১৪ নভেম্বর ছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। রোগটি নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে নানা দুশ্চিন্তা, শঙ্কা, ভয়। অবশ্য সুষম ও পরিমিত খাবার-দাবার এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে শুধু ডায়াবেটিসই নয়, বিভিন্ন রোগ দূরে সরিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব দীর্ঘদিন। এক্ষেত্রে পরিমিত খাবার-দাবার ও নিয়মিত হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি যোগ ব্যায়াম আপনাকে সহায়তা করবে সুস্থ ও সজীব রাখতে। পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. হারুন, লিখেছেন কেয়া আমান
হ শেষ পৃষ্ঠার পর
পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটি না করা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ফাস্টফুড ও নানা ভেজাল খাবারদাবার গ্রহণের কারণে ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, মেদভুঁড়ি, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত এখন আমরা অনেকেই। সেই সঙ্গে নানা ধরনের মানসিক চাপে জীবনকে সঠিকতালে রাখতে প্রয়োজন যে মানসিক প্রশান্তি তাও ধরে রাখা সম্ভব হয় না এখন আমাদের অনেকের পক্ষে। তাই নিজেকে ফিট ও সুস্থ রাখাটাই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সুস্থ থাকাটা যে খুব কঠিন কিছু তাও কিন্তু নয়। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছা আর খাবারদাবার থেকে শুরু করে ব্যায়াম, বিশ্রাম সবকিছুতেই জীবনকে একটু নিয়ন্ত্রিত আঙ্গিকে সাজিয়ে নেওয়া। অনিয়মকে ভেঙে নিয়ম মোতাবেক পথচলা। আর এ ক্ষেত্রে খাবার নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি আপনার বন্ধু হতে পারে ‘ইয়োগা’। ফিটনেস শব্দটির সঙ্গে এখন বিশ্বজুড়েই একই সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে ইয়োগা অর্থাৎ যোগব্যায়াম।
মো. হারুন বলেন, যোগব্যায়ামের কিছু আসন, প্রাণায়াম ও মুদ্রা রয়েছে; যেগুলো অভ্যাসের ফলে আমাদের শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ সহজ হয়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া যোগ ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে আমাদের রক্তের শর্করাও হ্রাস পায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যোগ ব্যায়াম শরীরের অতিরিক্ত ওজন, মেদভুঁড়ি, কোলেস্টরলসহ নানা রোগ প্রতিরোধ করে দেহকে সুস্থ ও মনকে প্রফুল্ল রাখে।
যোগ ব্যায়াম
যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা হচ্ছে ধ্যান ও শরীর চর্চার একটি প্রাচীন পদ্ধতি। এটা শুধু ব্যায়াম নয়। যোগাসন এমন একটি বিজ্ঞান, যা শরীর ও মন দুটিকেই নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হৃৎপি-ের উপকারিতা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, খাবার-দাবার নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা, সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়াসহ শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মিলবে মানসিক প্রশান্তি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মনকে প্রশান্তি দিতে যোগ ব্যায়ামের ভুজঙ্গাসন ও ভাস্ত্রিকা প্রাণায়ামÑ এ দুটি আসন চর্চা করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক উপকারী কয়েকটি আসন সম্পর্কেÑ
ভুজঙ্গাসন
উপুড় হয়ে শুয়ে দুই পা জোড়া করুন। এবার দুই হাত দুই কাঁধের পাশে রাখুন। এ সময় নাক ও কপাল মাটিতে স্পর্শ করা থাকবে। এবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে বুক থেকে উপরের অংশ ৪৫ ডিগ্রি কোনাকুনি তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এ অবস্থায় ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে নিচে নেমে যান। এবার শবাসনে বিশ্রাম নিন। এভাবে তিনবার করুন।
ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম
প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে পেট যতটুকু সম্ভব সামনের দিকে বা শরীরের বাইরের দিকে বড় করুন। এবার দ্রুত নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পেট যতটুকু সম্ভব শরীরের ভেতরের দিকে নিয়ে আসুন। এভাবে ২০ থেকে ৪০ বার করুন। এটা করার সময় শক্তি দিয়ে পেট সামনে ও ভেতরের নিতে হবে। শবাসনে বিশ্রাম নিন। এভাবে সারা দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার করুন।
মেদ কমাতে ইয়োগা
অতিরিক্ত ওজন ও মেদ কেবল শারীরিক সৌন্দর্যই নষ্ট করে নাÑ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, রক্তে চর্বির আধিক্য এমনকি ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগও বাসা বাঁধে শরীরে। তাই অতিরিক্ত ওজন ও মেদ নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ থাকতে এখন থেকেই করতে পারেন ইয়োগা। এক্ষেত্রে ধনুরাসন মেদ কমাতে একটি কার্যকর ইয়োগা। চলুন জেনে নেওয়া যাকÑ
ধনুরাসন
প্রথমে শবাসনে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়–ন। উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে গোড়ালি দুটি জোড়াভাবে নিতম্বের কাছে আনুন। এবার দুই হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি দুটি শক্ত করে ধরে বুক ও ঊরু মাটি থেকে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তুলুন। এবার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মনে মনে ১০ থেকে ৩০ পর্যন্ত গুনুন। আসনটি তিনবার করুন।
উপকারিতা
ধনুরাসন চর্চা পিঠ ও কোমর ব্যথা কমায়, পেটের বায়ু দ্রুত বের করে দেয়, পেটের চর্বি ও মেদ দ্রুত কমায় এবং ক্ষুধা বাড়ায়। - See more at:
http://www.dainikamadershomoy.com/2015/11/18/58692.php#sthash.ZWRyq78r.dpuf