একই বাজারে সবাই যায়, পণ্যের দামও সমান। তাই সরকারি-বেসরকারি চাকুরেদের বেতনের সামঞ্জস্য আনা দরকার।’

সরকারি বেতন-ভাতার অংশ (এমপিও-মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) পাওয়ার দাবি জানিয়ে কয়েকদিন যাবত শহীদ মিনার এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন করছেন অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এই আন্দোলন এখনো চলছে।

এমপিও’র বাইরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. এশারত আলী বলেন, ‘বেতন বৃদ্ধির কথা কার কাছে বলব? ঠিকমতো বেতনই তো পাই না। সরকার এমপিওভুক্তির মাধ্যমে আমাদের স্বীকৃতি দিক। এটাই আমাদের চাওয়া। শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’

বেতন বাড়ানোর দাবি সবার

সাংবাদিকরা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের দাবি মিডিয়ায় তুলে ধরেন। বেসরকারি খাতের কাজ করাদের মধ্যে তারাও রয়েছেন। এই খাতে সরকার ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করলেও প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো তা পালন করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাই চলমান অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন ও নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণার দাবি ইতোমধ্যে তুলেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংবাদপত্রে অষ্টম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা হয়েছে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর কয়েকদফা বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আরেক দফা পণ্যমূল্য বেড়েছে। তাই সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য কমানোর জন্য নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণার দাবি জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি দল আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ বলেন, ‘অবশ্যই সরকারি কর্মচারীদের বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো উচিত।’

বেতন না বাড়লেও পণ্যমূ্ল্য বেড়েছে

অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর পণ্যমূল্য আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু বেসরকারি চাকুরেদের বেতন বৃদ্ধি না পেলেও বাড়তি দামে বাজার করতে হচ্ছে। এটা বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে বেতনে মূল অংশের (বেসিক) বাড়তিটুকু পাবে। ভাতা বাড়বে ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে।

এই পদ্ধতিটি নিত্য-পণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা।

একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন শফিকুল ইসলাম। তার মতে, ‘এইবার বেতন বাড়ার উপলক্ষে একবার বাজারে নিত্য-পণ্যের দাম বেড়েছে। আগামীবার ভাতা বাড়ার সময়েও পণ্যের দাম বাড়াবে ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মূলত বেসরকারি খাতের মানুষ।’

বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী পরিষদের সভাপতি হানিফ উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি পেশাজীবীদের অবশ্যই বেতন-ভাতা বাড়ানো দরকার। এদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষের মজুরিও নির্ধারণ হওয়া উচিত বলে মনে করি।’

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/আইজেকে/এনআই/অক্টোবর ২৯, ২০১৫)
Solaiman Hoque
Lecturer (Mathematics)
Dept. of NS
solaiman.ns@diu.edu.bd