আমেরিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাভিয়েশন ম্যাগাজিনে ডেবরা কোহেনের খুবই সফল একটি ক্যারিয়ার ছিল। কিন্তু ক্যারিয়ারের মাঝপথে হঠাৎ করেই চাকরি ছেড়ে দিলেন কোহেন। উদ্দেশ্য, চাকরির পেছনে না ছুটে বাড়িতে থেকে নিজের শিশুকন্যার আরো ভালোভাবে দেখশোনা করা। সন্তানের জন্য চাকরি ছেড়ে দেওয়া একজন মায়ের চ্যালেঞ্চগুলো কি কি, কোহেনের জবানিতে তা তুলে ধরেছে বিবিসি। সন্তানের ভালোর জন্য নিজের আকর্ষনীয় ক্যারিয়ার বিসর্জন দেওয়ায় কোহেনের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। বরং নিজেকে খুবই গর্বিত মা দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমার সারা শরীরে শিহরণ খেলা করছিল! কারণ, এটা আমি করছি আমার সন্তানের জন্য।’ একই সাথে এ সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও জানালেন কোহেন। ’এটা ঠিক যে আমরা এখন এমন একটা পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে একজনের আয় দিয়ে চলাটা খুবই কষ্টকর এবং অনেক সময় সেটা সমাজের চোখে দৃষ্টিকটুও। আপনি চাকরি-বাকরি বাদ দিয়ে বাড়িতে সন্তানের সেবা করছেন, এটা আধুনিক যুগে অনেকেই ভালোভাবে নিতে পারেন না। আমার স্বামী একজন শিক্ষক। তার একার আয় দিয়ে আমাদের দুইজনকে চালানো কষ্টকরই ছিল। সন্তানের কথা মাথায় রেখে আমার স্বামী আরেকটা চাকরি নিলেন। আলাদাভাবে কোচিং ও টিউশনি করানো শুরু করলেন। আমাদের একটিমাত্র গাড়ি ছিলো, বাইরে ডিনার করা বাদ দিলাম, বাড়তি কোনো খরচ করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে শুরু করলাম। মোটকথা জীবনে যতটুকু প্রয়োজন, শুধু ততটুকুই, এর বেশি নয়, এভাবে খরচ শিখে গেলাম। বাহ, আমাদের জীবনটা খুব ভালো চলছিল।’ একটা পর্যায়ে নিজেও কিছু একটা করতে উদ্যত হলেন কোহেন। তবে মূল উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই। যাই করি না কেন, বাড়িতে থেকেই করতে হবে। উপার্জনের জন্য শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে বাইরে যাওয়া যাবে না। কোহেন বাড়িতে থেকেই পরিচালনা করা যায়, এমন একটি ব্যবসা চালু করলেন। বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে হচ্ছে আমার অনুপ্রেরণা। আমি খুবই গর্বিত ও কৃতজ্ঞ যে, আমি আমার মেয়ের জীবনের একটি একটি দিনও মিস করিনি।’ পরে আরেকটি কন্যা সন্তানের মা হন কোহেন। এখন তার বয়স ৪৮, থাকেন নিউইয়র্কে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি রাজ্যের অর্থ উপদেষ্টা ওয়েস ব্রাউনের মতে, এখন অনেক দম্পতির জন্যই বাড়িতে থেকে সন্তানের দেখাশোনাটা একটা স্বপ্ন। তারা একান্ত বাধ্য না হলে চাকরির জন্য সন্তানকে বিসর্জন দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটা করতে গেলে দম্পতির যেকোনো একজনকে বাড়তি চাপ সামাল দিতে হবে। কারণ, একেতো দুইজনের আয় থেকে একজনের আয় কমে গেছে, আবার ওই একজনের ব্যয়ও আরো বেড়ে গেছে। পিউ রিচার্স সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি দশজন মায়ের মধ্যে একজন বাড়িতে সন্তানের সাথে থাকেন আর যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা তিন। তবে সন্তানের জন্য বাড়িতে থাকা বাবাদের সংখ্যা এখনো আশানুরুপ নয়। সারা যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানের জন্য বাসায় থাকাদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ পুরুষ। যদিও আস্তে আস্তে এ সংখ্যা সেখানে বাড়ছে। কোহেন বলেন, ‘যদি আপনি সন্তানের জন্য চাকরি ছাড়তে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আপনার এমন একজন সঙ্গী থাকতে হবে, যার আয় দিয়ে আপনারা তিনজন চলতে পারবেন। একই সাথে জীবনে কোনো এক সময় চাকরিতে পুনরায় যোগ দেওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। অপনার যোগ্যতাকে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। প্রতিনিয়ত নিজের যোগ্যতা বাড়ান। কাজের বাইরে থাকা সত্বেও আপনার যোগ্যাতায় কোনো ঘটতি হয়নি, এটা নিশ্চিত রাখুন সবসময়। চাকরি ছাড়ার অন্তত ৬ থেকে ১২ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিন। এই সময়ে কীভাবে অল্প অায়ে জীবন ধারণ করা যায়, তার সাথে মানিয়ে নিন। কীভাবে একজনের আয়ে তিনজন চলবেন, সেটা পরিকল্পনা করুন।’
শুধু ইউরোপ বা আমেরিকা নয়। একই বাস্তবতা আছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। করপোরেট জীবনের লোভ সামলাতে না পেরে অনেক বাবা-মাই সন্তানকে বাসায় কাজের বুয়ার কাছে রেখে বা চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে রেখে কাজে যাচ্ছেন। এ বছর বাংলাদেশের বেরকারী টেলিভিশন আরটিভির এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বাসায় কাজের বুয়ার কাছে সন্তানকে রেখে যাওয়া কতটা অনিরাপদ। এ প্রতিবেদনে একটি ভিডিও ক্লিপিংস দেখানো হয়, যেখানে দেখা যাচ্ছে, বুয়া শিশু সন্তানটিতে জোরে জোরে বিছানায় ও চেয়ারে ফেলছে। শিশুটির উপর নির্যাতনের চিত্র ধরা পড়ে ওই ভিডিওতে।
(Priyo.com)