রাগ করলেই বাপের বাড়ি!

Author Topic: রাগ করলেই বাপের বাড়ি!  (Read 899 times)

Offline khadija kochi

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 96
  • kk
    • View Profile
রাগ করলেই বাপের বাড়ি!
« on: November 24, 2015, 12:34:27 AM »
এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে। মেয়েটির প্রবল অভিমান। ভীষণ কষ্ট! মা-বাবাও বিষয়টি নিয়ে বড় মুশকিলে পড়লেন। তাঁদের বিবেচনায় খুব মন্দ নয় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। জামাই, শ্বশুর-শাশুড়ি তো বেশ ভালোই। যা একটু টানাপোড়েন, অমনটা সব বাড়িতে কমবেশি থাকেই। ওসব মানিয়ে নিতে হয়।
মেয়ের অভিযোগ হলো, শ্বশুরবাড়িতে তিনি মানুষ হিসেবে মর্যাদা পান না। নিজের কর্মস্থলে যে মর্যাদা, আস্থা, সম্মান পান, শ্বশুরবাড়িতে কেন পাবেন না। স্বামীর বাড়ি কি তাঁর নিজের বাড়ি নয়। স্বামীর বাড়ি তাঁর বাড়ি নয়, বাপের বাড়িও তাঁর বাড়ি নয়। একজন নারীর তবে ঠিকানা কোথায়?
‘নিজেরই যদি বাড়ি হতো তাহলে কি এমন ব্যবহার করত! কীভাবে ভাবব যে ওটা আমার বাড়ি? আগে চাকরি করতাম না, সংসারে টাকা দিতে পারতাম না। তাই কোনো বিষয়ে কথাও বলতাম না। এখন তো টাকাও দিই। তবু কেন এই বাড়ি আমার বাড়ি হতে পারল না?’ বলেন মেয়েটি।
প্রশ্নটা অপ্রিয়। প্রশ্নটা ভয়ংকর। একই সঙ্গে প্রশ্নটা সত্য, সরল ও বাস্তব। একজন মনোবিদ হওয়ায় আমার পেশা সমাজ-মানুষ-ঘনিষ্ঠ। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নিষ্ঠুর প্রশ্ন প্রায়ই আমাকে শুনতে হয়। কেউ অশ্রুসজল কণ্ঠে বলেন। কেউ বলেন হতাশায় ক্ষোভে।
২.

কেন মেয়েরা এক কাপড়ে শ্বশুর বা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে আসেন? এমনটি তো কাম্য নয়। একজন চিকিৎসক হিসেবে যে সমস্যাগুলো দেখি, সেগুলো হলো—
পরিবেশ, অনাস্থা, কূটকচালি, গৃহবধূকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা অনিরাপদ করে রাখে তাঁর অস্তিত্বকে। নানা রকম কুসংস্কার, সন্তান না হওয়া, বিলম্বে হওয়া, অতিরিক্ত রক্ষণশীল মনোভাব একজন নারীকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলে।
একজন মেয়ে তাঁর বাপের বাড়ির পরিচিত ও অভ্যস্ত জগৎ ছেড়ে যখন অন্য আরেকটি সংসারে যান, অনেক সময় সেখানে মানিয়ে নিতে পারেন না।
সমস্যা থাকবে। সমস্যা নিয়েই সংসার। সমাধান কী। আমরা গৎ বাঁধা পরামর্শ দিই—মানিয়ে চলুন।
নিজেকে জানতে হবে। স্বতন্ত্র মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনকে অতিরিক্ত চাপে রাখলে বিগড়াবেই। সংসারে আপনার যা অধিকার, সচেতন থাকতে হবে গোড়া থেকেই। অধিকার রক্ষা ও বাস্তবায়নই নারীকে দেবে আত্মরক্ষার শক্তি ও ভিত্তি। আইনগত অধিকার জানতে হবে। সাবধান থাকতে হবে। কথা বলা ও আলোচনার সাহস হারানো চলবে না।
সংসার কেবল স্বামীর নয়। শ্বশুরবাড়িরও নয়। সংসার স্বামী-স্ত্রী দুজনের। দুজনের আত্মার মেলবন্ধন। এই ভাবনা ও অধিকার চর্চা করতে হবে।

৩.
অনেকে বলে থাকেন, নারীর মন বোঝা দায়! নারীর মন পাঠ অগম্য কেন হবে! আসলে নারীর মনের কথা কখনোই শোনাই যে হয়নি। নারীকে তাঁর কথা বলতে যে দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নারীর মনের কথা শোনা হলে তাঁর চেয়ে সরলভাষী, সহজ ব্যাখ্যাকারী আর কেউ নন।
কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করেন আপনার বাসা কোথায়। জবাবে বেশির ভাগ মেয়ে বলেন, আমাদের বাসা অমুক জায়গায়। পুরুষেরা অনেক সময় বলেন, আমার বাসা অমুক খানে। এই ‘আমাদের বনাম আমার’ বলার মধ্যেই রয়েছে যত রহস্য।
একজন কর্মজীবী নারী বলছিলেন, পুরুষের পরিচয়েই সংসার। একজন গৃহকর্তার পরিচয়ে বাড়িভাড়া নেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকও হন বাবা কিংবা স্বামী-শ্বশুর। নারী যখন বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যান, নারীর ন্যায্য অধিকারের যতই মোহনীয় বাণী শোনান না কেন, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে বাপের বাড়ির অধিকার হারান। যে ঘরটিতে বড় হয়েছেন, সে ঘরটিও তাঁর থাকে না। এই নারী যখন প্রবল অভিমানে স্বামীর কাছ থেকে চলে আসেন, তখন ভাবেন, তাঁর ঠিকানা কোথায়?
আরেকটি প্রশ্ন নারীর মুখেও শুনি। পুরুষেরাও তো বলেনই। তা হলো বাড়ি তৈরি, ফ্ল্যাট কেনার টাকা জোগান পুরুষ, সম্পদ তাঁর নামে হবে। কেউ কেউ ভালোবেসে, দায়ে পড়ে, সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারায় বাড়ি লিখে দেন নারীকে। তারপরও নারী কেন ঘর ছাড়ার টানাপোড়েনে ভুগবেন? হোক স্বামী-শ্বশুরের, সে ঘরকে কেন মেয়েরা নিজের ভাবতে পারেন না?
এই প্রশ্নের জবাব পেয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ নারী আইনজীবীর কাছে। তাঁর দুই মেয়ে। ছেলে নেই। স্বামীও আইনজীবী। তাঁর থেকে জানা গেল, তাঁদের অর্জিত সম্পত্তি তাঁর মেয়েরা আইনত একচ্ছত্র ভোগ করতে পারবে না। যদি একটি ছেলে থাকত, সে একাই একচ্ছত্র ভোগ করতে পারত। সম্পদে অধিকারবোধের এই সংকট আছেই। তারপর শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার বংশানুক্রমিক আতঙ্ক একজন নারীর মনোজগৎকে সব সময় তটস্থ ও বিপন্ন করে রাখে। তাঁকে কাবু ও শক্তিহীন করে রাখে। বিয়ে তো ছেলেরাও করেন। কই তাঁদের তো কোনো বাড়ি থেকে বিতাড়নের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় না।
এই মনঃপীড়া, মনোযন্ত্রণা থেকে মুক্তি কোথায়? আইনবিদদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব, মুক্তি অধিকারে। মুক্তি সম্পত্তির অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে। সচেতনতা নারীকে দেবে সব রকম রহস্যময়তা থেকে মুক্তি। যেকোনো অধিকার সংরক্ষণ আপনাকে দেবে মানসিক শক্তি। একই সঙ্গে নিজস্ব অস্তিত্বের ভিত্তি। তখন একজন নারী মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। প্রশান্তিতে থাকবেন।
স্বামীর সংসারকেন্দ্রিক নারীর কর্মতৎপরতাকে কতই প্রশংসার বন্যায় ভাসানো হয়। বিয়ের পর সংসারকে সুন্দর করে সাজাতে-গোছাতে কী পরিশ্রমই না নারী করেন। এই কাজের মূল্যায়ন কেন হবে না? কেন তাঁকে ভুগতে হবে, পরের জায়গা পরের জমিতে অস্থায়ী বাসিন্দার মনঃসংকটে। বুঝলাম, পুরুষ অর্থ জোগান দিচ্ছেন। আমরা কেন এই আয়-সর্বস্ব পরিশ্রমকে একচেটিয়া মূল্যায়ন করব। নারীর সংসার-কর্মকেও অর্থনৈতিক অধিকারের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করতে হবে।

সুলতানা আলগিন: সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
Khadijatul kobra
Lecturer,Natural science department
subject:Mathematics
Uttara campus of DIU
Mail:khadija-ns@daffodilvarsity.edu.bd

Offline baset

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 142
    • View Profile
Re: রাগ করলেই বাপের বাড়ি!
« Reply #1 on: November 24, 2015, 01:55:11 PM »
Thanks for sharing.
M.A.BASET
Assistant Professor,
Department of Textile Engineering