চাকরির ইন্টারভিউতে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন হওয়া উচিৎ ছিল এটি। কিন্তু এই প্রশ্নটিই সবাইকে বিপদে ফেলে দেয়।
প্রশ্নটি কী?
প্রশ্নটি হলো, আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন।
এই প্রশ্নটিকে সবাই এত কঠিন মনে করেন কেন সে ব্যাপারে সম্ভবত অনেক সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যা রয়েছে। আসুন দেখি কীভাবে এই প্রশ্ন মোকাবিলা করতে হবে এবং কীভাবে এর উত্তর দিতে হবে।
প্রশ্নকারী আসলে কী জানতে চাইছে তা আগে বুঝুন
আপনি গাড়ি চালাতে না বাইক চালাতে পছন্দ করেন অথবা আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর নাম কী এগুলি প্রশ্নকারী কখনোই জানতে চান না। আপনি কোন স্কুলে পড়েছেন বা কোথায় কাজ করতেন এগুলিও তিনি জানতে চান না—এই প্রশ্নের উত্তর আপনার বায়োডাটা থেকেই তিনি পাবেন। তিনি জানতে চান আপনি নিজেকে কীভাবে দেখেন। আপনি বেশি সাহসী? অনিরাপত্তায় ভোগেন? নাকি আপনি সবকিছুর ব্যাপারেই আত্মবিশ্বাসী। শুধু মনে রাখবেন প্রশ্নকারী যা জানতে চান তা হলো, আপনার নিজের সামর্থ্যের ব্যাপারে আপনার বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিনা এবং সেটাকে আপনি অহঙ্কার না বানিয়ে আত্মবিশ্বাসে পরিণত করতে পারেন কিনা।
প্রশ্নটির উত্তরকে ৩ ভাগে ভাগ করুন
আপনি এখন কে, কীভাবে আপনি এখনকার আপনি হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে কী হতে চান—প্রশ্নটির উত্তরকে এই ৩ ভাগে ভাগ করুন।
১) আপনি এখন কে?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনি এখন কে। কারণ এই আপনি-কেই চাকরিদাতাদের নিয়োগের জন্য বিবেচনা করতে হবে। প্রথমে নিজের সাথে এই চাকরির সম্পর্ক স্থাপন দিয়ে শুরু করুন। যেমন—আমি একজন আর্কিটেক্ট, আমি একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার অথবা আমি একজন মার্কেটিং ম্যানেজার এই ধরনের পরিচয় আপনার নিয়োগদাতাদের আপনাকে বেছে নেয়ার জন্য সাইকোলজিক্যালি কাজ করবে। পরবর্তীতে যদি সম্ভব হয় তাহলে নিজেকে সেই চাকরির নিয়োগ বর্ণনায় যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন বিবেকবান, বিবেচনাশীল, ক্রিয়েটিভ ইত্যাদি আকর্ষণীয় শব্দ দিয়ে উপস্থাপন করুন। আর তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে চেষ্টা করুন এই চাকরিতে ভবিষ্যতে সফল প্রমাণ করতে পারবেন এমন বিশেষণ ব্যবহার করতে।
২) এখনকার আপনি কীভাবে এই ‘আপনি’ হয়েছেন
ইন্টারভিউতে আপনার রিজুমেতে উল্লেখ করা কথাগুলিই হুবহু বলে যাবেন না। আপনার পড়াশোনা বা আগের চাকরি কীভাবে আপনাকে গঠন করেছে সে সম্পর্কে বলুন। আপনি কী কী করেছেন তা বলবেন না, বরং আপনি বিভিন্ন কাজ বা ঘটনা থেকে কী অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেছেন তা বলুন।
৩) আপনি ভবিষ্যতে কী হতে চান
ভবিষ্যতের কথা বলতে, আপনি আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য সম্পর্কে কথা বলুন। যেমন, ৫ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, এই প্রশ্ন করা হলে উত্তরের ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। আমি ৩ বছর পরে আই টি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চাই এই ধরনের উত্তর দিবেন না। এ ধরনের উত্তর আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন না ঘটিয়ে অহঙ্কারের প্রতিফলন ঘটায়। আপনার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলুন, কিন্তু এমনভাবে বলবেন না যেন আপনার কথায় মনে হয় লক্ষ্য অর্জন খুবই সহজ কাজ।
গুছিয়ে শেষ করুন
শেষে নিজেই একটি প্রশ্ন করুন—এছাড়া আমার সম্পর্কে অন্য কিছু কি জানতে চান? এই প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনি প্রশ্নদাতাকে আরো কিছু অতিরিক্ত প্রশ্ন করার সুযোগ দিবেন, এবং আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বাদ পরে গেলে যেন সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেন সে ব্যাপারে প্রশ্নকারীকে কিছু ইঙ্গিত দিতে বলবেন।
“নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন”—এই প্রশ্নকে বেশি কঠিন প্রশ্ন হিসেবে দেখা উচিৎ না। আপনার নিজের ব্যাপারে অন্য কেউ নিশ্চয়ই আপনার চেয়ে ভালো জানে না। তবে সবাই যেহেতু নিজের সম্পর্কে বলতে পছন্দ করে তাই সাধারণত বেশিরভাগ লোকজনই কী করতে পছন্দ করে, কীভাবে বিনোদন করে, কোথায় কাজ করে, তার বন্ধুবান্ধব কে ইত্যাদি বিষয়ে বলতে থাকে। ফলে এই প্রশ্নটি আসলে অস্বস্তি তৈরি করে থাকে। এখন থেকে আগেই এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাবুন, নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং এই প্রশ্নের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন।